ঢাকা, শুক্রবার, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৮ রমজান ১৪৪৫

নির্বাচন ও ইসি

ইসি থেকে এনআইডি সরালে দেশ-বিদেশে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭৩৪ ঘণ্টা, জুন ৬, ২০২১
ইসি থেকে এনআইডি সরালে দেশ-বিদেশে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে

ঢাকা: নির্বাচন কমিশন (ইসি) থেকে জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন (এনআইডি) কার্যক্রমের সেবা সরিয়ে অন্য কোন দপ্তর বা সংস্থার কাছে ন্যস্ত করলে সরকারের ওপর দেশে-বিদেশে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। কেননা, ইসি এই প্রকল্প শুরু করার সময় সরকারের কোন মন্ত্রণালয় আলাদাভাবে কোনো আগ্রহ দেখায়নি।



সাবেক নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) এম সাখাওয়াত হোসেন রোববার (৬ জুন) এক আলোচনা সভায় অংশ নিয়ে এমন মন্তব্য করেন। সাখাওয়াত হোসেন ছবিযুক্ত ভোটার তালিকা তৈরির সময়কার এটিএম শামসুল হুদার নেতৃত্বাধীন কমিশনের একজন সদস্য ছিলেন।

সম্প্রতি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষাসেবা বিভাগে এনআইডি কার্যক্রম হস্তান্তর করার বিষয়টি আলোচনায় এলে সভাটির আয়োজন করে সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন)।

‘সরকার কর্তৃক জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন কার্যক্রম স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে ন্যস্ত করার উদ্যোগ ও প্রাসঙ্গিক ভাবনা’ শীর্ষক অনুষ্ঠিত সভার সভাপতিত্ব করেন সুজন’র কেন্দ্রীয় নির্বাহী সদস্য বিচারপতি এম এ মতিন।  

এতে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ড. শাহদীন মালিক, সাবেক মন্ত্রী শেখ শহীদুল ইসলাম, বিশিষ্ট সাংবাদিক সোহরাব হাসান ও আবু সাঈদ খান, অধ্যাপক আসিফ নজরুল, রাজনীতিবিদ রাজেকুজ্জামান রতন ও রুহিন হোসেন প্রিন্স প্রমুখ।  

অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন সুজন সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার এবং ড. এম সাখাওয়াত হোসেনের লিখিত প্রবন্ধ পাঠ করেন সুজন কেন্দ্রীয় সমন্বয়কারী দিলীপ কুমার সরকার।

ড. এম সাখাওয়াত হোসেন তার প্রবন্ধে বলেন, নির্বাচন কমিশন এককভাবে ডিএফআইডির (ইউকে ডিপার্টমেন্ট ফর ইন্টারন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট প্রোগ্রাম) উদ্যোগে এবং ইউএনডিপির সমন্বয়ে দি প্রিপারেশন অব দি ইলেক্ট্রোরাল রোলস প্রজেক্টের আওতায় ভোটার তালিকা তৈরির তিন বছর মেয়াদি পরিকল্পনা ২০০৭ সালের তৎকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অনুমোদনে হাতে নিয়েছিল। প্রথমে একে ভোটার আইডি বলা হলেও পরে এর সঙ্গে জাতীয় পরিচয়পত্র যুক্ত করা হয়। ছবিসহ ভোটার তালিকার সঙ্গে যুক্ত থাকায় শুধু প্রিন্ট এবং প্লাস্টিক কভারের যৎসামান্য খরচে যুগপৎভাবে ভোটার তালিকা এবং আইডিকার্ড প্রস্তুত করার পাইলট প্রকল্প শুরু করা হয় গাজীপুর জেলার শ্রীপুর উপজেলায়।

এ প্রকল্পটি যখন হাতে নেওয়া হয় তখন কোনো সরকারি মন্ত্রণালয় আলাদাভাবে আইডিকার্ডের প্রকল্পে কোনো ধরনের আগ্রহ প্রকাশ করেনি। দ্বিতীয়ত, প্রকল্পটি প্রায় শতভাগ দাতাদেশগুলোর সহযোগিতায় সম্পন্ন করা হয় এবং ইউএনডিপির হস্তান্তরের পর নির্বাচন কমিশন গত ১৩ বছর যথেষ্ট দক্ষতার সঙ্গে এত বড় আয়োজন সম্পন্ন করে আসছে। তৃতীয়ত, ২০১০ সালের আইনের পরিপ্রেক্ষিতে  উপজেলা, জেলা এবং আঞ্চলিক পর্যায়ে নির্বাচন কমিশনের ভোটার তালিকা হালনাগাদ করার সঙ্গে জাতীয় পরিচয়পত্র কার্যক্রম পরিচালিত হয়।

