ঢাকা, মঙ্গলবার, ৯ পৌষ ১৪৩১, ২৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ২১ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

নির্বাচন ও ইসি

মসিক নির্বাচন: জনপ্রতিনিধির দৌড়ে ২৯ জন গৃহিণী

এম আব্দুল্লাহ আল মামুন খান, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৩২৩ ঘণ্টা, এপ্রিল ২৯, ২০১৯
মসিক নির্বাচন: জনপ্রতিনিধির দৌড়ে ২৯ জন গৃহিণী মসিক নির্বাচন: জনপ্রতিনিধির দৌড়ে ২৯ জন গৃহিণী

বহুল প্রতীক্ষিত ময়মনসিংহ সিটি করপোরেশন নির্বাচনের কাউন্ট ডাউন শুরু হয়ে গেছে। মেয়র পদে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী ইকরামুল হক টিটু বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন। সাধারণ ৩৩টি ওয়ার্ড ও সংরক্ষিত ১১টি নারী ওয়ার্ডে ভোটযুদ্ধ হবে আগামী ৫ মে। ভোট হবে ইভিএম পদ্ধতিতে।

মেয়র পদে না হলেও মহানগর মেতেছে কাউন্সিলর নির্বাচনে। ঘনিয়ে আসা ভোট উৎসব, ছড়াচ্ছে উত্তাপ।

এসব নিয়ে ৫ পর্বের ধারাবাহিক প্রতিবেদন লিখেছেন আমাদের সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট এম. আব্দুল্লাহ আল মামুন খান। আজ পড়ুন ধারাবাহিক প্রতিবেদনের তৃতীয় কিস্তি।

সংরক্ষিত ৮ নম্বর ওয়ার্ড থেকে নারী কাউন্সিলর পদে প্রার্থী হয়েছেন রাশেদা খাতুন (চশমা)। নিজের শিক্ষাগত যোগ্যতার ঘরে লিখেছেন, অক্ষরজ্ঞানসম্পন্ন। পেশা উল্লেখ করেছেন, স্বাস্থ্যকর্মী।  

ওয়ার্ডটিতে একই পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন মোট ৫ প্রার্থী। এর মধ্যে স্কুলে পড়াশুনা করলেও মাধ্যমিকের গণ্ডি পেরোননি এমন প্রার্থী আছেন আরো ২ জন। কেবল হাজেরা খাতুনের (আনারস) শিক্ষাগত যোগ্যতা এম.এ।

সংরক্ষিত ৩ নম্বর ওয়ার্ড ও ১১ নম্বর ওয়ার্ডে রয়েছেন সর্বোচ্চ ৬ জন ‘স্বশিক্ষিত’ প্রার্থী। এই দুই ওয়ার্ডে নারী কাউন্সিলর পদে ১৮ প্রার্থীর মধ্যে মাত্র দুই জন উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছেন। বাদবাকি ১০ জন অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশুনা করেছেন। ন্যূনতম স্কুল পাসও করতে পারেননি তাঁরা।  

এসব প্রার্থীদের বেশিরভাগই গৃহিণী। ঘর-দুয়ার সামলে এবার তারা নিজেদের নিয়োজিত করতে চান নিজ নিজ ওয়ার্ডের বাসিন্দাদের সেবায়। তাদের অনেকের বছরে কোনো আয় নেই। নেই স্থাবর সম্পদও।  

নির্বাচন কমিশনে প্রার্থীদের জমা দেওয়া হলফনামা থেকে মিলেছে এসব তথ্য।

নারী সমাজের উন্নয়নের পাশাপাশি স্থানীয় সরকার ব্যবস্থা উন্নত ও শক্তিশালী করতে প্রথম সিটি করপোরেশনের প্রথম ভোটে শিক্ষিত নারীর কোনো বিকল্প নেই বলেই মনে করছেন ময়মনসিংহবাসী। শিক্ষার দৌড়ে নিজেরা অনেক পিছিয়ে থেকেও কিভাবে তারা সাধারণ মানুষের কাঙ্ক্ষিত সেবা নিশ্চিত করবেন এসব নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে।

প্রথম ভোটে বিষয়টি হার-জিত নির্ধারণে প্রভাবকের ভূমিকা পালন করবে বলে মনে করছেন সচেতন ভোটাররা। অবশ্য প্রার্থীদের কেউ কেউ বলছেন, আচরণ, ভালো মানসিকতা এবং অভিজ্ঞতাই এবারের ভোটে নিয়ামক হবে।

আগামী ৫ মে ময়মনসিংহ সিটি করপোরেশনের প্রথম ভোট অনুষ্ঠিত হবে। আগের ২১টি ওয়ার্ডের পাশাপাশি নতুন ১২টি ওয়ার্ড মিলিয়ে মোট ৩৩টি ওয়ার্ডে এ নির্বাচনের মোট ভোটার ২ লাখ ৯৬ হাজার ৩৮ জন।

১২৭টি ভোটকেন্দ্রের সবগুলোতে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) ব্যবহার করে ভোটগ্রহণ হবে।

নির্বাচনে ৩৩টি ওয়ার্ডে সাধারণ কাউন্সিলর পদে ২৪২ জন ও ১১টি সংরক্ষিত ওয়ার্ড কাউন্সিলর পদে ৭০ জন প্রার্থী ভোটের লড়াইয়ে নেমেছেন।  

