ঢাকা: সেনা সমর্থিত ১/১১ সরকারের সময় দায়িত্ব পাওয়া নির্বাচন কমিশনার মুহাম্মদ ছহুল হোসাইন মেয়াদ শেষে হতে চেয়েছিলেন সংসদ সদস্য। আর দায়িত্ব ছাড়ার ছয় বছর পর একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে চেয়েছিলেন আওয়ামী লীগের মনোনয়ন।
২০১৮ সালে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সময় সিলেট-১ (সিটি ও সদর উপজেলা) আসনের জন্য তিনি আওয়ামী লীগের মনোনয়নপত্র কিনেছিলেন। বিভিন্ন গণমাধ্যমে সে সময় ফলাও করে প্রচারিত হয় খবরটি।
তবে ওই আসনে তাকে মনোনয়ন দেয়নি আওয়ামী লীগ। মনোনয়ন পেয়ে নির্বাচিত হয়েছিলেন বর্তমান পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আবদুল মোমেন।
শনিবার (০৫ ফেব্রুয়ারি) সরকার ছহুল হোসাইনকে সবগঠিত সার্চ কমিটিতে স্থান দেওয়ায় বিষয়টি আবারও উঠে এসেছে। এ নিয়ে গণমাধ্যমকে নানা প্রশ্নের জবাবও দিয়েছেন ছহুল হোসাইন।
আওয়ামী লীগের মনোনয়ন চাওয়ায় তার নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন দেখা দেবে কিনা, এ প্রসঙ্গে তিনি বলেছেন- নির্বাচন করতে চেয়েছি বলেই আওয়ামী লীগের হয়ে গেলাম, বিষয়টি এমন নয়। যখন নির্বাচন করতে চেয়েছিলাম, তখন হলে বিষয়টি ঠিক ছিল। এখন আওয়ামী লীগের সঙ্গে কোনো সম্পর্ক নেই।
বিষয়টি নিয়ে বিরোধী পক্ষগুলো নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন তুলতে পারে বলে জানালে ছহুল হোসাইন বলেন, আমার ক্ষেত্রে এরকম হওয়া ঠিক হবে না। যখন যে কাজ করেছি, বিবেকের কাছে পরিষ্কার থেকে নিরপেক্ষতার সঙ্গে কাজ করেছি। পক্ষপাতদুষ্ট ছিলাম না।
ছহুল হোসাইন জেলা জজ, পরবর্তীকালে এক সময় সরকারের আইন সচিব ছিলেন।
শনিবার (০৫ ফেব্রুয়ারি) প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) ও অন্যান্য নির্বাচন কমিশনারদের নিয়োগ দেওয়ার জন্য সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের বিচারপতি ওবায়দুল হাসানকে সভাপতি করে গঠিত ছয় সদস্যের সার্চ কমিটির প্রজ্ঞাপন জারি করে সরকার।
এতে সদস্য হিসেবে- হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতি এস এম কুদ্দুস জামান, মহা-হিসাব নিরীক্ষক ও নিয়ন্ত্রক মুসলিম চৌধুরী, সরকারি কর্ম কমিশনের (পিএসসি) চেয়ারম্যান সোহরাব হোসাইন, সাবেক নির্বাচন কমিশনার মুহাম্মদ ছহুল হোসাইন এবং কথা সাহিত্যিক অধ্যাপক আনোয়ারা সৈয়দ হককে রাখা হয়েছে।
প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, ‘প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও অন্যান্য নির্বাচন কমিশনার নিয়োগ আইন, ২০২২’ এর ধারা ৩ মোতাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও অন্যান্য নির্বাচন কমিশনারগণের নিয়োগদানের জন্য আইনে বর্ণিত যোগ্যতাসম্পন্ন ব্যক্তিদের নাম সুপারিশ করার লক্ষ্যে অনুসন্ধান (সার্চ) কমিটি গঠন করা হলো।
অনুসন্ধান কমিটি ‘প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও অন্যান্য নির্বাচন কমিশনার নিয়োগ আইন, ২০২২’ মোতাবেক দায়িত্ব ও কার্যাবলী সম্পন্ন করবে। সার্চ কমিটির সাচিবিক দায়িত্ব পালন করবে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ।
আগামী ১৪ ফেব্রুয়ারি কে এম নূরুল হুদার নেতৃত্বাধীন বর্তমান নির্বাচন কমিশনের (ইসি) মেয়াদ শেষ হচ্ছে। নিয়মানুযায়ী, এর আগেই নতুন ইসি গঠন করা হবে। সার্চ কমিটির মাধ্যমে নির্বাচন কমিশনের সদস্যদের মনোনীত করার পর রাষ্ট্রপতি তা চূড়ান্ত করেন। তবে এবার নতুন আইন অনুযায়ী সার্চ কমিটি গঠন করা হলো।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে গত ১৭ জানুয়ারি মন্ত্রিসভার বৈঠকে ‘প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও অন্যান্য নির্বাচন কমিশনার নিয়োগ আইন, ২০২২’ অনুমোদন দেওয়া হয়। গত ২৭ জানুয়ারি বিলটি জাতীয় সংসদে পাসের পর ২৯ জানুয়ারি রাষ্ট্রপতি আইনটিতে সম্মতি দেন। ৩০ জানুয়ারি ‘প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও অন্যান্য নির্বাচন কমিশনার নিয়োগ বিল, ২০২২’ এর গেজেট প্রকাশ করা হয়েছে।
‘প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও অন্যান্য নির্বাচন কমিশনার নিয়োগ আইন, ২০২২’ অনুযায়ী সার্চ কমিটি (অনুসন্ধান কমিটি) গঠন করে দিয়েছেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ।
আইন অনুযায়ী, আপিল বিভাগের একজন বিচারকের নেতৃত্বে ছয় সদস্যের সার্চ কমিটি গঠিত হবে। আইনে বর্ণিত যোগ্যতা-অযোগ্যতা বিবেচনা করে তারা ১০ জনের নাম প্রস্তাব করবেন। ১০ জনের মধ্য থেকেই পাঁচজনকে নিয়ে রাষ্ট্রপতি নতুন নির্বাচন কমিশন গঠন করবেন।
নির্বাচন কমিশনের মেয়াদ হবে দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে পরবর্তী পাঁচ বছর।
বাংলাদেশ সময়: ১৮২৮ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ০৫, ২০২২
ইইউডি/এনএসআর