সিলেট: বিচ্ছিন্ন ঘটনার মধ্য দিয়ে শেষ হলো সিলেট জেলার ১৮ ইউনিয়নে ভোটগ্রহণ।
বুধবার (৫ জানুয়ারি) সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত টানা ভোটগ্রহণ চলে।
সিলেটের কানাইঘাটে শান্তিপূর্ণ নির্বাচন হলেও বিশৃঙ্খলা হয়েছে জকিগঞ্জ উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নে।
সিলামারা ব্যালটসহ দুই রিটানিং কর্মকর্তাকে আটক করা হয়েছে। তারা হলেন- কাজলসার ও বারোহালের দুই ইউনিয়নের রিটানিং কর্মকর্তা ও উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আরিফুল হক এবং জকিগঞ্জ সদর উপজেলার নির্বাচন অফিসার ও নির্বাচন সমন্বয়কারী সাদমান সাকিব।
জানা গেছে, গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যরা প্রায় ১ হাজার ৪০০ ব্যালট পেপার তাদের সরকারি গাড়ি থেকে জব্দ করে। এ ঘটনায় তাদের দুজনকে আটক করা হয়। ঘটনার খবর পেয়ে জেলা প্রশাসকসহ পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকতারা ঘটনাস্থলে ছুটে যান।
ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেন সিলেটের সিনিয়র জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা শুক্কুর মাহমুদ। তিনি বলেন, আটক দুই রিটানিং কর্মকর্তার ব্যবহৃত একটি গাড়ি থেকে লুজ ব্যালটসহ বেশ কিছু ব্যালট জব্দ করা হয়েছে। তিনি ৮০০ ব্যালটের বিষয়ে জানতে পেরেছেন। এর মধ্যে ৪০০ লুজ ব্যালট রয়েছে। তবে উদ্ধার করা পুরো ব্যালটের সংখ্যাটা তার জানা নেই। এ ঘটনায় কাজলসার পুরো ইউনিয়নের নির্বাচন স্থগিত করা হয়েছে। আটকদের থানা হাজতে রাখা হয়েছে।
সিলেটের পুলিশ সুপার (এসপি) ফরিদ উদ্দিন বাংলানিউজকে বলেন, নির্বাচনে রির্টানিং কর্মকর্তার দায়িত্বে থাকা দুইজনকে আটক করা হয়েছে। তাদের হেফাজতে থাকা এক হাজার ৬৫৫টি ব্যালট জব্দ করা হয়। এরমধ্যে ৪ শতাধিক ব্যালটে সিলমারা ছিল। এ বিষয়ে জেলা নির্বাচনী কর্মকর্তা বাদী হয়ে মামলা দায়ের করবেন। এ ঘটনায় কাজলশার পুরো ইউনিয়নের নির্বাচন স্থগিত করা হয়েছে।
এ বিষয়ে পুলিশের উচ্চপদস্থ আরেক কর্মকর্তা বলেন, ব্যালটের মধ্যে নৌকা, সংরক্ষিত ও সাধারণ সদস্য পদে প্রার্থীদের সিল মারা ছিল। জব্দকৃত ব্যালটগুলো কৃষি কর্মকর্তার ব্যবহৃত সরকারি গাড়িতে পাওয়া যায়। ওই গাড়ি নিয়ে দুই রিটানিং কর্মকর্তা ভোট শেষ হওয়ার আগে কেন্দ্রের দিকে যাচ্ছিলেন।
এদিকে, ব্যালট বাক্স ছিনতাই, সাংবাদিক ও পুলিশকে মারধরের ঘটনাও ঘটেছে এই উপজেলার কয়েকটি ইউনিয়নে। সাংবাদিক লাঞ্ছিতের ঘটনায় থানায় অভিযোগ করা হয়েছে।
যদিও সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন হওয়ার দাবি করেছেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সুমী আক্তার।
জানা গেছে, বুধবার (৫ জানুয়ারি) দুপুর সোয়া ৩টার দিকে সিলেটের জকিগঞ্জ উপজেলার সুলতানপুর ইউনিয়নের গনিপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে ব্যালট বাক্স ছিনতাই করে বাক্স ভেঙে ব্যালট পেপার পুকুরে ফেলে দেওয়ার খবর পাওয়া যায়। পরে ওই কেন্দ্রের ভোটগ্রহণ সাময়িকভাবে স্থগিত করা হয়। বিকেল পৌনে ৪টা পর্যন্ত ওই কেন্দ্রের ভোটগ্রহণ স্থগিত রাখা হয়।
এছাড়া জাল ভোট দেওয়ার সময় দেখে ফেলায় সাংবাদিকদের মারধর করেছেন নৌকার প্রার্থী-সমর্থকরা। বুধবার বিকেলে জকিগঞ্জ উপজেলার সদর ইউনিয়নের ভরম সুলতানপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে এ ঘটনা ঘটে। এ সময় আহত হন স্থানীয় একটি দৈনিকের স্টাফ রিপোর্টার এটিএম তোরাব ও সাংবাদিক আজমল আলী।
নৌকার প্রার্থী মাওলানা আফজল হোসেনের পক্ষের সমর্থক ওই কেন্দ্রে জাল ভোট দেওয়ার চেষ্টাকালে সাংবাদিকদের বের হয়ে যাওয়ার জন্য বলেন। এ সময় সাংবাদিকরা কেন্দ্রে অবস্থান করায় নৌকার প্রার্থীর সমর্থক জুয়েল আহমদ ও সুহেল আহমদসহ কয়েকজন হামলা করেন। সেখানে এটিএম তোরাবকে কিলঘুষি মেরে রক্তাক্ত করেন এবং আজমল আলীও আহত হন।
জকিগঞ্জ থানার ডিউটি অফিসার উপপরিদর্শক (এসআই) আমির খসরু বলেন, হামলায় আহত সাংবাদিক এটিএম তোরাব থানায় লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন।
অপরদিকে, সুনামগঞ্জের ধর্মপাশা উপজেলার দক্ষিণ বংশিকুন্ডা ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে দায়িত্বরত পুলিশ কনস্টেবল আখলাকুর ইসলামকে (৫০) লাঞ্ছিতের অভিযোগ উঠেছে। নৌকা প্রার্থীর এজেন্ট ছাত্রলীগ কর্মী আনিসুল ইসলাম স্থানীয় গড়াকাটা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের নারী ভোটকেন্দ্রে এই ঘটনা ঘটে। পরে স্কুলে থাকা প্রিসাইটিং অফিসার তাৎক্ষণিক ঘটনাস্থলে এসে বিষয়টি মীমাংসা করে দেন।
প্রসঙ্গত, বুধববার সিলেট জেলার ১৮টিসহ বিভাগের ৭৫টি ইউনিয়নে ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়।
বাংলাদেশ সময়: ১৮২৩ ঘণ্টা, জানুয়ারি ৫, ২০২২
এনইউ/জেএইচটি