ঢাকা, মঙ্গলবার, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ২৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

নির্বাচন ও ইসি

ইসি থেকে এনআইডি সরালে ভোটার হওয়ার আগ্রহ কমবে

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০২৬ ঘণ্টা, মে ৩০, ২০২১
ইসি থেকে এনআইডি সরালে ভোটার হওয়ার আগ্রহ কমবে

ঢাকা: নির্বাচন কমিশন (ইসি) থেকে জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) নিবন্ধন কার্যক্রম সরিয়ে অন্য কোনো সংস্থার অধীনে ন্যস্ত করলে তরুণদের ভোটার হওয়ার আগ্রহ কমে যাবে। আর অন্য দফতরের অধীন এনআইডি সার্ভার থেকে তথ্য নিয়ে ভোটার তালিকা করা হলে সেটি গ্রহণযোগ্যতা হারাবে।

এমন একগুচ্ছ যুক্তি তুলে ধরে ইসি কর্মকর্তারা এনআইডি কার্যক্রম না সরানোর দাবি তুলে ধরেছেন।

প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কেএম নূরুল হুদার কাছে রোববার (৩০ মে) বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশন অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশনের ব্যানারে লিখিত বক্তব্যে দাবি তুলে ধরেন।

অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মো. নুরুজ্জামান তালুকদার ও মুহাম্মদ হাসানুজ্জামান তালুকদার স্বাক্ষরিত লিখিত বক্তব্যে এনআইডি কার্যক্রমের নানা দিকও তুলে ধরা হয়।

এতে বলা হয়- গত ১৭ মে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে এনআইডি কার্যক্রম ইসির পরিবর্তে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অধীন সুরক্ষা সেবা বিভাগে ন্যস্ত করা যেতে পারে মর্মে প্রস্তাব করা হয়। এতে ইসি কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের মধ্যে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠার সৃষ্টি হয়েছে। তাই, নিম্নরূপ কারণে সরকারের উক্ত সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনা করার জন্য বাংলাদেশ ইলেকশন কমিশন অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশনের পক্ষ তেকে জোর দাবি জানানো যাচ্ছে।

১) সংবিধান অনুযায়ী ভোটার তালিকা প্রস্তুতকরণে শুধু বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশনই এখতিয়ারভুক্ত। ইসির নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় ভোটার তালিকা ডাটাবেজ থেকে উপজাত (by product) হিসেবে জাতীয় পরিচয়পত্র দেওয়া হচ্ছে। এনআইডির জন্য আলাদা কোনো ডাটাবেজ নেই। নির্বাচন কমিশনের পাশাপাশি অন্য কোনো প্রতিষ্ঠান এই অভিন্ন ডাটাবেজের রক্ষণাবেক্ষণ ও নিয়ন্ত্রণ করা হলে ডাটাবেজের তথ্যে গরমিল সৃষ্টি হবে। এ পর্যন্ত বাংলাদেশে তৈরি অন্য সব ডাটাবেজের তুলনায় ভোটার তালিকা ডাটাবেজ জাতীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে নিরঙ্কুশ আস্থা ও গ্রহণযোগ্যতা অর্জন করেছে। যার ব্যত্যয় বাংলাদেশের নির্বাচন ব্যবস্থাকে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে প্রশ্নের সম্মুখীন করতে পারে।

২)  ইভিএম মেশিনে ভোটগ্রহণ পদ্ধতির সব পর্যায়ে ভোটার তালিকার ডাটাবেজ আবশ্যিকভাবে ব্যবহার করা হয়। ইভিএমে ভোটগ্রহণ, নির্বাচনে প্রার্থী ব্যবস্থাপনা ও ভোটার ব্যবস্থাপনায় স্মার্ট জাতীয় পরিচয়পত্র ও জাতীয় পরিচয়পত্র নম্বর ব্যবহার অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং অপরিহার্য অনুষঙ্গ। সুতরাং, ভোটার তালিকা ডাটাবেজ ও জাতীয় 
পরিচয়পত্র ডাটাবেজের দ্বৈত ব্যবস্থাপনা ডিজিটাল প্রযুক্তিনির্ভর নির্বাচন ব্যবস্থাপনাকে সম্পূর্ণ ঝুঁকি ও হুমকির মধ্যে ফেলবে। এতে নির্বাচনের গ্রহণযোগ্যতা প্রশ্নবিদ্ধ হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।

