রংপুর: সাড়ে ৪ লাখ টাকার বিনিময়ে এক ইউপি সদস্য প্রার্থীকে ভোটে জেতানোর পরিকল্পনার অডিও ফাঁসের ঘটনায় রংপুরের মিঠাপুকুর উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা আব্দুল হান্নানকে স্ট্যান্ড রিলিজ করা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার (৩ ফেব্রুয়ারি) নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের সিনিয়র সহকারী সচিব আব্দুল্যাহ আল মোতাহসিম স্বাক্ষরিত এক প্রজ্ঞাপনে এ তথ্য জানানো হয়।
প্রজ্ঞাপনে পীরগাছা উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা শোয়েব সিদ্দিকীকে মিঠাপুকুর নির্বাচন অফিসে অতিরিক্ত দায়িত্ব প্রদান করা হয়েছে। এছাড়া রিটার্নিং কর্মকর্তার দায়িত্বে থাকা মিঠাপুকুর উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা গোলাম রব্বানিকে দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে।
রংপুর আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা এস এম সাহাতাব হোসেন বিষয়টি বাংলানিউজকে নিশ্চিত করেছেন।
এর আগে বৃহস্পতিবার দুপুরে ওই নির্বাচন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে অডিও ক্লিপ সংযুক্ত করে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে চিঠি দেন আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা জি এম সাহাতাব উদ্দিন। এরই পরিপ্রেক্ষিতে নির্বাচন সচিবালয় থেকে রাষ্ট্রপতির আদেশক্রমে এ প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, আগামী ৭ ফেব্রুয়ারি মিঠাপুকুর উপজেলার ১৭টি ইউনিয়নে ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। এ নির্বাচনে বালারহাট ইউপির মেম্বার প্রার্থী রফিকুল ইসলামকে জিতিয়ে দেওয়ার জন্য সাড়ে ৪ লাখ টাকার চুক্তি করেন উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা আবদুল হান্নান। বিষয়টি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে তুমুল সমালোচনা শুরু হয়। নির্বাচনের মাত্র চার দিন আগে এমন কাণ্ডে বিষয়টি ভাইরাল হয়ে যায়।
ফাঁস হওয়া অডিও ক্লিপের কথোপকথনে শোনা যায়, রফিকুল ইসলাম নামের ওই প্রার্থীকে জেতাতে ভোটকেন্দ্র থেকে প্রতিপক্ষের লোকজনকে বের করে দেওয়া এবং ভোটের আগেই অন্তত ৩০০ ব্যালট পেপার সরবরাহের বিনিময়ে টাকা চেয়েছেন নির্বাচন কর্মকর্তা।
এসময় উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা ওই প্রার্থীকে বোঝান, নির্বাচন করতে গেলে প্রতিদিনই ১০ হাজার করে টাকা ব্যয় হবে। তাতে পাঁচ থেকে ১০ লাখ টাকা খরচ হবে। এতে নির্বাচিত হওয়ার কোনো গ্যারান্টি নেই। তাই সেটি না করে তার সঙ্গে ৫ লাখ টাকার চুক্তি করলে তিনি যেভাবেই হোক জিতিয়ে দেবেন। এ ক্ষেত্রে তিনি গ্যারান্টি হিসেবে জেতাতে না পারলে টাকা ফেরত দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেন।
শুধু তাই নয়, প্রিসাইডিং কর্মকর্তা, সহকারী প্রিসাইডিং কর্মকর্তা ও পুলিশ প্রশাসনের সহযোগিতায় তাকে জিতিয়ে দেওয়ার কথাও জানান নির্বাচন কর্মকর্তা আব্দুল হান্নান।
মেম্বার পদপ্রার্থী (ফুটবল প্রতীক) রফিকুল ইসলাম আর্থিক লেনদেনের বিষয়টি স্বীকার করেছেন। তিনি বলেন, চুক্তি অনুযায়ী এলাকার একজন শিক্ষকের মাধ্যমে দুই দফায় ওই নির্বাচন কর্মকর্তাকে তিনি সাড়ে ৪ লাখ টাকা দিয়েছেন। তবে অডিও ক্লিপ ফাঁস হওয়ায় বিস্ময় প্রকাশ করেন রফিকুল ইসলাম।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে অভিযুক্ত নির্বাচন কর্মকর্তা আব্দুল হান্নান বলেন, ‘এসব শোনার সময় নাই। অডিও ক্লিপ নিয়ে নির্বাচন কমিশনারের কাছে আমার বিরুদ্ধে অভিযোগ করেন। ’
আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা জিএম সাহাতাব উদ্দিন বাংলানিউজকে বলেন, আব্দুল হান্নানের ফাঁস হওয়া কলরেকর্ডের বিষয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে। সেখানে তাৎক্ষণিকভাবে তাকে কুড়িগ্রামে বদলি করা হয়েছে। এছাড়া পীরগাছা নির্বাচন কর্মকর্তাকে অতিরিক্ত দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।
আরও পড়ুন:
নির্বাচনে জেতাতে সাড়ে ৪ লাখ টাকায় চুক্তি!
বাংলাদেশ সময়: ০১৩৫ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ৪, ২০২২
জেএইচটি