ঢাকা, শুক্রবার, ১২ পৌষ ১৪৩১, ২৭ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৪ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

নির্বাচন ও ইসি

এনআইডি: সুপারিশের অগ্রাধিকার দিতে বিশেষ ব্যবস্থা

ইকরাম-উদ দৌলা, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১২৩৯ ঘণ্টা, আগস্ট ২৪, ২০১৯
এনআইডি: সুপারিশের অগ্রাধিকার দিতে বিশেষ ব্যবস্থা

ঢাকা: জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) সংক্রান্ত সেবায় ভোগান্তির কোনো শেষ নেই। ভুল সংশোধন কিংবা ঠিকানা পরিবর্তনের সেবা পেতে এখনও গলদঘর্ম হতে হয় সেবাগ্রহিতার।

সাধারণ নাগরিকদের সেবা যখন নির্বিঘ্ন হয়নি, তখন এক শ্রেণির নাগরিকদের 'বিশেষ সুবিধা' দিতেই বরং তৎপর নির্বাচন কমিশন (ইসি)। আর এই সুবিধা তারাই পাবেন, যাদের থাকবে ভিআইপি (ভেরি ইমপর্টেন্ট পারসন), নির্বাচন কমিশনার ও ইসি কর্মকর্তাদের 'সুপারিশ'।

সম্প্রতি হাইকোর্ট বলেছে প্রধানমন্ত্রী, রাষ্ট্রপতি ছাড়া কেউ ভিআইপি নন। আদালত থেকে যখন এমন নির্দেশনা এসেছে, সেটাও মানছে না ইসি।

নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) শাহাদাত হোসেন চৌধুরীর নেতৃত্বাধীন জাতীয় পরিচয়পত্র, ভোটার তালিকা ও নির্বাচন ব্যবস্থাপনায় তথ্যপ্রযুক্তির প্রয়োগ সংক্রান্ত কমিটি সম্প্রতি এক বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

গত ২৯ জুলাই অনুষ্ঠেয় ওই বৈঠকের সিদ্ধান্ত নির্দেশনা আকারে ইতোমধ্যে জাতীয় পরিচয়পত্র নিবন্ধন অনুবিভাগের মহাপরিচালকসহ সংশ্লিষ্ট সবাইকে দেওয়া হয়েছে। এছাড়া অনুলিপি দেওয়া হয়েছে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কেএম নূরুল হুদাসহ অন্য কমিশনারদের।

কমিশনার শাহাদাত হোসেন চৌধুরী স্বাক্ষরিত বৈঠকের কার্যপত্রে বলা হয়েছে- ভিআইপি, নির্বাচন কমিশনার ও নির্বাচন কর্মকর্তাদের সুপারিশ করা আবেদনগুলো নিষ্পত্তির জন্য নির্বাচন ভবনের নিচতলায় একটি কক্ষ বরাদ্দের ব্যবস্থা করতে হবে।

ইসি কর্মকর্তারা বলছেন, সাধারণ নাগরিকদের সেবা তরান্বিত না করে এ ধরনের সুপারিশকে অগ্রাধিকার দেওয়ার ব্যবস্থা অনৈতিক। এতে অন্যদের প্রতি অবিচার করা হয়। সমস্যা ধরন, জরুরি বিবেচনায় সুপারিশ হতে পারে, সেটা আমলে নেওয়াটাই উচিত। কিন্তু এভাবে ঘোষণা দিয়ে আলাদা কর্মকর্তা নিয়োজিত করে কক্ষ বরাদ্দ দেওয়ার যে আয়োজন, সেটা অশোভন উদ্যোগ।

সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, এই ব্যবস্থার মাধ্যমে সুপারিশের হারও বেড়ে যাবে। এটাও তখন বাড়তি চাপের সৃষ্টি করবে। এছাড়া অন্যদের সমস্যা প্রায় শতভাগ সমাধানের কাছে পৌঁছানোর আগে এ উদ্যোগ হবে ডাবল স্ট্যান্ডার্ডের শামিল।

ওই কার্যপত্রে অন্য আরেকটি সিদ্ধান্তের কথা উল্লেখ করা হয়েছে। বলা হয়েছে, এনআইডি হারিয়ে গেলে বা নষ্ট হয়ে গেলে পুনরায় এনআইডি সংগ্রহের আবেদন নিষ্পত্তি হতে হবে উপজেলা থেকেই। এক্ষেত্রে সেবাগ্রহিতা উপজেলা নির্বাচন কার্যালয়ে আবেদন করবে। সেটা আঞ্চলিক বা জেলা নির্বাচন কর্মকর্তার কার্যালয় থেকে নিষ্পত্তি হয়ে সেখানে প্রিন্ট হবে। এরপর তা উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তারা কার্যালয় থেকেই আবেদনকারীকে সরবরাহ করতে হবে। এটা অবশ্যই নিশ্চিত করতে হবে ১৫ দিনের মধ্যে।

কর্মকর্তারা বলছেন, এই নির্দেশনা বাস্তবায়ন হলে সাধারণ সেবাগ্রহিতার কষ্ট থাকবে না। কেননা, এ সেবার জন্য ঢাকার দিকে তাকিয়ে থাকার প্রয়োজন পড়বে না। ইতোমধ্যে এ নির্দেশনাটির বাস্তবায়ন চলমান।

এটিএম শামসুল হুদার নেতৃত্বাধীন কমিশন ২০০৮ সালের নির্বাচনের আগে ছবিযুক্ত ভোটার তালিকা প্রণয়ন করেন। পরবর্তীতে সে তালিকার ভিত্তিতেই সে সময়কার নয় কোটি ভোটারকে লেমিনেটিং করা কাগজে এনআইডি সরবরাহ করা হয়।

শামসুল হুদা কমিশন ২০১১ সালে নাগরিকদের স্মার্টকার্ড দেওয়ার জন্য বিশ্বব্যাংকের সহযোগিতায় একটি প্রকল্প হাতে নেয়। আইডিইএ নামে সে প্রকল্পের অধীনেই বর্তমানে স্মার্টকার্ড দেওয়া হচ্ছে।

এবছরই প্রকল্পটি শেষ হওয়ার কথা রয়েছে। এরপর সরকারি তহবিল থেকে নতুন প্রকল্প নিয়ে সব নাগরিকের স্মার্টকার্ড সরবরাহের কার্যক্রম ধারাবাহিক রাখবে ইসি।

বাংলাদেশ সময়: ০৮৩৫  ঘণ্টা, আগস্ট ২৪, ২০১৯
ইইউডি/এএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।