ঢাকা, মঙ্গলবার, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ২৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

নির্বাচন ও ইসি

এনআইডি শাখা মন্ত্রণালয়ে ন্যস্ত হলে ইভিএমে ভোটগ্রহণ জটিল হবে

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯১২ ঘণ্টা, মে ২০, ২০২১
এনআইডি শাখা মন্ত্রণালয়ে ন্যস্ত হলে ইভিএমে ভোটগ্রহণ জটিল হবে

ঢাকা: জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন কার্যক্রম (এনআইডি) নির্বাচন কমিশনের (ইসি) অধীনে না থাকলে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনে (ইভিএম) ভোট পরিচালনা জটিলতা সৃষ্টি করবে বলে জানিয়েছেন সংস্থাটির কর্মকর্তারা।

প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কে এম নূরুল হুদার কাছে লেখা এক চিঠিতে তারা এ জটিলতার কথা জানিয়েছেন।

জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন অনুবিভাগের পরিচালক (অপারেশন্স) ও বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশন অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মো. নূরুজ্জামান তালুকদার এবং চট্টগ্রামের আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা ও বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশন অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশনের মহাসচিব মুহাম্মদ হাসানুজ্জামান স্বাক্ষরিত ওই চিঠিতে এনআইডি কার্যক্রম ইসির অধীনেই রাখার যৌক্তিকতা তুলে ধরেন।

তারা বলেন, গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধানের ১১৯ অনুচ্ছেদ বলা হয়েছে, রাষ্ট্রপতি পদের ও জাতীয় সংসদের নির্বাচনের জন্য ভোটার তালিকা প্রস্তুতকরণের তত্ত্বাবধান, নির্দেশ ও নিয়ন্ত্রণ এবং অনুরূপ নির্বাচন পরিচালনার দায়িত্ব নির্বাচন কমিশনের ওপর ন্যস্ত থাকবে। বর্তমান সরকারের অধীন ডিজিটাল বাংলাদেশ গঠনের অংশ হিসেবে নির্বাচন কমিশন ভোটগ্রহণে ইভিএম পদ্ধতি চালু করেছে, যা সম্পূর্ণ জাতীয় পরিচয়পত্রের ডাটাবেজ নির্ভর। ইভিএম পদ্ধতিতে ভোটদানে জাতীয় পরিচয়পত্রের ডাটাবেজের বিকল্প নেই। যদি অন্য কোনো দফতর ও বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশন একইসঙ্গে ডাটাবেজ গঠনের কার্যক্রম পরিচালনা করে এতে দু’টি ডাটাবেজে জনবহুল বাংলাদেশের নাগরিকদের তথ্যের গরমিল পরিলক্ষিত হওয়াটাই স্বাভাবিক। তাই গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধানের ১১৯ অনুচ্ছেদের দফা (১) অনুযায়ী নির্বাচন অনুষ্ঠানের লক্ষ্যে ভোটার তালিকা প্রস্তুতকরণের তত্ত্বাবধান, নির্দেশ ও নিয়ন্ত্রণ নির্বাচন কমিশনের হাতে থাকা যুক্তিযুক্ত। যেহেতু ভোটার তালিকার ডাটাবেজ থেকে জাতীয় পরিচয়পত্র প্রস্তুত করা হয় তাই এটা নির্বাচন কমিশনের অধীনে থাকাই যক্তিযুক্ত। অন্যথায় ইভিএম পদ্ধতিতে নির্বাচন পরিচালনা নির্বাচন কমিশনের পক্ষে জটিল হয়ে দাঁড়াবে।

‘এ তথ্য ভাণ্ডারের সর্বশেষ হালনাগাদকৃত তথ্য থেকে এনআইডি কার্ড মুদ্রণ করা হয় এবং ইভিএম পরিচালনার ক্ষেত্রে পোলিংকার্ডসমূহ রিয়েল টাইম সিনক্রোনাইজেশনের মাধ্যমে কাস্টমাউজ করা হয়। যদি অন্য কোনো সংস্থার কাছ থেকে ডাটা নিয়ে ভোটার তালিকা প্রস্তুত করা হয় সেক্ষেত্রে সমগ্র নির্বাচন প্রক্রিয়ায় জটিলতা সৃষ্টি হওয়ার সম্ভবনা রয়েছে। যেমন ২০০৬ সালের ভোটার তালিকা নিয়ে নির্বাচন বানচালের মতো পরিস্থিতির উদ্ভব হয়েছিল। যার পরিপ্রেক্ষিতে আদালতের নির্দেশানুসারে এ বায়ামেট্রিক্স সম্বলিত ভোটার ডাটবেজের সৃষ্টি হয়। ’

সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রী কার্যালয় থেকে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে এনআইডি কার্যক্রম স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা বিভাগের অধীনে ন্যস্ত করার জন্য একটি চিঠি দেওয়া হলে ইসি কর্মকর্তারা উদ্বেগ প্রকাশ করেন। একইসঙ্গে তারা এনআইডি কার্যক্রম ইসির অধীনে রাখার জোর দাবিও জানান সিইসির কাছে।

প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের পরিচালক-১০ এ কে এম ফজলুর রহমানের গত ১৭ মে স্বাক্ষরিত এনআইডি কার্যক্রম স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষাসেবা বিভাগে ন্যস্ত করা সংক্রান্ত ওই চিঠির অনুলিপি ইসিতে আসার পর কর্মকর্তারা সিইসির সঙ্গে গত বুধবার (১৯ মে) সাক্ষাৎও করেন।

মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে পাঠানো ওই চিঠিতে বলা হয়েছে- ১. জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন কার্যক্রম নির্বাহী বিভাগের দায়িত্বের অন্তর্ভুক্ত হওয়ায় বিভিন্ন দেশের উদাহরণের আলোকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অধীন সুরক্ষাসেবা বিভাগ ওই দায়িত্ব পালনে উপযুক্ত কর্তৃপক্ষ বিবেচিত বিধায় জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন সংক্রান্ত দায়িত্ব সুরক্ষা সেবা বিভাগে ন্যস্ত করার লক্ষ্যে 'অ্যালোকেশন অব বিজনেস অ্যামং ডিফারেন্ট মিনস্ট্রিজ অ্যান্ড ডিভিশন্স'-এ সুরক্ষাসেবা বিভাগের দায়িত্বসমূহের মধ্যে জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন সংক্রান্ত যাবতীয় কার্যক্রম অন্তর্ভুক্ত করা যেতে পারে।

২. জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন আইন-২০১০ এ 'নির্বাচন কমিশন'-এর পরিবর্তে সরকার শব্দ অন্তর্ভুক্তকরণসহ প্রয়োজনীয় সংশোধনের ব্যবস্থা গ্রহণ করা যেতে পারে।

৩. সুরক্ষাসেবা বিভাগ জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন কার্যক্রম পরিচালনার জন্য বিদ্যমান অবকাঠামো ও জনবল নির্বাচন কমিশন থেকে সুরক্ষা বিভাগে হস্তান্তরের ব্যবস্থা গ্রহণ করা যেতে পারে।

ছবিযুক্ত ভোটার তালিকা প্রণয়নের উদ্দেশে ২০০৭ সালে নির্বাচন কমিশন একটি তথ্য ভাণ্ডার গড়ে তোলে। সেই কার্যক্রমের অংশ হিসেবেই সংস্থাটি নাগরিকদের একটি পরিচয়পত্রও দেয়। পরবর্তীতে এনআইডি অনুবিভাগ তৈরি করে বিশ্ব ব্যাংকের সহায়তায় স্মার্টকার্ড প্রকল্পও হাতে নেয়। এজন্য আইন ও বিধি প্রণয়ন করে বর্তমানে ভোটার তালিকার ভিত্তিতে দেশের সব নাগরিকদের জাতীয় পরিচয়পত্র দেওয়ার কাজ করে আসছে ইসি। সংস্থাটির তথ্য ভাণ্ডারে প্রায় ১১ কোটি ১৭ লাখ নাগরিকের তথ্য রয়েছে।

এদিকে এনআইডি কার্যক্রম স্থানান্তরের বিষয়ে ইসি সচিব মো. হুমায়ুন কবীর ইতোমধ্যে সাংবাদিকদের বলেছেন, আমরা বিষয়টি পর্যালোচনা করে অবস্থান জানাবো। আর এনআইডি অনুবিভাগের পরিচালক মো. নুরুজ্জামান তালুকদার সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, এনআইডি কার্যক্রম ইসির অধীনেই থাকবে বলে আশ্বাস দিয়েছেন সিইসি।

বাংলাদেশ সময়: ১৯১০ ঘণ্টা, মে ২০, ২০২১
ইইউডি/আরবি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।