ঢাকা, রবিবার, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ২২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

নির্বাচন ও ইসি

খুলনা-৩ আসনে লড়াই হবে নবীন-প্রবীণে

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৩৪৯ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৪, ২০১৮
খুলনা-৩ আসনে লড়াই হবে নবীন-প্রবীণে বেগম মন্নুজান সুফিয়ান ও রকিবুল ইসলাম বকুল

খুলনা: মহানগরের খালিশপুর, দৌলতপুর ও খানজাহান আলী থানা নিয়ে গঠিত খুলনা-৩ আসন। শিল্পাঞ্চলখ্যাত এ আসনে এবার ভোটযুদ্ধে লড়াই হবে নবীন আর প্রবীণের মধ্যে। এমনটিই হরহামেশাই শোনা যাচ্ছে নির্বাচনী এলাকার কলকারখানার শ্রমিকদের মুখে।

খুলনা-৩ আসনে আওয়ামী লীগের বেগম মন্নুজান সুফিয়ান (নৌকা) ও বিএনপির রকিবুল ইসলাম বকুলের (ধানের শীষ) মধ্যে চূড়ান্ত লড়াই হবে।

এ দু’জন প্রার্থী ছাড়াও আসনটিতে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের অধ্যক্ষ মাওলানা মোজাম্মিল হক (হাতপাখা), জাকের পার্টির এস এম সাব্বির হোসেন (গোলাপ ফুল) ও বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দলের জনাদন দত্ত (মই) প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে লড়াই করছেন।

লড়াইয়ের মাঠজুড়ে দিবারাত্রি প্রার্থী ও তার কর্মীরা ব্যস্ত সময় পার করছেন মিল, কলকারখানা, দোকানপাট আর ভোটারদের বাড়ি বাড়ি।

খুলনা-৩ আসনটি শ্রমিক অধ্যুষিত এলাকা হিসেবে পরিচিত। তবে এখন শ্রমজীবী মানুষ ছাড়াও বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার অসংখ্য মানুষ এ এলাকার বাসিন্দা।

এ আসনে সাবেক প্রতিমন্ত্রী ও সংসদ সদস্য মন্নুজানের সঙ্গে লড়ছেন তরুণ ও নবীন সাবেক ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় নেতা বকুল। পুরোদমে জমে উঠেছে এ আসনের ভোটের আবহ। নির্বাচনের দিনক্ষণ যতোই এগিয়ে আসছে, প্রার্থীদের ব্যস্ততা ততোই বাড়ছে। নির্ঘুম গণসংযোগ করছেন এ দুই প্রার্থী। এক প্রার্থী অন্য প্রার্থীর বিরুদ্ধে করছেন অভিযোগ পাল্টা অভিযোগ। করছেন সংবাদ সম্মেলনও।

এক পর্যবেক্ষণে দেখা গেছে, খুলনার শিল্পাঞ্চলখ্যাত এ আসনটি এ পর্যন্ত কোনো রাজনৈতিক দল এককভাবে ধরে রাখতে পারেনি। স্বাধীনতা পরবর্তী ১৯৭৩ সালের প্রথম নির্বাচনে এ আসন থেকে আওয়ামী লীগের মমিন উদ্দিন সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। ১৯৭৯ সালের নির্বাচনে বিজয়ী হন বিএনপির সাবেক যুগ্ম মহাসচিব আশরাফ হোসেন। ১৯৮৬ সালে জাতীয় পার্টির হাসিনা বানু শিরিন নির্বাচিত হন। ১৯৯১ ও ২০০১ সালের নির্বাচনে এ আসনে বিএনপি থেকে বিজয়ী হন তৎকালীণ যুগ্ম মহাসচিব মো. আশরাফ হোসেন। ১৯৯৬ সালে এ আসন থেকে বিজয়ী হন বিএনপি থেকে আওয়ামী লীগে যোগ দেওয়া কাজী সেকেন্দার আলী ডালিম। অবশ্য পরে তিনি আবার বিএনপিতে ফিরে যান। ২০০৮ সালে আওয়ামী লীগের প্রার্থী বেগম মন্নুজান সুফিয়ান বিজয়ী হয়ে শ্রম ও কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী নিযুক্ত হন। ২০১৪ সালের নির্বাচনে তিনি আবার বিজয়ী হন।

