ঢাকা: ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনে (ইভিএম) আঙ্গুলের ছাপ না মিললে করণীয় নিয়ে একটি বিধান যোগ হচ্ছে গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশে (আরপিও)। ফলে প্রিজাইডিং কর্মকর্তার ১ শতাংশ ভোটারের ব্যালট পেপার ওপেন করার ক্ষমতা পাকাপোক্ত হচ্ছে।
সোমবার (৩অক্টোবর) নির্বাচন কমিশনার মো. আলগীর নির্বাচন ভবনে নিজ দফতরে গণমাধ্যমকে এমন তথ্য জানান।
তিনি বলেন, ‘প্রিজাইডিং কর্মকর্তার ১ শতাংশ ভোট দেওয়ার বিষয়টি নিয়ে নানা রকম অপব্যাখ্যা দেওয়া এবং বিভ্রান্তির সৃষ্টি হয়। কারণ যার হাতের আঙ্গুলের ছাপ মেলে না, তারওতো ভোট দেওয়ার অধিকার রয়েছে। সেই ক্ষেত্রে প্রিজাইডিং অফিসার পরীক্ষা করে দেখেন যে ওই ব্যক্তি সেখানকার ভোটার কিনা। পরীক্ষার উপায় হলো, ওই ভোটারের এনআইডি কার্ড আগে দেখাতে হয়, তারপর এনআইডিতে থাকা ছবি ও নম্বর ভোটার তালিকার সঙ্গে মেলানো হয়। ভোটার তালিকায় নম্বর ছক থাকে, সেটা ইভিএমের যে কন্ট্রোল ইউনিট আছে সেখানে প্রবেশ করানো হলে সংশ্লিষ্ট ভোটারের ছবি ভেসে ওঠে। তাই প্রিজাইডিং কর্মকর্তা যখন দেখেন যে, ওই ভোটারের তথ্য ঠিক আছে, তখন কোনোক্রমেই যদি তার আঙ্গুলের ছাপ না মেলে, তখন কেন্দ্রে যে প্রিজাইডিং অফিসার থাকেন তিনি ইভিএমের ব্যালট ইউনিটটা যাতে ওপেন হয়, সেজন্য নিজের আঙ্গুলটা ব্যবহার করেন। তখন ভোটার গোপন কক্ষে গিয়ে তার পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দেন। অর্থাৎ এখানে প্রিজাইডিং অফিসার কিন্তু শুধুমাত্র ভোট দেওয়ার অনুমতিটা দেন। যাদের আঙ্গুলের ছাপ মিলে যায় তাদের জন্য কিন্তু লাগে না। শুধু যাদেরটা মেলে না, তাদেরকে প্রিজাইডিং অফিসার ভোট দেওয়ার ব্যবস্থা করে দেন। তবে এরও সীমা আছে। আমরা শতাংশ পর্যন্ত অনুমোদন দিয়েছি। ’
সাবেক এই ইসি সচিব বলেন, প্রিজাইডিং অফিসারের রেকর্ডটাও আলাদাভাবে থেকে যায়। এটি আইনি কাঠামোতে আনার বিষয়ে ভাবছে কমিশন। এ জন্য আইনি কাঠামোতে রাখার জন্য আইন মন্ত্রণালয়কে প্রস্তাব দেব। আরেকটি হলো যে, সেই সঙ্গে ইভিএমে তো ডিজিটালি একটা ফাইল থাকে, সেটি প্রিন্ট দিলেই বোঝা যাবে যে, কয়জন কীসে ভোট দিয়েছে। সেই সঙ্গে ম্যানুয়ালি যাতে একটা রেকর্ড রাখা হয়, সে জন্য আমাদের বিধিমালায় পরিবর্তন আনব। অর্থাৎ কাগজে একটি ফরম তৈরি করা হবে। ওখানে প্রিজাইডিং অফিসার তার নাম লিখবেন, তার আইডি নম্বর লিখবেন এবং যিনি ভোটটি দিলেন তিনিও সেখানে স্বাক্ষর করবেন, স্বাক্ষর করতে না পারলে টিপ সই রাখবেন এবং সেখানে যারা পোলিং এজেন্ট থাকবেন তারাও স্বাক্ষর করবেন। যাতে এটি ডিজিটালিও দেখানো যায়, ম্যানুয়ালিও দেখানো যায়।
তাহলে কী এটি আরপিওতে যুক্ত হচ্ছে- এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, জ্বি।
