ঢাকা: আসন্ন জেলা পরিষদ নির্বাচনে সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করার লক্ষ্যে কোনো উন্নয়ন প্রকল্প অনুমোদন, ত্রাণ, অনুদান কার্যক্রম না চালানোর নির্দেশনা দিয়েছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। একই সঙ্গে পরিষদের কোনো কর্মকর্ত-কর্মচারীকে ভোটের কাজে ব্যবহারসহ কোনো সুবিধা নেওয়াও যাবে না।
ইসির উপ-সচিব মো. আতিয়ার সম্প্রতি স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের স্থানীয় সরকার বিভাগের সচিবের কাছে নির্দেশনাটি পাঠিয়েছেন।
এতে উল্লেখ করা হয়েছে, জেলা পরিষদ (নির্বাচন আচরণ) বিধিমালা, ২০১৬ এর বিধি ৪ অনুযায়ী নির্বাচন-পূর্ব সময়ে অর্থাৎ নির্বাচনী তফসিল ঘোষণার তারিখ থেকে নির্বাচনের ফলাফল সরকারি গেজেটে প্রকাশের তারিখ পর্যন্ত কোনো প্রার্থী বা প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী বা তার পক্ষ থেকে অন্য কোনো ব্যক্তি, সংস্থা বা প্রতিষ্ঠান বা রাজনৈতিক দল নির্বাচন-পূর্ব সময়ে সংশ্লিষ্ট জেলা পরিষদ বা জেলা পরিষদসমূহের এলাকায় অবস্থিত কোনো প্রতিষ্ঠানে প্রকাশ্যে বা গোপনে কোনো প্রকার চাঁদা বা অনুদান দিতে বা দেওয়ার অঙ্গীকার করতে পারবেন না। এ বিধিমালার বিধান লঙ্ঘন দণ্ডনীয় অপরাধ হিসেবে গণ্য হবে এবং এরকম অপরাধের জন্য সংশ্লিষ্টরা উল্লিখিত আচরণ বিধিমালার বিধি ৩১ অনুযায়ী দণ্ডনীয় হবেন।
জেলা পরিষদ নির্বাচনকে প্রভাবমুক্ত রাখার লক্ষ্যে নির্বাচন কমিশন জেলা পরিষদ নির্বাচন সমাপ্ত না হওয়া পর্যন্ত নির্বাচনী এলাকায় কোনো প্রার্থী সংশ্লিষ্ট জেলা পরিষদের কোনো সম্পত্তি তথ্য অফিস, যানবাহন, মোবাইল ফোন, টেলিফোন, ওয়াকিটকি বা অন্য কোনো সুযোগ সুবিধা নির্বাচনের কাজে ব্যবহার করতে পারবেন না মর্মে নির্বাচন কমিশন নির্দেশনা দিয়েছে। এমনকি মাশুল দিয়েও এগুলো ব্যবহার করা যাবে না। জেলা পরিষদের কোনো কর্মকর্তা/কর্মচারীকে কোনো অবস্থাতেই নির্বাচনের কাজে ব্যবহার করা যাবে না। কোনো প্রার্থী জেলা পরিষদের দরপত্র আহ্বান, গ্রহণ কিংবা বাতিলের বিষয়েও সিদ্ধান্ত নিতে পারবেন না।
এছাড়া জেলা পরিষদ (নির্বাচন আচরণ) বিধিমালা, ২০১৬ এর বিধি ২৫ অনুসারে নির্বাচন-পূর্ব সময়ে জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান বা প্রশাসক সংশ্লিষ্ট নির্বাচনী এলাকা কোনো প্রকল্পের অনুমোদন ঘোষণা বা ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন কিংবা ফলক উন্মোচন করতে পারবেন না। ওই বিধি অনুসারে জেলা পরিষদের তহবিল অবমুক্ত করতে পারবেন না এবং উন্নয়নমূলক কোনো প্রকল্পও অনুমোদন বা ইতোপূর্বে অনুমোদিত কোনো প্রকল্পে অর্থ অবমুক্ত করতে পারবেন না।