তিনি আরও উল্লেখ করেন, নির্বাচন কমিশনের ভোটার তালিকার সঙ্গে যুক্ত জাতীয় পরিচয়পত্র কার্যক্রম মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের পত্র অনুযায়ী স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের হাতে অর্পণ করা হলে নির্বাচন কমিশনের একটি বৃহৎ অংশ সরকারের উল্লিখিত মন্ত্রণালয়ের নিয়ন্ত্রণে ন্যস্ত হবে, যা সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক হবে এবং নির্বাচন কমিশনের স্বাধীন সত্তা খর্ব হবে, যা মোটেই গ্রহণযোগ্য হবে না। এটা নিয়ে দেশ-বিদেশে সরকারের ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়বে এবং অপরদিকে ভোটার তালিকা প্রণয়ন ও ব্যবহারে জটিলতা সৃষ্টি হবে।

বদিউল আলম মজুমদার বলেন, ছবিসহ ভোটার তালিকা আমাদের গর্বের ধন। এটিতে কোনোভাবেই হস্তক্ষেপ করা ঠিক হবে না। আর সরকার করতে চাইলে জন্ম নিবন্ধন থেকে শুরু করতে পারে।  

আবু সাঈদ খান বলেন, একটি দেশের নিজস্ব অভিজ্ঞতার আলোকেই সিদ্ধান্ত নিতে হয় কোন প্রতিষ্ঠান দিয়ে কি দায়িত্ব পালন করা হবে। কোনো প্রতিষ্ঠান যদি কোনো কাজে সফলতা দেখায় সেটাও ধরে রাখা উচিত। জাতীয় পরিচয়পত্র তৈরির মতো একটি সফল প্রকল্প যেটি দেশ-বিদেশে সমাদৃত সেটাও আমাদের ধরে রাখা উচিত বলে আমি মনে করি।

রাজেকুজ্জামান রতন বলেন, নির্বাচন কমিশনের অস্তিত্ব বা প্রয়োজনীয়তা সরকার কি মনে করে না? পুলিশ ভেরিফিকেশনের নামে হয়রানি ও আর্থিক বাণিজ্য বাড়বে। ১৮ বছরের নিচে যারা তাদের নাগরিক কার্ড দেওয়ার জন্য বিশেষজ্ঞদের মতামত নেওয়া দরকার। নতুন প্রকল্পের নামে খরচের নতুন খাত সৃষ্টি করা হবে।

সোহরাব হাসান বলেন, নির্বাচন কমিশনটা কোথায় এখন সেই প্রশ্ন থেকে যায়। তিন বছর ধরে আমরা দেখছি সরকার কমিশনকে অঙ্গ প্রতিষ্ঠানের বেশি কিছু মনে করে না। কমিশনকে আগে স্বাধীন প্রতিষ্ঠান হিসেবে হতে হবে তারপর না হয় তার অধিকার। স্বাধীন কমিশন হতে হবে তারপর তার অধিকার।

শেখ শহিদুল ইসলাম বলেন, জাতীয় নিবন্ধন কমিশন নামে একটি নতুন স্বাধীন প্রতিষ্ঠান তৈরি করে এই দায়িত্ব দ্রিয়া প্রয়োজন।

শাহদীন মালিক বলেন, বেশ কয়েকদিন বিষয়টি নিয়ে আলাপ আলোচনা চলছে। কিন্তু সরকারের পক্ষ থেকে স্পষ্ট করে জানানো হয়নি কি উদ্দেশ্যে এটা করা হচ্ছে। কমিশনের হাতে থাকলে কি অসুবিধা, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়য়ের কাছে গেলে কি সুবিধা তাও জানানো হয়নি। এটি পরবর্তী নির্বাচনের নতুন তরিকার পদক্ষেপ বলে মনে হচ্ছে।

এম এ মতিন বলেন, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়য়ের ওপর কেউ আস্থা রাখতে পারছেন না। এখন যে ক্ষমতাটা সেটা সাংবিধানিক ক্ষমতা আর আইন করে করে কোনো প্রতিষ্ঠানকে দিলে সেটা সাবর্ডিনেট হয়ে যাবে। বড় ক্ষমতা থাকতে ছোট ক্ষমতায় যাব কেন সেটাও একটা বিষয়।

বাংলাদেশ সময়: ১৬১৬ ঘণ্টা, জুন ০৬, ২০২১
ইইউডি/এএটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।