ঢাকা, শুক্রবার, ১২ পৌষ ১৪৩১, ২৭ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৪ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

নির্বাচন ও ইসি

ইসির নতুন আইন: চাপিয়ে দেওয়া হবে না কিছুই

ইকরাম-উদ দৌলা, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭২৬ ঘণ্টা, আগস্ট ৬, ২০২০
ইসির নতুন আইন: চাপিয়ে দেওয়া হবে না কিছুই ইসি সচিব মো. আলমগীর

ঢাকা: রাজনৈতিক দল নিবন্ধনে নতুন আইনের খসড়া নিয়ে অংশীজন, পর্যবেক্ষকদের মধ্যে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। কারণ তারা মনে করছেন, এতে অযৌক্তিক আর চাপিয়ে দেওয়ার মতো কিছু বিষয় যুক্ত করা হয়েছে।

তবে নির্বাচন কমিশন (ইসি) বলছে, দলগুলোর ওপর কোনো কিছু চাপিয়ে দেওয়া হবে না। প্রস্তাবিত খসড়ার ওপর সবার মতামত নেওয়া হয়েছে। সেগুলোর যৌক্তিকতা বিবেচনা করেই আমরা খসড়ায় সংযোজন বিয়োজন করব।  

ইসি সচিব মো. আলমগীর সে বিষয়ে বিস্তারিত কথা বলেছেন বাংলানিউজের সঙ্গে।

বর্তমানে বিধান অনুযায়ী ২০২০ সালের মধ্যে দলের সব পর্যায়ের কমিটিতে ৩৩ শতাংশ নারী পদ পূরণের বাধ্যবাধকতা আছে। কিন্তু নতুন আইনের খসড়ায় তা তুলে দেওয়ার কথা বলা হয়েছে। খসড়া অনুযায়ী, যে কোনো দল ৩৩ শতাংশ নারী সদস্যপদ কতদিনের মধ্যে পূরণ করবে, তা স্বাধীনভাবে গঠনতন্ত্রে উল্লেখ করবে। ইসিকে শুধু মাঝে মধ্যে অগ্রগতি জানাবে।  

নির্বাচন পর্যবেক্ষকরা এ নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। তারা বলছেন, সময় বেঁধে দিয়েই শর্ত পূরণ করানো যাচ্ছে না, সেখানে সময় তুলে দিয়ে দলের কাছে সিদ্ধান্ত ছেড়ে দিলে কতটুকু বাস্তবায়ন হবে?

মো. আলমগীর এ প্রসঙ্গে বলেন, আমরা কোনো সিদ্ধান্ত নিইনি। এটা খসড়া মাত্র। একটা আইন তৈরি করতে গেলে প্রথমে খসড়াই করতে হয়। সেটাই করা হয়েছে। এ খসড়ার ওপর সবার মতামত চাওয়া হয়েছিল। সবার মতামত বিশ্লেষণ করেই কমিশন সিদ্ধান্ত নেবে।

খসড়ায় নিবন্ধন পাওয়ার অন্যতম শর্ত হিসেবে আবেদন করার তারিখ থেকে পূর্ববর্তী দুটি সংসদ নির্বাচনে দলীয় প্রতীকে কমপক্ষে একটি আসন পাওয়ার বিষয়টি রাখা হয়েছে এবং ওই সংসদ নির্বাচনে যে কোনো একটিতে আবেদনকারী দলের অংশগ্রহণ করা আসনে প্রদত্ত মোট ভোটের ৫ শতাংশ পাওয়ার বিধানের প্রস্তাব করা হয়েছে।

বর্তমানে যে বিধান রয়েছে, সেখানে স্বাধীনতার পর থেকে যে কোনো দু'টি নির্বাচনের কথা বলা আছে। এছাড়া খসড়ায় তিনটি প্রধান শর্তের দু'টি পূরণের জন্য বলা হয়েছে, এখন একটি পূরণ করলেই হয়।

