ঢাকা, শুক্রবার, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

নির্বাচন ও ইসি

নির্বাচনী সহিংসতায় প্রাণ গেল স্বতন্ত্র চেয়ারম্যান প্রার্থীর, গুলিবিদ্ধ ১০

ডিষ্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯১০ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১১, ২০২১
নির্বাচনী সহিংসতায় প্রাণ গেল স্বতন্ত্র চেয়ারম্যান প্রার্থীর, গুলিবিদ্ধ ১০

পাবনা: পাবনা সদর উপজেলার ভাঁড়ারা ইউনিয়ন পরিষদে (ইউপি) নির্বাচনী সংঘর্ষে ইয়াসিন আলম (৪০) নামে এক স্বতন্ত্র চেয়ারম্যান প্রার্থী নিহত হয়েছেন। সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধ আরও ১০ জন পাবনা জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন।

তারা হলেন- ভাড়ারা গ্রামের রিয়াদ হোসেন (২২), তুহিন আহমেদ (২৩), আব্দুর রহিম (৩৩), হোসেন আলী (৫০), রুবেল হোসেন (৩০), নলদহ গ্রামের আল্লেক শেখ (৪০), জসিম উদ্দিন (৩৫), আবু তালেব (৩২), তুহিন হোসেন (২৭) আব্দুল্লাহ (৩৫), লালু শেখ (৩৩) মোস্তফা (৪০) ও আল আমিন (২৮)।

এদিকে চেয়ারম্যান প্রার্থী নিহতের ঘটনায় ওই ইউপিতে আগামী ২৬ ডিসেম্বর অনুষ্ঠেয় নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদের ভোট স্থগিত করেছে নির্বাচন কমিশন।

পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, শনিবার (১১ ডিসেম্বর) সকালে স্বতন্ত্র চেয়ারম্যান প্রার্থী সুলতান মাহমুদের (ঘোড়া মার্কা) সমর্থকরা নির্বাচনী প্রচারণায় বের হন। এ সময় আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী ও বর্তমান চেয়ারম্যান আবু সাঈদ খানের লোকজন বাধা দিলে সংঘর্ষ ও গোলাগুলি শুরু হয়। এ সময় সুলতান মাহমুদের চাচাতো ভাই স্বতন্ত্র আনারস প্রতীকের চেয়ারম্যান পার্থী ইয়াসিন আলমকে কুপিয়ে গুরুতর জখম করে সশস্ত্র সন্ত্রাসীরা। এ ঘটনায় উভয় পক্ষের অন্তত ২০ জন গুরুতর আহত হন। তাদের উদ্ধার করে পাবনা জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। অবস্থার অবনতি হওয়ায় তাদের মধ্যে ছয়জনকে রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়। রাজশাহী নেওয়ার পথে নাটোরের বনপাড়া গুরুদাসপুর পৌঁছালে মারা যান ইয়াসিন আলম।

স্বতন্ত্র চেয়ারম্যান প্রার্থী সুলতান মাহমুদ খান বলেন, শুক্রবার (১০ ডিসেম্বর) রাত ১০টার পরে আমার হয়ে যারা প্রচারণা করেছেন তাদের মধ্যে চার-পাঁচজনের বাড়িতে গিয়ে সাঈদ চেয়ারম্যানসহ ১০-১৫ জন গুলি চালিয়েছেন। আমার পক্ষে প্রচারণা না চালানোর জন্য হুমকিও দেওয়া হয়। তখন থেকেই এলাকায় আতঙ্ক সৃষ্টি হয়। পরে শনিবার সকালে ওই এলাকায় আমরা ভোট চাইতে ও আহত সমর্থকদের দেখতে গেলে সাঈদ চেয়ারম্যানের লোকজন আমার সমর্থকদের ওপর অতর্কিতে হামলা এবং গুলি চালায়।

