ঢাকা, শনিবার, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

নির্বাচন ও ইসি

ইভিএমের জানাজা নয়, জন্মোৎসব করার পরামর্শ

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০০৪১ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২৩, ২০২০
ইভিএমের জানাজা নয়, জন্মোৎসব করার পরামর্শ

ঢাকা: নির্বাচনে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) ব্যবহারের পক্ষে অবস্থান নিয়ে জ্যেষ্ঠ নির্বাচন কমিশনার মাহবুব তালুকদার বিরোধিতাকারীদের উদ্দেশ্যে বলেছেন, ইভিএমের জানাজা না পড়ে জন্মউৎসব করা উচিত। একই সঙ্গে ইভিএমে ৫০ শতাংশ ভোট না পড়লে ব্যালট পেপারে পুনরায় ভোটগ্রহণের জন্য নির্বাচন কমিশনকে সুপারিশ করেছেন তিনি।

ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরশন নির্বাচন উপলক্ষে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে বৈঠকে বুধবার (২২ জানুয়ারি) লিখিত বক্তব্যে একথা বলেন তিনি।

ইতোমধ্যে ইভিএমকে নীরব কারচুপির প্রজেক্ট উল্লেখ করে বিএনপিসহ বেশকিছু রাজনৈতিক দল যন্ত্রটির ব্যবহার বাতিলের দাবি জানিয়েছে।

মাহবুব তালুকদার লিখিত বক্তব্যে বলেন, চট্টগ্রাম-৮ আসনের সাম্প্রতিক উপ-নির্বাচনে সবগুলো কেন্দ্রে ইভিএম ব্যবহার করা হয়। এতে ভোট পড়েছে ২২ দশমিক ৯৪ শতাংশ। একাদশ জাতীয় নির্বাচনে ইভিএমবিহীন ব্যালট পেপারে যে ২৯৪টি আসনে ভোট হয়েছে, ভোটের হার যেখানে ছিল ৮০ শতাংশ, সেখানে ইভিএম ব্যবহারে ২৯ দশমিক ৩৮ শতাংশ কম ভোট পড়েছে। এর কারণ ভোটারদের মনে আছে ইভিএমভীতি।  

অন্যদিকে ইভিএমে জালভোট দেওয়া প্রতিহত করা এক বিরাট সমস্যা। বুথ দখল করে বা গোপন কক্ষে গিয়ে জাল ভোট দেওয়ার ঘটনা অবশ্যই প্রতিহত করতে হবে। আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও অন্য নির্বাচন কর্মকর্তাদের সম্মিলিতভাবে গোপনকক্ষের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা আবশ্যক।  

‘বর্তমান সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহার কমিশনের জন্য এক অগ্নিপরীক্ষা। নির্বাচনে ভোটারদের উপস্থিতি বৃদ্ধিও একান্ত অপরিহার্য। এজন্য রাজনৈতিক দলগুলোর সহযোগিতা একান্তভাবে কাম্য। ঢাকা সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহারের সাফল্যের ওপর নির্ভর করছে এই যন্ত্রটির ভবিষ্যৎ। এই নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহার প্রশ্নবিদ্ধ হলে শুধু নির্বাচন নয়, ইভিএম যন্ত্রটির ভবিষ্যৎও অনিশ্চিত হয়ে যেতে পারে। ’

‘আমার মতে যে কোনো নির্বাচনে ৫০ শতাংশ ভোট না পড়লে নির্বাচনের গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন ওঠা স্বাভাবিক। এজন্য বিশ্বের অনেক দেশে ৫০ শতাংশের কম ভোট পড়লে পুনরায় ভোটগ্রহণ করা হয়। ইভিএম সম্পর্কে আমার বক্তব্যের বটম লাইন হলো, ইভিএম-এ যদি ৫০ শতাংশ ভোট না পড়ে, তাহলে ব্যালট পেপারে পুনরায় ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হওয়া উচিত। এজন্য নির্বাচনী বিধি-বিধান পরিবর্তন প্রয়োজন হতে পারে। ’

