ঢাকা, শুক্রবার, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৮ রমজান ১৪৪৫

নির্বাচন ও ইসি

নির্বাচনী লড়াইয়ে ২৮ ইঞ্চির মশু

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০২২ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১৫, ২০২২
নির্বাচনী লড়াইয়ে ২৮ ইঞ্চির মশু মোশাররফ হোসেন মশু

কুড়িগ্রাম: মোশাররফ হোসেন মশুর (২৬) উচ্চতা মাত্র ২৮ ইঞ্চি। বয়সের সঙ্গে বাড়েনি তার উচ্চতা।

জাতীয় পরিচয় পত্র (এনআইডি) অনুযায়ী তার জন্ম ১৯৯৫ সালের ২০ আগস্ট। এখন ওজন ৩৮ কেজি।

খর্বাকৃতির সেই মশুই এখন ছোট ছোট পায়ে আর দশ জনের মতই আসন্ন ৬ষ্ঠ ধাপের ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচনে ভোট চেয়ে দিন-রাত চষে বেড়াচ্ছেন নিজ এলাকা।

কুড়িগ্রামের ভূরুঙ্গামারী উপজেলা সদর ইউনিয়নের ৩ নং ওয়ার্ডে সদস্যপদে ভ্যানগাড়ি প্রতীক নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন অপর পাঁচ প্রার্থীর সঙ্গে। ভোটারদের দুয়ারে দুয়ারে ভোট প্রার্থনার পাশাপাশি প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন এলাকার উন্নয়নের। তার জন্য নিজেদের টাকায় ব্যানার, পোস্টার, লিফলেট বানিয়ে প্রচার চালিয়ে যাচ্ছেন স্থানীয় ভোটাররাও।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, ২৮ ইঞ্চি উচ্চতার মশু উপজেলার সদর ইউনিয়নের ৩ নম্বর ওয়ার্ডের বাগভান্ডার কদমতলা গ্রামের হরমুজ আলী ও চায়না দম্পতির ছেলে। আট বছর বয়সেই ইন্তেকাল করেন তার মা। বাবা জীবিত থাকলেও মানসিক ভারসাম্যহীন।

দারিদ্র আর অর্থ সঙ্কটে চিকিৎসা তো দূরের কথা, ঠিকমতো পড়ালেখাই করতে পারেননি। অনেক কষ্টে পড়াশুনা করেছেন অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত। কিন্তু তার প্রখর ইচ্ছা শক্তিই দেখিয়েছে জনপ্রতিনিধি হয়ে এলাকার মানুষের সেবা করার স্বপ্ন। সেই স্বপ্ন দেখা থেকেই আসন্ন ইউপি নির্বাচনে সদস্য পদপ্রার্থী হিসেবে প্রার্থী হয়েছেন মশু। তার এমন দৃঢ় মনোবল দেখে বিষ্ময় প্রকাশ করেছেন স্থানীয়রা। এখন অপেক্ষার পালা সেই মহেন্দ্রক্ষণের।

ভূরুঙ্গামারী সদর ইউনিয়নের ৩ নং ওয়ার্ডের বাসিন্দারা বাংলানিউজকে জানান, আর্থিক সঙ্কট থাকলেও অদম্য ইচ্ছা শক্তিই মশুকে এগিয়ে নেবে এবং নির্বাচনে জয়ী হয়ে এলাকার উন্নয়নে নিজের স্বপ্নের বাস্তবায়ন ঘটাবেন। শারীরিক সীমাবদ্ধতাকে দূরে ঠেলে সাহসের সঙ্গে ভোট যুদ্ধে নেমে সমর্থকদের নিয়ে পায়ে হেঁটেই ভোটারদের বাড়ি বাড়ি যাচ্ছেন।
নিজের অনুভুতি প্রকাশ করতে গিয়ে বাংলানিউজকে মোশাররফ হোসেন মশু জানান, শারীরিক সীমাবদ্ধতার কারণে আমাকে সবাই ভালোবাসেন। আমি দরিদ্র ও অর্থনৈতিকভাবে দুর্বল হওয়ায় এলাকার অসহায় মানুষের দুঃখকষ্ট ভালো বুঝি। এ কারণে সেই মানুষগুলোর অধিকার ফিরিয়ে দিতেই আমার নির্বাচন করা।

তিনি আরও জানান, আমার টাকা-পয়সা নেই, ভোটাররাই টাকা খরচ করে আমার নির্বাচনী প্রচার চালাচ্ছেন। আমি বিজয়ী হব ইনশাল্লাহ্। আর নির্বাচিত হলে জনগণের সেবায় নিজেকে উৎসর্গ করব।

রিটার্নিং কর্মকর্তা ও ভূরুঙ্গামারী উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা আনোয়ার হোসেন বাংলানিউজকে জানান, মোশাররফ হোসেন মশু শারীরিক প্রতিবন্ধী হলেও নির্বাচনে অংশ নিতে তার আইনগত কোনো বাধা নেই।

বাংলাদেশ সময়: ২০২০ ঘণ্টা, ১৫ জানুয়ারি, ২০২২
এফইএস/এমএমজেড

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।