এদিকে আওয়ামী লীগের প্রার্থী আবু সাঈদ খান অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, ‘শুক্রবার রাতে আমার লোকজন নৌকায় ভোট চাইতে গেলে কালাম মেম্বরকে সুলতানের লোকজন হাতুড়িপেটা করেন। সকালে আমি তাকে দেখতে যাই। ফিরে আসার পথে কোলাদী ইন্দ্রারা মোড়ে এলে জয় বাংলা শ্লোগান দিয়ে সুলতানের লোকজন আমাদের ওপর গুলি করে। এ সময় আমাকে চারিদিক থেকে ঘিরে ধরলে আমার ছোট ভাই পায়ে গুলিবিদ্ধ হয়। এ সময় আমি পাশের ড্রেনে লাফিয়ে না পড়লে আমাকে তারা হত্যা করত। এ ঘটনায় আমার কয়েকজন সমর্থক গুলিবিদ্ধ ও বেশ কয়েক জন আহত হয়েছেন। যাদের পাবনা জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য ভর্তি করা হয়েছে। সুলতান এলাকায় ত্রাসের রাজত্ব কায়েক করতে যাচ্ছেন। জাসদ নেতা সর্বহারা নকসালদের এলাকায় এনে আমাকে হত্যার জন্য, আর নির্বাচনকে নষ্ট করা জন্য এই হামলা করেছে। ভয় দেখিয়ে তার পক্ষে সমর্থন নেওয়ার চেষ্টা করছে।

অপরদিকে সুলতান মাহমুদ অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, ‘নির্বাচনে হেরে যাওয়ার আশঙ্কায় প্রতীক পাওয়ার পর থেকে নৌকার লোকজন ভোট চাইতে দিচ্ছে না। আমি আর ভোট চাই না, স্বজনদের প্রাণ ফেরত চাই। দুপরে নিহত ইয়াসিনের মরদেহ কোলাদী গ্রামে পৌঁছলে ইয়াসিন ও সুলতানের সমর্থকরা বিক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে। আওরঙ্গবাদ এলাকায় আবু সাঈদের সমর্থকদের বেশ কয়েকটি বাড়িতেও হামলা চালায় তারা। হোসেনের দোতলা বাড়িতে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করে বিক্ষুব্ধরা। পরে পুলিশ এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। বিকেলে ইয়াসিনের মরদেহ নিয়ে শহরে বিক্ষোভ মিছিল করে দুই স্বতন্ত্র প্রার্থীর সমর্থকরা।

পাবনা সদর সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার রোকন-উজ-জামান বলেন, ‘ভাড়ারা ইউনিয়নে আওয়ামী লীগ ও বিদ্রোহী প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষ ও গোলাগুলির ঘটনা ঘটেছে। অন্তত ৮-১০ জন গুলিবিদ্ধসহ আহত হয়েছে বলে জানতে পেরেছি। কয়েকজনকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় রামেকে পাঠানো হয়েছে। এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। হামলায় জড়িত সন্দেহে একটি বিদেশি রিভলবার ও দেশীয় অস্ত্রসহ কয়েকজনকে আটক করা হয়েছে। পরিস্থিতি বর্তমানে স্বাভাবিক রয়েছে।

পাবনা সদর ইউপির রিটার্নিং কর্মকর্তা ও সদর উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা কায়সার আহম্মেদ বলেন, বৈধ চেয়ারম্যান প্রার্থী নিহত হওয়ায় ২০১০ সালের ইউপি নির্বাচনী বিধিমালা অনুসারে ভাড়ারা ইউনিয়নে ওই পদে নির্বাচন স্থগিত করা হয়েছে। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি বিবেচনা করে সাধারণ ও সংরক্ষিত সদস্য পদে নির্বাচন করা হবে কিনা সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত পরে জানানো হবে।

বাংলাদেশ সময়: ১৮৫৯ ঘণ্টা, ১১ ডিসেম্বর, ২০২১
এমএমজেড

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।