‘...সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহার নিয়ে রাজনৈতিক দলের মধ্যে মতভেদ রয়েছে। ইভিএম ব্যবহারে সব রাজনৈতিক দল ও অংশীজনের মধ্যে ঐক্যমত্য প্রয়োজন ছিল। কিন্তু আমাদের নির্বাচনী ব্যবস্থায় এ ধরনের সমঝোতার রীতি গড়ে ওঠেনি। ইভিএম নিয়ে আগে আমি ক্রিটিক্যাল থাকলেও দু’টি কারণে আমি এখন ইভিএম ব্যবহারের পক্ষে। একটি হচ্ছে, এতে ভোটের আগের রাতে ব্যালট পেপারে বাক্স ভর্তি করার সংস্কৃতির অবসান ঘটতে পারে। দ্বিতীয় কারণটি হচ্ছে, নির্বাচনে কোনো কোনো কেন্দ্রে শতকরা একশ ভাগ ভোট পড়ার যে অভিজ্ঞতা আমরা অর্জন করেছি, ইভিএম ব্যবহারে তারও অবসান হবে। একাদশ জাতীয় সংসদের ফলাফল, যা নির্বাচন কমিশনের ওয়েবসাইট থেকে পাওয়া গেছে, তাতে দেখা যায়, জাতীয় সংসদের ১০৩টি আসনের ২১৩টি ভোটকেন্দ্রে শতভাগ ভোট পড়েছে। পৃথিবীতে কোনো নির্বাচনেই এ ধরনের ভোটার উপস্থিতির নজির নেই। রাতে ব্যালট পেপারে বাক্স ভর্তি ও কেন্দ্রে শতভাগ ভোট পড়ার অপবাদ থেকে আমরা মুক্ত হতে চাই। যা হোক, ইভিএম-এর বিরুদ্ধবাদীদের বলতে চাই, বর্তমানের রূঢ় বাস্তবতা হচ্ছে, যে কোনো অবস্থাতেই আসন্ন দুই সিটি করপোরেশন নির্বাচনে সবগুলো কেন্দ্রে ইভিএম ব্যবহৃত হবে। এর কোনো অন্যথা হবে না। যারা ইভিএম ব্যবহারের বিরোধিতা করছেন, তাদের বক্তব্য অনেক সময় তাদের সমর্থক ভোটারদের মনেও বিভ্রান্তির সৃষ্টি করছে। এমতাবস্থায়, তাদের সমর্থক ভোটাররা যাতে ভোটকেন্দ্রে গিয়ে ইভিএম-এ ভোট দিতে আগ্রহী হন, এ বিষয়ে উদ্যোগ গ্রহণ আবশ্যক। আমার পরামর্শ হচ্ছে, ইভিএম-এর জানাজা না পড়ে বরং এর জন্মউৎসবের কথা বিরোধীরা ভাবতে পারেন। ’

আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, ‘...নির্বাচন সংশ্লিষ্ট পুলিশ আইনানুগভাবে নির্বাচন কমিশনের কাছে ন্যস্ত, কিন্তু মানসিকভাবেও নির্বাচন কমিশনের অধীনে ন্যস্ত না হলে কোনো ফল লাভ হবে না। আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অতি উৎসাহী কোনো কোনো সদস্যকে আইন ও শৃঙ্খলা ভঙ্গ করতে কিংবা প্রয়োজনের সময় নিষ্ক্রিয় থাকতে দেখা যায়। পুলিশ সপ্তাহ ২০২০ এর প্রতিপাদ্য বিষয় হচ্ছে, ‘মুজিব বর্ষের অঙ্গীকার, পুলিশ হবে জনতার’। জনতার ভোটাধিকার প্রতিষ্ঠা ও রক্ষা করে পুলিশ বাহিনী এই অঙ্গীকার পালন করতে পারে। আমার পরামর্শ আপনাদের মনে ইতিবাচক সাড়া জাগবে। ’

তিনি বলেন, নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর ওয়ারেন্ট ছাড়া কিংবা নতুন ওয়ারেন্ট বা আগের ওয়ারেন্ট দিয়ে যে সব গ্রেফতার করা হয়, তা অনেক ক্ষেত্রে নির্বাচন কমিশনের নির্দেশের বরখেলাপ। জরুরি ক্ষেত্র বিশেষ ব্যতীত গ্রেফতার কার্যক্রম নির্বাচনের পরে হলে অসুবিধা কী? অনেক সময় এসব গ্রেফতারে নির্বাচন কমিশনের ভাবমূর্তি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। প্রয়োজনীয় ক্ষেত্রে নির্বাচনের প্রার্থী ও সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির বিরুদ্ধে মামলা দিলেও তা যেন ‘গায়েবি মামলা’ হয়ে না যায়। ’

এই নির্বাচন কমিশনার বলেন, ‘...নির্বাচন প্রশ্নবিদ্ধ হলে তার দায় আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর উপর এসে পড়বে। আর আপনারা প্রশ্নবিদ্ধ হলে তার দায় আমাদের উপর বর্তাবে। আমরা প্রশ্নবিদ্ধ নির্বাচন করে কলংকিত হতে চাই না। পুলিশের প্রতি আমার একান্ত প্রত্যাশা, দুই সিটি করপোরেশনের এই নির্বাচনে আপনারা অবশ্যই ভোটার ও প্রার্থীদের নিরাপত্তা বিধান করবেন।

আগামী ১ ফেব্রুয়ারি ঢাকার দুই সিটি নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।

বাংলাদেশ সময়: ১৯৩৬ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২২, ২০২০
ইইউডি/এএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।