ঢাকা, শুক্রবার, ১২ পৌষ ১৪৩১, ২৭ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৪ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

নির্বাচন ও ইসি

এবার ইভিএম সংরক্ষণের জন্য আলাদা প্রকল্প নিচ্ছে ইসি

ইকরাম-উদ দৌলা, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১১৫৪ ঘণ্টা, আগস্ট ১৩, ২০১৯
এবার ইভিএম সংরক্ষণের জন্য আলাদা প্রকল্প নিচ্ছে ইসি

ঢাকা: ভোট ব্যবস্থাপনায় প্রযুক্তির সর্বোচ্চ প্রয়োগের উদ্দেশ্যে আগামীতে সব নির্বাচনেই ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) ব্যবহারের সিদ্ধান্ত নিয়েছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। এজন্য সাড়ে চার হাজার কোটি টাকার একটি প্রকল্প নিয়ে কেনা হচ্ছে দেড় লাখ মেশিন। যেখানে এই ভোটযন্ত্রগুলো সংরক্ষণের যথাযথ কোনো ব্যবস্থাই রাখা হয়নি। তাই এবার ইভিএম সংরক্ষণের জন্য আরেকটি নতুন প্রকল্প হাতে নিচ্ছে সংস্থাটি।

ইসি সূত্র জানিয়েছে, চার হাজার কোটি টাকার ইভিএম প্রকল্পে প্রতিটি মেশিনের পেছনে ব্যয় হচ্ছে ২ লাখ ১০ হাজার টাকা। কিন্তু এতো দামি মেশিন কোথায় রাখা হবে, সেজন্য প্রকল্পে কোনো বরাদ্দ রাখা হয়নি।

ফলে যথাযথ যত্ন ছাড়াই এগুলো স্থান পাচ্ছে মাঠ কর্মকর্তাদের কার্যালয়ে। ইভিএমগুলো তৈরি করে দিচ্ছে বাংলাদেশ মেশিন টুলস ফ্যাক্টরি।
 
কর্মকর্তারা বলছেন, যেকোনো ইলেকট্রনিক ডিভাইস একটি নির্দিষ্ট তাপমাত্রা, আদ্রর্ত‍ায় সংরক্ষণ করতে হয়। সেখানে ইভিএম একটি গুরুত্বপূর্ণ ডিভাইস। আর একটি ভোটিং মেশিনের দামও অনেক। সেখানে এগুলো সংরক্ষণের পর্যাপ্ত ব্যবস্থা না করেই ক্রয় করা হচ্ছে।
 
সম্প্রতি অনুষ্ঠিত বিভিন্ন নির্বাচনে এই মেশিন ব্যবহারের পর তা কোথায় রাখা হবে, এ নিয়ে বিপাকে পড়ে নির্বাচন কমিশন। তাই নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) শাহাদাত হোসেন চৌধুরীর নেতৃত্বে এ সংক্রান্ত কমিটি ইভিএম সংরক্ষণের জন্য নতুন আরেকটি প্রকল্প নেওয়ার সুপারিশ করেছে।
 
সুপারিশ অনুযায়ী, বর্তমানে উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তার কার্যালয় তথা সার্ভার স্টেশনগুলো উলম্বভাবে বাড়ানোর জন্য নীতিগত সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এতে সার্ভার স্টেশনের ওপরের তলায় ইভিএম রাখা হবে। তবে প্রকল্প প্রস্তাবনা এখনো তৈরি করা হয়নি।
 
২০১৮ সালেই একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে ৮০ হাজার ইভিএম প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে বুঝে নিতে চেয়েছিল ইসি। কিন্তু সময় স্বল্পতার কারণে সে সময় ওই সংখ্যক ইভিএম তৈরি করা সম্ভব হয়নি। ৩০ ডিসেম্বরের সংসদ নির্বাচনে ৬টি আসনে ৫ হাজারের মতো ইভিএম দিয়ে ভোট নেওয়া হয়েছিল।
 