কবে নাগাদ এটি মন্ত্রণালয়ে পাঠাবেন জানতে চাইলে তিনি আরও বলেন, দু'য়েক দিনের মধ্যে। অর্থাৎ আমরা মন্ত্রণালয়ে যেটি পাঠিয়েছি তার সঙ্গে এটি যুক্ত হবে। তারপরে আইন মন্ত্রণালয় এটি পর্যবেক্ষণ করে দেখবে।
অন্য এক প্রশ্নের জবাবে এই নির্বাচন কমিশনার বলেন, ‘১ শতাংশের বেশি দেওয়ার সুযোগই থাকে না। আমাদের ইভিএম যখন কাস্টমাইজ করা হয়, তখন সেখানে প্রোগ্রাম সেট করা থাকে। অর্থাৎ প্রোগ্রাম পাল্টানোর কোনো সুযোগ নেই। যদি কোনো কেন্দ্রে ৫০০ ভোটার থাকে, তাহলে প্রিজাইডিং অফিসার পাঁচ জনকে এভাবে ভোট দেওয়ার ব্যবস্থা করে দিতে পারবেন। যদিও বেশিরভাগ ক্ষেত্রে এটি লাগে না। হাত ধুয়ে আসলে বা একটু পরিষ্কার করে আসলে বা আরেকটি যেটি আমরা যাদেরকে স্মার্ট কার্ড দিয়েছে, তাদের সবার দশ আঙুলের ছাপ নেওয়া হয়েছে, সেসব ভোটারের আঙ্গুলের ছাপ নিয়ে সমস্যা হয় না।
অপর এক প্রশ্নে তিনি বলেন, যাদেরকে এখন স্মার্ট কার্ড দিচ্ছি, তাদেরও দশ আঙ্গুলের ছাপ নিচ্ছি। এছাড়া স্মার্ট কার্ড দেই আর না দেই, এখন থেকে যারা ভোটার হতে আসবেন সবার দশ আঙুলের ছাপ রাখা হবে। জাতীয় নির্বাচনের আগেই যাতে আমরা সবার দশ আঙ্গুলের ছাপ নিতে পারি। তখন আর ১ শতাংশের বিষয়টির ওতোটা প্রয়োজন হবে না। কারণ দশ আঙ্গুলের মধ্যে একটি আঙ্গুল মিলে গেলেই তো ইভিএম ম্যাচ করতে পারবে।
১ শতাংশের বেশি ভোটারের আঙ্গুলের ছাপ না মিললে কী হবে, জানতে চাইলে এই কমিশনার বলেন, এতোদিন যেটা নিয়ম ছিল সেটি হলো- প্রিজাইডিং অফিসার রিটার্নিং অফিসারকে এ বিষয়ে জানাতো। রিটার্নিং অফিসার তা যাচাই-বাছাই করে সন্তুষ্ট হলে নির্বাচন কমিশনকে অনুরোধ জানাতো। কমিশন তখন ভিডিও কল বা কমিশনের তো নানান ধরনের এজেন্ট থাকে, তাদের মাধ্যমে যাচাই-বাছাই করে দেখতো কোনো কেন্দ্রে এই সমস্যা হচ্ছে। তখন সেখানে এ ধরনের যেই কয়জন ভোটার আছে, তাদের জন্য আলাদা কোড দেওয়া হতো। এইভাবে যাদেরকে ভোট দেওয়ার ব্যবস্থা করা হতো, তাদের তথ্যও আলাদা করে ইভিএমে থাকতো। এর জন্য বিশেষ ব্যবস্থা করতে হতো। ১ শতাংশের বিষয়টি আরপিওতে যোগ হয়ে গেলে বিশেষ ব্যবস্থাটা আর থাকবে না
এতে কেউ ভোট দিতে না পারলে তার সাংবিধানিক অধিকার ক্ষুণ্ন হবে কিনা- এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, এটি বৃহত্তর স্বার্থে করা হচ্ছে। কারণ বেশির ভাগ ভোটার যেহেতু সন্দেহের মধ্যে রাখে, রাজনৈতিক দলগুলো প্রশ্ন তোলেন। সেই জন্য আমরা সিদ্ধান্ত নিচ্ছি যে, ১ শতাংশের বেশি হবে না।
আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সর্বোচ্চ ১৫০ আসনে ইভিএম ব্যবহারের সিদ্ধান্ত নিয়েছে ইসি। এজন্য নতুন একটি প্রকল্প নেওয়াসহ আইনের সংশোধনও করছে তারা।
বাংলাদেশ সময়: ১৮৪৮ ঘণ্টা, অক্টোবর ০৩, ২০২২
ইইউডি/এমএমজেড