ঢাকা, বুধবার, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ নভেম্বর ২০২৪, ২৫ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

নির্বাচন ও ইসি

ঢাকায় দুই সিটির ভোটগ্রহণ শুরু

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৩০৫ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১, ২০২০
ঢাকায় দুই সিটির ভোটগ্রহণ শুরু

ঢাকা: ঢাকার দুই সিটি নির্বাচনের ভোটগ্রহণ শুরু করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। শনিবার (১ ফেব্রুয়ারি) সকাল ৮টায় ভোটগ্রহণ শুরু হয়েছে, চলবে বিকেল ৪টা পর্যন্ত।

এবার প্রথমবারের মতো বিভক্ত ঢাকার দুই সিটিতে একযোগে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনে (ইভিএম) ভোটগ্রহণ হচ্ছে। আর এটিই ইভিএমে সবচেয়ে বড় নির্বাচন।

ভোটে বিএনপি, আওয়ামী লীগসহ নয়টি দলের ১৩ জন প্রার্থী মেয়র পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। এছাড়া কাউন্সিলর পদে প্রায় সাড়ে সাতশ প্রার্থী রয়েছেন মাঠে। ফলাফল গেজেটে আকারে প্রকাশ পর্যন্ত কোনো প্রকার মিছিল, মশাল মিছিল, মোটরসাইকেল মিছিল, শোডাউন করা যাবে না। বাইক বন্ধ থাকবে ২ ফেব্রুয়ারি সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত। আর সব যন্ত্রযান বন্ধ থাকবে ১ ফেব্রুয়ারি সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত।

ইসির নির্বাচন পরিচালনা শাখা জানিয়েছে, উত্তরে মেয়র পদে ৬ জন, ৭৫টি সাধারণ ওয়ার্ডের কাউন্সিলর পদে ২৫১ জন এবং ২৫টি সংরক্ষিত ওয়ার্ডের কাউন্সিলর পদে ৭৭ জন অর্থাৎ তিন পদে মোট প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী ৩৩৪ জন।

মেয়র প্রার্থীরা হলেন- বিএনপির তাবিথ আউয়াল, আওয়ামী লীগের আতিকুল ইসলাম, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের শেখ মো. ফজলে বারী মাসউদ, পিডিপির শাহীন খান, এনপিপির মো. আনিসুর রহমান দেওয়ান ও বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির আহম্মেদ সাজ্জাদুল হক।

অন্যদিকে ডিএসসিসিতে মেয়র পদে ৭ জন, ৫৪টি সাধারণ ওয়ার্ডের কাউন্সিলর পদে ৩৩৫ জন ও ১৮টি সংরক্ষিত ওয়ার্ডের কাউন্সিলর পদে ৮২ জন অর্থাৎ ৪২৪ জন প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী রয়েছে।

মেয়র পদে সাত প্রার্থী হলেন- বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের শেখ ফজলে নূর তাপস, বিএনপির ইশরাক হোসেন, জাতীয় পার্টির মোহাম্মদ সাইফুদ্দিন, ইসলামী আন্দোলনের মো. আবদুর রহমান, এনপিপি'র বাহরানে সুলতান বাহার, বাংলাদেশ কংগ্রেসের মো. আকতার উজ্জামান ওরফে আয়াতুল্লা ও গণফ্রন্টের আব্দুস সামাদ সুজন।

প্রভাব ফেলবে নারী ও তরুণ ভোটার:
এবারের নির্বাচনে প্রভাব বিস্তার করবে নারী ও তরুণ ভোটার। তাদের সিদ্ধান্ত যার পাল্লায় পড়বে, সেই ওড়াবেন বিজয়ের পতাকা।

নির্বাচন কমিশনের (ইসি) সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, দুই সিটিতে মোট ৫৪ লাখ ৬৩ হাজার ৪৬৭ জন ভোটার রয়েছে।

২০১৫ সালের ২৮ এপ্রিলের নির্বাচনের সময় দুই সিটিতে ভোটার ছিল ৪২ লাখ ১৬ হাজার ১২৭ জন। পাঁচ বছরে ভোটার বেড়েছে ১২ লাখ ৪৭ হাজার ৩৪০ জন। অর্থাৎ এক পঞ্চমাংশের বেশি তরুণ ভোটার। এদিকে দুই সিটিতে নারী ভোটার ২৬ লাখ ২০ হাজার ৪৫৯ জন।

ঢাকা উত্তর সিটিতে মোট ভোটার রয়েছেন ৩০ লাখ ১০ হাজার ২৭৩ জন। এর মধ্যে নারী ভোটার ১৪ লাখ ৬০ হাজার ৭০৬ জন। আর ঢাকা দক্ষিণ সিটিতে ভোটার রয়েছে ২৪ লাখ ৫৩ হাজার ১৯৪জন। যাদের মধ্যে নারী ভোটার ১১ লাখ ৫৯ হাজার ৭৫৩ জন।

আইন-শৃঙ্খলা:
ভোটের মাঠে শৃঙ্খলা রক্ষায় পুলিশ, আনসার, র‌্যাব, বিজিবির অর্ধলাখ ফোর্স মোতায়েন রেখেছে নির্বাচন কমিশন। ভোটের পরেও মাঠে থাকবে তারা। ভোটকেন্দ্রের নিরাপত্তায় নিয়োজিত করা হয়েছে ৪২ হাজার ফোর্স। এর মধ্যে সাধারণ কেন্দ্রে বিভিন্ন বাহিনীর ১৬ জন করে এবং ঝুঁকিপূর্ণ কেন্দ্রে ১৮ জন করে ফোর্স মোতায়েন রয়েছে।

