ঢাকা: আসন্ন জেলা পরিষদ নির্বাচনে পাবলিক প্রসিকিউটররা (পিপি) কোনো পদে প্রার্থী হতে পারবেন না। এমন কেউ মনোনয়নপত্র দাখিল করলে তা বাতিল করে দেবেন রিটার্নিং কর্মকর্তা।
আগামী ১৭ অক্টোবর দেশের ৬১টি জেলা পরিষদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। ইতোমধ্যে মনোনয়নপত্র দাখিলের সময় শেষ হয়েছে। আগামী ১৮ সেপ্টেম্বর প্রার্থীদের দাখিল করা মনোনয়নপত্র বাছাই করবেন রিটার্নিং কর্মকর্তারা। এক্ষেত্রে বিষয়টি আমলে নিয়েই সিদ্ধান্ত দেবেন তারা।
জানা গেছে, রিটার্নিং কর্মকর্তাদের এমনটি একটি নির্দেশনা ইতিমধ্যে পাঠিয়েছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। সম্প্রতি একটি জেলা থেকে রিটার্নিং কর্মকর্তা পিপিদের ক্ষেত্রে করণীয় সম্পর্কে নির্দেশনা চাইলে কমিশন ব্যাখ্যাসহ ওই নির্দেশনা দেন।
ইসির উপ-সচিব মো. আতিয়ার রহমানের সই করা ওই নির্দেশনায় বলা হয়েছে- জেলা ও দায়রা জজ আদালতে কর্মরত বিজ্ঞ পিপিকে (পাবলিক প্রসিকিউটর) সংবিধিবদ্ধ সরকারি কর্তৃপক্ষ কর্তৃক নিয়োগ প্রদান করা হয় এবং ওই পদটি লাভজনক পদ হিসেবে বিবেচিত হয়। জেলা পরিষদ আইন, ২০০০ এর ৬ (২) (ঙ) ধারার বিধান মোতাবেক প্রজাতন্ত্রের কোনো কর্মে লাভজনক পদে সার্বক্ষণিক অধিষ্ঠিত থেকে জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান, সদস্য ও মহিলা সদস্য নির্বাচিত হওয়া অযোগ্য বলে বিবেচিত হবে। তাই জেলা ও দায়রা জজ আদালতে কর্মরত বিজ্ঞ পিপির স্বীয় পদে থেকে জেলা পরিষদ নির্বাচনে অংশগ্রহণের আইনগত কোনো সুযোগ নেই মর্মে নির্বাচন কমিশন সিদ্ধান্ত দিয়েছেন।
জেলা পরিষদ নির্বাচনে রিটার্নিং কর্মকর্তার দায়িত্ব পালন করছেন জেলা প্রশাসক ও আপিল কর্তৃপক্ষ হিসেবে নিয়োজিত রয়েছেন সংশ্লিষ্ট অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার।
তফসিল অনুযায়ী, মনোনয়নপত্র বাছাইয়ের বিরুদ্ধে আপিল কর্তৃপক্ষের কাছে আপিল দায়েরের সময় ১৯ থেকে ২১ সেপ্টেম্বর, আপিল নিষ্পত্তি ২২ থেকে ২৪ সেপ্টেম্বর, প্রার্থিতা প্রত্যাহারের শেষ সময় ২৫ সেপ্টেম্বর। প্রতীক বরাদ্দ ২৬ সেপ্টেম্বর।
ইসির নির্বাচন ব্যবস্থাপনা শাখা জানিয়েছে, চেয়ারম্যান পদে মনোনয়নপত্র দাখিল করেছেন ১৬২ জন, সাধারণ সদস্য পদে ১ হাজার ৯৮৩ জন ও সংরক্ষিত সদস্য পদে মনোনয়নপত্র দাখিল করেছেন ৭১৫ জন।
এছাড়া চেয়ারম্যান পদে ১৯ জেলায় ১৯ জন একক প্রার্থী হিসেবে রয়েছেন, যারা প্রার্থিতা প্রত্যাহার না করলে বিনা প্রতিদ্বিন্দ্বিতায় নির্বাচিত হবেন।
২০০০ সালে তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকার নতুন করে জেলা পরিষদ আইন প্রণয়ন করে। এরপর জোট সরকারের আমলে এ নিয়ে কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। পরবর্তীতে ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ পুনরায় ক্ষমতায় আসার পর ২০১১ সালে প্রশাসক নিয়োগ দিয়ে জেলা পরিষদ পরিচালনা করে। এরপর প্রথমবারের মতো স্থানীয় এ সরকারে নির্বাচন হয় ২০১৬ সালের ২৯ ডিসেম্বর। সে সময় ৬১টি জেলায় (তিন পার্বত্য জেলা বাদে) নির্বাচন হয়েছিল। এরমধ্যে ১৯টি জেলায় চেয়ারম্যান প্রার্থীরা বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছিলেন।