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে সিটি করপোরেশন নির্বাচনেও এই মেশিন ব্যবহার করা হয়েছে। আবার উপজেলা, ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনেও ব্যবহার হয়েছে এই ভোটযন্ত্র।
 
এ বিষয়ে ইসির তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি শাখার দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা নাম প্রকাশ না শর্তে বলেছেন, ইভিএম প্রকল্প নেওয়ার সময় সংরক্ষণের বিষয়টি ভাবা হয়নি। কিন্তু দেড় লাখ ইভিএম কোথায় রাখা হবে, এই প্রশ্নটি এখন সামনে চলে এসেছে। তবে দীর্ঘদিন সংরক্ষণ করা যায়, এমন একটি কার্যকর উপায় খোঁজা হচ্ছে।
 
সিদ্ধান্ত হয়েছে সার্ভার স্টেশনগুলো উপরের দিকে বাড়িয়ে সেখানেই ইভিএম রাখার। আর নতুন প্রকল্প নেওয়ার আগে প্রতি ‍উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তার কার্যালয়ে ১৫০টি করে, জেলা নির্বাচন অফিসে এক হাজার করে এবং আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তার কার্যালয়ে ৫’শ করে মোট এক লাখ ৩৬ হাজার ২’শ ইভিএম সংরক্ষণ করা হবে।
 
২০১০ সালে এটিএম শামসুল ‍হুদার নেতৃত্বাধীন তৎকালীন কমিশন দেশে ভোট ব্যবস্থাপনায় প্রযুক্তির ব্যবহার বাড়াতে ইভিএমের সূচনা করে। সে সময় বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের কাজ থেকে এই ভোটযন্ত্র তৈরি করে নেওয়া হয়েছিল।
 
কয়েক বছর ভালো ফল পাওয়া গেলেও ২০১৫ সালের রাজশাহী সিটি করপোরেশন নির্বাচনের সময় একটি মেশিনে যান্ত্রিক ত্রুটি ধরা পড়ে। সেই মেশিনটি আর সারাতে পারেনি নির্বাচন কমিশন। এমনকি ত্রুটি হওয়ার কারণও উদ্ধার করতে পারেনি।
 
কাজী রকিবউদ্দীন আহমদের নেতৃত্বাধীন কমিশন ২০১৬ সালে এমন পরিস্থিতে বুয়েটের তৈরি মেশিনগুলো পরিত্যাক্ত ঘোষণা করে নষ্ট করে ফেলে। একইসঙ্গে নতুন এবং উন্নতমানে ইভিএম তৈরির নীতিগত সিদ্ধান্ত নেয়।
 
ওই সিদ্ধান্তের ধারাবাহিকতায় বর্তমান কেএম নূরুল হুদা কমিশন প্রায় ২০ গুণ বেশি দামে বাংলাদেশ মেশিন টুলস ফ্যাক্টরির কাছ থেকে উন্নতমানের ইভিএম তৈরি করে নিচ্ছে।
 
প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কেএম নূরুল হুদা এ বিষয়ে বলেছেন, এই ইভিএম আগেরগুলোর চেয়ে উন্নতমানের। কোনোভাবেই হ্যাক করা সম্ভব নয়। এছাড়া এগুলো ব্যবহারের ফলে দ্রুততার সঙ্গে ফল প্রকাশ করা যাবে। একইসঙ্গে ভোটের আগের রাতে সিল মারাও বন্ধ হবে।
 
নতুন ইভিএম দিয়ে ২০১৭ সালের ডিসেম্বরে রংপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে প্রথম ভোট নিয়ে সফল হয় নির্বাচন কমিশন। এরপর অন্যান্য স্থানীয় নির্বাচন এবং একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ব্যবহারের পর ভবিষ্যতে সকল নির্বাচনেই এই ভোটযন্ত্র ব্যবহারের সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
 
বাংলাদেশ সময়: ০৭৫৪ ঘণ্টা, আগস্ট ১৩, ২০১৯
ইইউডি/জেডএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।