নির্বাচনী আচরণবিধি প্রতিপালন ও অপরাধের বিচার কাজের জন্য দুই সিটিতে ১২৯ জন নির্বাহী হাকিম ও ৬৪ জন বিচারিক হাকিম নিয়োগ করা হয়েছে। ঢাকা উত্তর সিটিতে ৫৪ জন ও ঢাকা দক্ষিণ সিটিতে ৭৫ জন নির্বাহী হাকিম ২ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত নির্বাচনী মাঠে থাকবেন।

এছাড়া উত্তর সিটিতে ২৭ জন ও দক্ষিণে ৩৭ জন বিচারিক হাকিম দায়িত্ব পালন করবেন ৩ জানুয়ারি পর্যন্ত।

আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নির্বাচন ভবনে নিয়োজিত রয়েছে একটি উচ্চ পর্যায়ের টিম। ইসির জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন অনুবিভাগের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. সাইদুল ইসলামের নেতৃত্বে এই টিম সার্বক্ষণিক কড়া নজরদারি করছে পুরো নির্বাচনী মাঠ।

ইভিএম:
২০১০ সালে বাংলাদেশের নির্বাচনে ইভিএমের প্রচলন শুরু হলেও সেটা এসে থেমে যায় ২০১৫ সালে। এরপর ২০১৭ সালে নেওয়া অধিকতর উন্নতমানের ইভিএম তৈরির সিদ্ধান্তটি এগিয়ে নিয়ে বড় পরিসরে এই যন্ত্র ব্যবহারের দিকে যায় সংস্থাটি।

দুই সিটির ২ হাজার ৪৬৮টি ভোটকেন্দ্রের ১৪ হাজার ৪৩৪টি ভোটকক্ষে ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হচ্ছে। প্রতি ভোটকক্ষের জন্য একটি ও একটি অতিরিক্ত ইভিএম রাখা হয়েছে। ইসির জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন অনুবিভাগের মহাপরিচালক জানিয়েছেন, নির্বাচন পরিচালনার জন্য ৪৫ হাজার ৭৭০ জন ভোটগ্রহণ কর্মকর্তাকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। এছাড়াও প্রত্যেক কেন্দ্রে দু’জন করে ৫ হাজার ১৫ জন সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী, কোস্টগার্ড ও বিমান বাহিনীর সদস্য মোতায়েন রয়েছে। তারা কারিগরি সহায়তা দেবেন।

শাস্তি:
নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘনের শাস্তি হিসেবে অনধিক ৫০ হাজার টাকা জরিমানা বা ছয়মাসের কারদণ্ড অথবা উভয় দণ্ডে দণ্ড দেওয়ার বিধান রয়েছে। আর দল বা দলের পক্ষে কোনো প্রতিষ্ঠান বিধিমালা লঙ্ঘন করলে ৫০ হাজার টাকা পর্যন্ত অর্থদণ্ড দেওয়ার বিধান আছে। এছাড়া কোনো প্রার্থীর বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণ হলে নির্বাচনের পরেও সেই প্রার্থীর প্রার্থিতা সর্বোচ্চ শাস্তি হিসেবে বাতিল করতে পারে নির্বাচন কমিশন।

আইন অনুযায়ী, এসব বিধিমালা প্রার্থী বা প্রার্থীর পক্ষে অন্য যে কোনো ব্যক্তির ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হবে।

এছাড়া ভোটে তাৎক্ষণিক আদালত বসিয়ে ফৌজদারি অপরাধের বিচার করবেন বিচারিক হাকিমরা। আবার বড় কোনো অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটলে তার জন্য মামলাও হবে।

পর্যবেক্ষক:
নয়টি দেশ ও একটি সংস্থার ৭৪ জন পর্যবেক্ষককে ভোট পর্যবেক্ষণের অনুমতি দিয়েছে নির্বাচন কমিশন। এছাড়া ২২টি সংস্থার ১ হাজার ১৩ জন দেশি পর্যবেক্ষকও ভোটের মাঠে রয়েছে।

ভোটারকে কেন্দ্রের তথ্য জানাচ্ছে ইসি:
১০৫ নম্বরে কল করে বা মেসেজ পাঠিয়ে বিনা খরচে ভোটাররা তাদের ভোটার নম্বর ও ভোটকেন্দ্রের নাম জানতে পারছেন। এছাড়া ইসির ওয়েবসাইট থেকে এসব তথ্য জানা যাচ্ছে।

বাজেট:
এবারের নির্বাচনেও ২০১৫ সালের নির্বাচনের মতো ব্যয় ধরা হয়েছে ৪০ কোটি টাকা। এরমধ্যে অর্ধেক ব্যয় হচ্ছে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষার কাজে। বাকি অর্ধেক ব্যয় হবে নির্বাচন পরিচালনায়।

২০১৫ সালে বিভক্ত ঢাকার দুই সিটির প্রথম নির্বাচনে কাউন্সিলর, সংরক্ষিত কাউন্সিলর ও মেয়র পদে মোট ৮৯৩ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিলেন। সে সময়কার (ডিএনসিসি) নির্বাচনে ৩৬ টি ওয়ার্ডে ২৮১জন সাধারণ কাউন্সিলর প্রার্থী ও ৮৯ জন সংরক্ষিত কাউন্সিলর প্রার্থী এবং ১৬ জন মেয়র পদপ্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছেন। আর ডিএসসিসির ৫৭টি ওয়ার্ডে ৩৯০ জন সাধারণ কাউন্সিলর প্রার্থী, ৯৭ জন সংরক্ষিত কাউন্সিলর প্রার্থী ও মেয়র পদে ২০ জন প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী ছিলেন।

বাংলাদেশ সময়: ০৮০০ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ০১, ২০২০
ইইউডি/এএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।