স্থানীয় এ সরকারের মেয়াদ আরও আগেই শেষ হলেও আইন সংশোধনসহ অন্যান্য জটিলতার কারণে ভোটগ্রহণ করতে পারেনি নির্বাচন কমিশন। তাই সরকার থেকে আইনটি সংশোধনের পর গত ১৭ এপ্রিল স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের উপ-সচিব মোহাম্মদ তানভীর আজম ছিদ্দিকী সই করা এক প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে প্রশাসক বসানোর কথা বলা হয়। এতে উল্লেখ করা হয়- দেশের ৬১টি জেলা পরিষদের মেয়াদ পাঁচ বছর পূর্ণ হওয়ায় নির্বাচিত পরিষদগুলো বিলুপ্ত করা হলো।
এ অবস্থায় জেলা পরিষদে প্রশাসক নিয়োগের আগে প্রত্যেক জেলা পরিষদের প্রশাসনিক ও আর্থিক ক্ষমতা পরিচালনার জন্য প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা অথবা ভারপ্রাপ্ত প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তাদের দায়িত্ব অর্পণ করা হয়। জেলা পরিষদে প্রশাসক নিয়োগের বিষয়টি যোগ করে জেলা পরিষদ আইনের সংশোধনী গত ৬ এপ্রিল সংসদে পাস হয়। এরপর সংশোধনীর গেজেট প্রকাশ হয় ১৩ এপ্রিল।
আগের আইন অনুযায়ী, সংশ্লিষ্ট জেলার অধীনে যতগুলো স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠান রয়েছে, সেগুলোর সদস্যরাই জেলা পরিষদ সদস্যদের ভোট দিয়ে নির্বাচিত করতেন। অর্থাৎ সিটি করপোরেশন, উপজেলা, পৌরসভা ও ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান, মেয়র এবং কাউন্সিলররা বা সদস্যরা ভোট দিয়ে জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান, ১৫ জন সদস্য ও পাঁচজন সংরক্ষিত সদস্য নির্বাচিত করতেন। কিন্তু সংশোধীত আইনে জেলা পরিষদের সদস্য সংখ্যা নির্ধারণ করা হয়েছে সংশ্লিষ্ট জেলার উপজেলার সংখ্যার সমান। আর নারী সদস্য সংখ্যা নির্ধারণ করা হয়েছে সংশ্লিষ্ট জেলার উপজেলা চেয়ারম্যানদের মোট সংখ্যার এক-তৃতীয়াংশ। অর্থাৎ একেক জেলা পরিষদের সদস্যের সংখ্যা হবে একেক রকম, সংশোধনের আগে যেটা ২১ জন নিদির্ষ্ট করে দেওয়া ছিল।
আগে পরিষদের মেয়াদ শেষ হলেও পরবর্তী নির্বাচন না হওয়ার পর্যন্ত পূর্বের পরিষদকেই দায়িত্ব পালন করার কথা বলা হয়েছিল আইনে। কিন্তু সংশোধীত আইনে সেটির পরিবর্তে প্রশাসক বসানোর বিধান আনা হয়েছে। সেই ক্ষমতা বলেই স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় প্রশাসক বসানোর আদেশ জারি করেন, যার বলেই এখনো প্রশাসক রয়েছে দায়িত্বে।
এদিকে প্রশাসক বসানোর পরের দিন, স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের উপ-সচিব মোহাম্মদ তানভীর আজম ছিদ্দিকী গত ১৮ এপ্রিল এক চিঠিতে নির্বাচন কমিশনকে দ্রুততম সময়ে নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য বলে। এরপর সীমানা পুনর্ধিারণ করা সাপেক্ষে ভোটের তফসিল দেয় নির্বাচন কমিশন। জেলা পরিষদ (ওয়ার্ডের সীমা নির্ধারণ) বিধিমালা, ২০১৬ অনুযায়ী জেলা ডেপুটি কমিশনার সংশ্লিষ্ট জেলা পরিষদের ‘সীমা নির্ধারণ কর্মকর্তা’ এবং তার মনোনীত উপ-পরিচালক, স্থানীয় সরকার অথবা এডিশনাল ডেপুটি কমিশনার সহকারী সীমা নির্ধারণ কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্বপালন করে থাকেন।
বাংলাদেশ সময়: ০৯৩৬ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১৫, ২০২২
ইইউডি/জেডএ