৩) জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন আইন, ২০১০ এ জাতীয় পরিচয় নিবন্ধনের ক্ষেত্রে ভোটার ডাটাবেজের তথ্য-উপাত্তকেই ভিত্তি হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। ভোটার তালিকা প্রণয়ন বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশনের সাংবিধানিক দায়িত্ব এবং ভোটার তালিকা ও জাতীয় পরিচয়পত্র অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত। একই প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে উভয় প্রকার কার্যক্রম পরিচালিত হওয়ায় দ্বৈততা পরিহারসহ বিপুল অর্থ, শ্রম ও সময়ের সাশ্রয় হচ্ছে।

৪) এনআইডির জন্য এনআইডি উইংয়ের আলাদা অবকাঠামো এবং জনবল নেই। ইসির অবকাঠামো ব্যবহার করে ইসির লোকবল দিয়েই কার্যক্রম পরিচালনা করা হয় সারাদেশে। অন্য কোনো সংস্থা পরিচালনা করে বর্তমান অবস্থানে পৌঁছাতে সুদীর্ঘ সময়ের প্রয়োজন হবে। অনুরূপ অবকাঠামো তৈরি এবং পৃথক ডাটাবেজ ব্যবস্থাপনার ফলে তথ্যের অভিন্নতা ক্ষুণ্ন হবে এবং আলাদা করে বিপুল অর্থ ও শ্রমের প্রয়োজন হবে যা বিদ্যমান বৈশ্বিক করোনা পরিস্থিতিতে বর্তমান সরকার গৃহীত ব্যয় সংকোচন নীতির পরিপন্থি।

৫) ভোটার তালিকা ডাটাবেজের নিয়ন্ত্রণকারী কর্তৃপক্ষ একাধিক হলে অপারেশনাল কার্যক্রমে চরম বিশৃংখলা সৃষ্টি হওয়ার আশংকা দেখা দেবে। ভোটার তালিকা ও জাতীয় পরিচয়পত্রের তথ্যের অসংগতি ও ভুল-ত্রুটির জন্য একে অন্যকে দোষারোপ করবে। ফলে জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা অত্যন্ত দুরূহ হবে। এছাড়া স্বাধীন সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান হিসেবে নির্বাচন কমিশনে জনগণ যে সব ব্যক্তিগত তথ্য দিয়েছেন সেসব তথ্য অন্য কোনো প্রতিষ্ঠানে হস্তান্তর সংবিধান, আইন ও বিধিসম্মত হবে কিনা তা পুনর্বিবেচনা করা দরকার।

৬) অন্যদিকে জাতীয় পরিচয়পত্র নির্বাচন কমিশন থেকে অন্য মন্ত্রণালয়/বিভাগে ন্যস্ত করা হলে শুধু ভোটার হওয়ার জন্য জনগণের আগ্রহ ও উদ্দীপনায় নেতিবাচক প্রভাব সৃষ্টি হবে যা ভবিষ্যতে নির্বাচন ব্যবস্থা এবং গণতন্ত্রকে হুমকির মুখে ফেলতে পারে। উপরন্তু কোনো প্রতিষ্ঠান নিজস্ব উদ্ভাবনী কার্যক্রমের স্বীকৃতি হারালে নতুন কোনো উদ্ভাবনে (innovation) প্রতিষ্ঠান নিরুৎসাহী হবে।

এছাড়াও অন্য সংস্থান অধীন এনআইডি নেওয়া হলে সাংবিধানিক সংকট, ভোটার তালিকার বিশ্বাসযোগ্যতা কমে যাওয়া, আইনি জটিলতাসহ নানা সমস্যা সৃষ্টি হওয়ার কথাও বলা হয় লিখিত বক্তব্যে।

এদিকে রোববার (৩০ মে) দুপুরে সিইসিও সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, এটা অন্য কোনো সংস্থার অধীন নেওয়া হলে সাংবিধানিক সংকট তৈরি হবে। তাই এনআইডি কার্যক্রম ইসির অধীনেই থাকা উচিত।

প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের ওই প্রস্তাবের পর মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ গত ২৪ মে এনআইডি কার্যক্রম ছেড়ে দেওয়ার ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য ইসিকে নির্দেশনা দেয়।

বাংলাদেশ সময়: ২০২৩ ঘণ্টা, মে ৩০, ২০২১
ইইউডি/এএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।