নির্বাচনের কার্যক্রম সমাপ্ত না হওয়া পর্যন্ত নির্বাচনী এলাকায় অনুদান/ত্রাণ বিতরণ সংক্রান্ত কার্যক্রম বা উন্নয়নমূলক কোনো প্রকল্প অনুমোদন করা যাবে না। তবে পূর্বে অনুমোদিত ও চলমান প্রকল্পসমূহের অর্থ অবমুক্ত, অর্থছাড় ও বিল পরিশোধ, অনুমোদিত প্রকল্পের প্রশাসনিক আদেশ জারি, চলমান প্রকল্পের মেয়াদ বৃদ্ধি, প্রকল্পের খাত পরিবর্তন (রাজস্ব-মূলধন) এবং অন্যান্য কার্যক্রম গ্রহণ/কার্যাদি সম্পাদন অথবা আচরণ বিধি প্রতিপালনপূর্বক চলমান প্রকল্পের দৈনন্দিন কার্যক্রম গ্রহণে নির্বাচন কমিশনের সম্মতির প্রয়োজন নেই বলে নির্বাচন কমিশন সিদ্ধান্ত দিয়েছে।
কোনো এলাকায় অনুদান/ত্রাণ বিতরণ সংক্রান্ত নতুন কার্যক্রম গ্রহণ আবশ্যক হলে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ/জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে বিতরণ কার্যক্রম পরিচালনা করতে হবে।
তফসিল অনুযায়ী, মনোনয়নপত্র বাছাইয়ের বিরুদ্ধে আপিল দায়েরের সময় ১৯ থেকে ২১ সেপ্টেম্বর, আপিল নিষ্পত্তি ২২ থেকে ২৪ সেপ্টেম্বর, প্রার্থিতা প্রত্যাহারের শেষ সময় ২৫ সেপ্টেম্বর। প্রতীক বরাদ্দ ২৬ সেপ্টেম্বর। আর ভোটগ্রহণ ১৭ অক্টোবর।
ইসির নির্বাচন ব্যবস্থাপনা শাখা জানিয়েছে, চেয়ারম্যান পদে মনোনয়নপত্র দাখিল করেছিলেন ১৬২ জন, বাছাই শেষে বৈধতা পেয়েছেন ১৪২ জন। সাধারণ সদস্য পদে ১ হাজার ৯৮৩ জন মনোনয়ন পত্র দাখিল করেছিলেন, এদের মধ্যে বৈধতা পেয়েছেন ১ হাজার ৭৪২ জন। আর সংরক্ষিত সদস্য পদে মনোনয়নপত্র দাখিল করেছিলেন ৭১৫ জন, যাদের মধ্যে বৈধতা পেয়েছেন ৬৭৩ জন। আর চেয়ারম্যান পদে একক প্রার্থী রয়েছেন ২২ জেলায় ২২জন।
এছাড়া চেয়ারম্যার পদে এক জন করে প্রার্থী রয়েছে, এমন জেলাগুলো হলো—কুমিল্লা, কুড়িগ্রাম, নওগাঁ, গোপালগঞ্জ, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, ঝালকাঠি, টাঙ্গাইল, ঠাকুরগাঁও, নওগাঁ, নারায়ণগঞ্জ, ফেনী, বরগুনা, বাগেরহাট, ভেলা, মাদারীপুর, মুন্সিগঞ্জ, মৌলভীবাজার, লক্ষ্মীপুর, লালমনিরহাট, শরিয়তপুর, সিরাজগঞ্জ ও সিলেট।
নরসিংদী ও নারয়ণগঞ্জে একজন করে সাধারণ সদস্যও বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হতে চলেছেন। নির্বাচনের আপিল কর্তৃপক্ষ হিসেবে নিয়োগ করা হয়েছে সংশ্লিষ্ট অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনারদের। রিটার্নিং কর্মকর্তার বাছাইয়ের বিরুদ্ধে সংক্ষুব্ধরা আপিল কর্তৃপক্ষের কাছে আপিল করতে পারবেন। এই প্রক্রিয়া শেষে কেউ প্রার্থিতা প্রত্যাহার না করলে রিটার্নিং একক প্রার্থীদের বিনা-প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত ঘোষণা করবেন।
বাংলাদেশ সময়: ১৯১৯ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১৯, ২০২২
ইইউডি/এমজেএফ