নির্বাচন কমিশনে জমা দেওয়া হলফনামা থেকে জানা গেছে, সংরক্ষিত ১১টি ওয়ার্ডে নারী কাউন্সিলর পদে নির্বাচনে ৭০ জন প্রার্থীর মধ্যে স্বশিক্ষিত প্রার্থী রয়েছেন ১৪ জন।

স্নাতক সম্পন্ন করেছেন ৮ জন, স্বাক্ষর ও অজ্ঞারজ্ঞানসম্পন্ন প্রার্থী ৪ জন। মাধ্যমিক পাস করতে পারেননি এমন প্রার্থী রয়েছেন ২৭ জন।

৩ জন এইচএসসি ও ১১ জন এসএসসি পাস করেছেন। তবে স্বশিক্ষিত ও অজ্ঞারজ্ঞান সম্পন্ন প্রার্থীদের নিয়ে জনমনে কৌতূহলের মাত্রা বেড়েছে। স্বশিক্ষিত এবং অজ্ঞারজ্ঞান সম্পন্ন বলতে কী বোঝায়, এ নিয়েও নানা মত রয়েছে সাধারণ ভোটারদের মাঝে।

প্রথম সিটিতে ভোটের জন্য অক্ষরজ্ঞান সম্পন্ন ও স্বশিক্ষিত প্রার্থীরা যোগ্য কিনা এমন প্রশ্নে সচেতন নাগরিক কমিটি (সনাক) ময়মনসিংহ জেলা শাখার সভাপতি শরীফুজ্জামান পরাগ বাংলানিউজকে বলেন, এলাকার উন্নয়নে কার্যকর ভূমিকা রাখতে একজন জনপ্রতিনিধির অবশ্যই শিক্ষাগত যোগ্যতা থাকা উচিত। তবে প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা না থাকলেই তিনি অযোগ্য এমনটিও বলা যাবে না।

প্রায় ৯ বছর আগে ময়মনসিংহ পৌরসভা নির্বাচনে সংরক্ষিত মহিলা ২ নম্বর ওয়ার্ড থেকে কাউন্সিলর পদে বিজয়ী হয়েছিলেন খোদেজা আক্তার। বিদায়ী পৌরসভার স্বশিক্ষিত এ কাউন্সিলর ভোটের লড়াইয়ে নিজেকেই যোগ্য মনে করছেন।  

বাংলানিউজকে তিনি বলেন, স্থানীয় সরকারে জনপ্রতিনিধি হতে শিক্ষাগত যোগ্যতা অত্যাবশ্যকীয় নয়। তবে আমার জনসেবার অভিজ্ঞতার পাল্লা ভারী। এলাকার উন্নয়নে আমার আন্তরিকতা, অভিজ্ঞতা এবং সার্বক্ষণিক ওয়ার্ডের বাসিন্দাদের পাশে থাকার মানসিকতার কারণেই ভোটাররা আমাকে ভোট দেবেন। আমিই বিজয়ের হাসি হাসবো।

এখানকার স্থানীয় ওয়ার্ডের বাসিন্দারা বলছেন, পরিবারসহ নানা বাধার কারণেই শিক্ষিত নারীরা স্থানীয় সরকার নির্বাচনে প্রার্থী হতে চান না। ফলে কম শিক্ষিতরাই নির্বাচনে প্রতিযোগিতা করে বিজয়মাল্য পড়ে।

তবে কম শিক্ষিত প্রার্থীরাও জনপ্রিয় হন এবং ভোটারদের কাছে তাদের গ্রহণযোগ্যতা রয়েছে বলে মনে করেন স্থানীয় এক মোটরবাইক ব্যবসায়ী।

হলফনামা থেকে আরো জানা গেছে, এ নির্বাচনে রেকর্ড ২৯ জন গৃহিণী ভোটের মাঠে আদাজল খেয়ে নেমে পড়েছেন। এছাড়া ২৪ জন ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী, ৪ জন শিক্ষক, দুই জন সমাজকর্মী ও একজন আইনজীবী রয়েছেন।

কৃষি বা অকৃষি জমি, বাড়ি, দালান অর্থাৎ স্থাবর সম্পদ নেই এমন প্রার্থীর সংখ্যা ৩৮ জন।

মসিক নির্বাচনে সংরক্ষিত ১১ নম্বর ওয়ার্ডে সর্বোচ্চ ১২ জন প্রার্থী ভোটের উত্তাপ ছড়াচ্ছেন। এর মধ্যে সর্বোচ্চ ডিগ্রিধারী (এইচএসসি পাস) শাহীনুর আক্তার মিলি বাংলানিউজকে বলেন, আগের চেয়ে বেশি শিক্ষিত নারীরা স্থানীয় সরকার নির্বাচনে ভোট করছে। ভোটাররাও এখন অনেক সচেতন। শিক্ষাগত যোগ্যতার পাশাপাশি পারিবারিক ঐতিহ্যের কারণেই ভোটাররা আমাকে মূল্যায়ন করবে বলে আমি আশাবাদী।

** মসিক নির্বাচন: কাউন্সিলর পদে তীব্র লড়াই​
** মসিক নির্বাচন: নতুন মহানগরে ভোটের উচ্ছ্বাস

বাংলাদেশ সময়: ০৯২৩ ঘণ্টা, এপ্রিল ২৯, ২০১৯ 
এমএএএম/এমজেএফ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।