নির্বাচন বিশেষজ্ঞরা ইসির এমন মনোভাবকে কঠোর অবস্থান হিসেবেই দেখছেন। নির্বাচন পর্যবেক্ষক সংস্থা সুশাসনের জন্য নাগরিক-সুজন মনে করে, নতুন দলের নিবন্ধনের ক্ষেত্রে নতুন আইনের খসড়ায় উল্লেখিত প্রস্তাব গ্রহণযোগ্য নয়। নিবন্ধনের পূর্বশর্তগুলো খুব বেশি কড়াকড়ি না করে বরং কিছুটা শিথিল রাখা উচিত- যাতে নতুন রাজনৈতিক শক্তির উন্মেষের পথ খোলা থাকে।    

এ বিষয়টি সামনে আনা হলে ইসি সচিব মো. আলমগীর বলেন, পাঁচ কমিশনার চিন্তা করে এমন প্রস্তাব খসড়ায় রেখেছেন। তাদের চিন্তার ব্যতিক্রম থাকবে বলেই তো সবার মতামত চাওয়া হয়েছে। এখানে কোনোকিছুই চাপিয়ে দেওয়া হবে না। সুশীল সমাজ, রাজনৈতিক দল, নগরিক সমাজের পক্ষ থেকে যৌক্তিক এবং জোর মতামত থাকলে তা গ্রহণ করা হবে। সবার মতামত নিয়ে বসে আমরা দেখব কোনটা ঠিক আর কোনটা ঠিক নয়।  

বতর্মান আইনে পরপর দু'টো নির্বাচনে অংশগ্রহণ না করলে, নিবন্ধন বাতিলের বিধান নেই। কিন্তু নতুন আইনের খসড়ায় এ বিধান রাখা হয়েছে। এ নিয়েও বিভিন্ন দল আপত্তি জানিয়েছে। বিএনপি ইসির সঙ্গে সাক্ষাৎ করেও এ বিধান না রাখার দাবি তুলেছে।

এ নিয়ে ইসি সচিব মো. আলমগীর বলেছেন, দলগুলোর মতামত আমরা গুরুত্বের সঙ্গেই বিবেচনায় করব।  

কোনো দল সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে চাইলে অবধারিতভাবে ইসিতে নিবন্ধিত হতে হয়। বর্তমানে গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশের (আরপিও) ভিআইএ অধ্যায়ের বিধানাবলীর আলোকে নিবন্ধন দেয় ইসি।

নির্বাচন কমিশন আরপিও থেকে সেই অধ্যায় তুলে দিয়ে 'রাজনৈতি দল নিবন্ধন আইন -২০২০' নামে নতুন একটি আইন প্রণয়নের কাজে হাত দিয়েছে। এতে আরপিওর ৯০ (এ) থেকে ৯০ (ই) পর্যন্ত ধারাগুলোয় কিছু সংযোজন, বিয়োজন করে খসড়া প্রস্তুত করা হয়েছে।

ইসি সচিব মো. আলমগীর বলেন, ৩১ জুলাই পর্যন্ত মতামত দেওয়ার সময় ছিল। এখন আমরা সবার মতামত একীভূত করে আলোচনায় বসব। বৈঠকে বাস্তবতা ও যৌক্তিকতার ভিত্তিতে খসড়া সংযোজন, বিয়োজন করে অনুমোদন করা হবে।

নির্বাচন কমিশনে বর্তমানে নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলের সংখ্যা ৪১টি। প্রতি সংসদ নির্বাচনের পূর্বে নিবন্ধন নেওয়ার জন্য গণবিজ্ঞপ্তি জারির মাধ্যমে দলগুলোর কাছে আবেদন আহ্বান করে ইসি।

বাংলাদেশ সময়: ১৭১০ ঘণ্টা, আগস্ট ০৬, ২০২০
ইইউডি/এজে

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।