ঢাকা: আসন্ন নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন (নাসিক) নির্বাচনে মেয়র ও কাউন্সিল পদে ব্যয়সীমা নির্ধারণ করে দিয়েছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। এ ক্ষেত্রে মেয়র পদে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীরা সবাই সর্বোচ্চ ২১ লাখ টাকা ব্যয় করতে পারবেন।
ইসির নির্বাচন পরিচালনা শাখার উপ-সচিব মো. আতিয়ার রহমান জানান, রিটার্নিং কর্মকর্তাকে এ সংক্রান্ত নির্দেশনা পাঠানো হয়েছে। তিনি প্রার্থীদের বিষয়টি অবহিত করবেন।
নির্বাচন ব্যয় বলতে প্রচারপত্র বা প্রকাশনার মাধ্যমে অথবা অন্য কোনোভাবে ভোটারদের নিকট কোনো প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীর অভিমত, লক্ষ্য বা উদ্দেশ্য উপস্থাপনের জন্য ব্যয়িত অর্থসহ তার নির্বাচন পরিচালনার জন্য দান, ঋণ, অগ্রিম, জমা বা অন্য কোনোভাবে পরিশোধিত অর্থ ‘নির্বাচনী ব্যয়' বলে গণ্য হবে। তবে মনোনয়নপত্র দাখিলের সময় প্রদত্ত জামানত এর অন্তর্ভুক্ত হবে না।
একজন প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী তার নির্বাচনী এজেন্ট ব্যতীত অন্য কোনো ব্যক্তির মাধ্যমে নির্বাচনী ব্যয় বাবদ কোনো অর্থ ব্যয় করতে পারবেন না। তবে ব্যক্তিগত খরচ ও আনুষঙ্গিক অন্য খরচ করতে পারবেন।
মেয়র প্রার্থীদের ব্যয়সীমা
মেয়র পদে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী তার নির্বাচনের উদ্দেশ্যে-ব্যক্তিগত খরচ বাবদ, ৫ লাখ এক থেকে ১০ লাখ ভোটার থাকলে সর্বোচ্চ ১ লাখ টাকা ব্যয় করতে পারবেন। এছাড়া নির্বাচনি ব্যয় বাবদ একই পরিমাণ ভোটার থাকলে সর্বোচ্চ বিশ লাখ টাকা করতে পারবেন।
নাসিক নির্বাচনে ভোটার রয়েছেন ৫ লাখ ১৭ হাজার ৩৬১ জন। তাই মেয়র প্রার্থীরা ব্যক্তিগত ও ভোটের কাজে মোট ২১ লাখ টাকা ব্যয় করতে পারবেন।
কাউন্সিলর প্রার্থীর ব্যয়সীমা
এই পদে প্রার্থীরা ব্যক্তিগত খরচ বাবদ, অনধিক ১৫ হাজার ভোটার সংবলিত ওয়ার্ডের ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ ১০ হাজার টাকা, ১৫ হাজার এক থেকে ৩০ হাজার ভোটার সংবলিত ওয়ার্ডের ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ ২০ হাজার টাকা, ৩০ হাজার এক থেকে ৫০ হাজার ভোটার সংবলিত ওয়ার্ডের ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ ৩০ হাজার এবং ৫০ হাজার এক ও তদূর্ধ্ব ভোটার সংবলিত ওয়ার্ডের ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ ৫০ হাজার টাকা ব্যয় করতে পারবেন।
এছাড়া নির্বাচনী ব্যয় বাবদ অনধিক ১৫ হাজার ভোটার সংবলিত ওয়ার্ডের ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ ১ লাখ টাকা, ১৫ হাজার এক থেকে ৩০ হাজার ভোটার সংবলিত ওয়ার্ডের ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ ২ লাখ টাকা, ৩০ হাজার এক থেকে ৫০ হাজার ভোটার সংবলিত ওয়ার্ডের ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ ৪ লাখ টাকা এবং ৫০ হাজার এক ও তদূর্ধ্ব ভোটার সংবলিত ওয়ার্ডের ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ ৬ লাখ টাকা ব্যয় করতে পারবেন।
২৭টি ওয়ার্ড নিয়ে নারায়ণগঞ্জ সিটি গঠিত। এতে সর্বনিম্ন সাড়ে ৫ হাজার ভোটারের ওয়ার্ড যেমন রয়েছে, তেমনি রয়েছে ৭৬ হাজার ভোটারের ওয়ার্ডও।
তাই ওয়ার্ড ভেদে কাউন্সিলর প্রার্থীরা সর্বনিম্ন ১ লাখ ১০ হাজার টাকা থেকে সর্বোচ্চ সাড়ে ৬ লাখ টাকা ব্যয় করতে পারবেন।
প্রার্থীদের প্রতিটি নির্বাচনী এজেন্ট বা যেক্ষেত্রে প্রার্থী স্বয়ং তার নির্বাচনী এজেন্ট, সেক্ষেত্রে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী ব্যক্তিগত খরচ ব্যতীত সব নির্বাচনী ব্যয়ের অর্থ তফসিলী ব্যাংকের নির্ধারিত অ্যাকাউন্ট থেকে ব্যয় করতে হবে।
প্রার্থীদের নির্বাচনী ব্যয়ের বিবরণী নির্বাচনের ফলাফল গেজেট আকারে প্রকাশের ৩০ দিনের মধ্যে রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে জমা দিতে হবে। কোনো প্রার্থী এসব নির্দেশনা না মানলে ছয় মাস থেকে সাত বছর কারাদণ্ডে দণ্ডিত করার বিধান রয়েছে আইনে।
নাসিক নির্বাচনে প্রার্থিতা প্রত্যাহার শেষে মেয়র পদে ছয়জন, সংরক্ষিত নারী ওয়ার্ডে ৩৪ জন এবং সাধারণ ওয়ার্ড কাউন্সিলর পদে ১৪৫ জন প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী রয়েছেন।
মেয়র পদে ছয় প্রার্থী হলেন- আওয়ামী লীগের সেলিনা হায়াৎ আইভী, খেলাফত মজলিসের এবিএম সিরাজুল মামুন, স্বতন্ত্র থেকে বিএনপি নেতা তৈমুর আলম খন্দকার, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের মাও. মো. মাছুম বিল্লাহ, বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলনের মো. জসীম উদ্দিন ও বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টির মো. রাশেদ ফেরদৌস।
ইসির নির্বাচন পরিচালনা শাখার কর্মকর্তারা জানান, ২০১১ সালে সিটি করপোরেশন হিসেবে যাত্রা শুরুর পর এবার হচ্ছে তৃতীয় নির্বাচন। প্রথমবার ৯টি ওয়ার্ডে ইভিএমে, বাকিগুলোয় ব্যালট পেপারে ভোট হয়। ২০১৬ সালে সব কেন্দ্রে ভোট হয় ব্যালট পেপারে এবং এবার ভোট হবে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনে।
প্রথমবার নির্দলীয় প্রতীকে ভোট হয় এ সিটিতে। দলীয় প্রতীকে স্থানীয় নির্বাচন চালুর পর এটি দ্বিতীয় নির্বাচন হতে যাচ্ছে।
বাংলাদেশ সময়: ২০২৩ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২, ২০২১
ইইউডি/জেএইচটি