খুলনা জেলা নির্বাচন অফিসের তথ্যানুযায়ী, খুলনা-৩ আসনে ভোটার সংখ্যা ২ লাখ ২৬ হাজার ৭০৫। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ১ লাখ ৪৬ হাজার ৭১২ এবং নারী ভোটার ১ লাখ ৪৭ হাজার ৩৮৫।

নির্বাচন বিশ্লেষকদের মতে, আসনটিতে নবীন ও প্রবীণ এ দু’জনই হেভিওয়েট প্রার্থী।

বর্তমান সংসদ সদস্য সাবেক শ্রম ও কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী বেগম মন্নুজান সুফিয়ান একজন শ্রমিক নেত্রী। তার স্বামী শহীদ অধ্যাপক আবু সুফিয়ান শ্রমিকদের অধিকার আদায়ে আমৃত্যু লড়েছেন। ১৯৭৪ সালের ২৮ ডিসেম্বর রাতে সন্ত্রাসীদের গুলিতে নিহত হন।

এর আগে দু’বার সংসদ সদস্য, একবার সংরক্ষিত মহিলা সংসদ সদস্য, ২০০৮ থেকে ২০১৩ সাল পর্যন্ত মন্নুজান শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেছেন। ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি ১০ম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আবারও জয়ী হন তিনি। বর্তমানে তিনি শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সংসদীয় কমিটির সভাপতির দায়িত্ব পালন করছেন।

অপরদিকে, ছাত্রদলের সাবেক কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি রকিবুল ইসলাম বকুল। তিনি বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের কাছের মানুষ হিসেবে পরিচিত। যে কারণে বকুল এলাকায় একটি অবস্থানও তৈরি করেছেন। ভোটের মাঠেও দলীয় নেতাকর্মীরা তার পক্ষে ঝাপিয়ে পড়েছেন।

মন্নুজান সুফিয়ান বলেন, ২০০১ সালে বিএনপি-জামায়াত জোট ক্ষমতায় এসে শিল্পাঞ্চলের অনেক কলকারখানা বন্ধ করে দেয়। হাজার হাজার শ্রমিক কর্মসংস্থান হারায়। এরপর ২০০৮ সালে ক্ষমতায় এসে মহাজোট সরকার বন্ধ পাটকল চালু করে। বন্ধ প্রায় অন্যান্য পাটকল আর্থিক সহায়তা দিয়ে সচল করে তোলে।

তিনি আরও বলেন, বন্ধ পাটকল চালু ছাড়াও এ সরকারের আমলে শ্রমিকদের মজুরি কমিশনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। শ্রমিকরা তাদের সুখে-দুঃখে সবসময় আমাকে কাছে পায়। যে কারণে এবারও তারা আমাকে নির্বাচিত করবেন।

রকিবুল ইসলাম বকুল বলেন, বর্তমান সরকারের জনপ্রিয়তা এখন শূন্যের কোঠায়। তাই পরাজয়ের ভয়ে ভীত হয়ে তারা বিএনপি নেতাকর্মীদের উপর নানাভাবে হামলা করছে। দেশের গণতন্ত্র ও বাকস্বাধীনতা রক্ষার জন্য এবং কারাবন্দি বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে মুক্ত করার জন্য ৩০ ডিসেম্বর ধানের শীষের বিজয় হবে।

তিনি অভিযোগ করেন, এ পর্যন্ত ওয়ারেন্ট ছাড়াই ওয়ার্ড বিএনপির সভাপতি, কেন্দ্র কমিটির সচিবসহ অনেক নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। প্রতিনিয়ত কর্মীদের মারধর করে আহত করা হচ্ছে। বিষয়গুলো রিটার্নিং কর্মকর্তাকে জানিয়েও কোনো ফল পাচ্ছি না।

বাংলাদেশ সময়: ০৮৪৭ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৩, ২০১৮
এমআরএম/আরবি/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।