খুলনা: খুলনা জেলা পরিষদে চেয়ারম্যান পদে জমজমাট লড়াই হবে। তিন প্রার্থীরই রয়েছে নিজস্ব ভোটব্যাংক।
চেয়ারম্যান পদে হেবিওয়েট তিন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। বংশের পদবিতে তিনজন প্রার্থীই হচ্ছেন শেখ বংশের।
সদ্য সাবেক চেয়ারম্যান ও খুলনা জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হারুনুর রশীদ (মোটরসাইকেল), খুলনা জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক যুগ্ম সম্পাদক ও বিএমএর সভাপতি ডা. শেখ বাহারুল আলম (আনারস) এবং খুলনা জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি ও ক্রীড়া সংগঠক শেখ মো. (এসএম) মোর্ত্তজা রশিদী দারাকে (চশমা) প্রতীকে নির্বাচনে অংশ নিয়েছেন।
ভোটাররা বলছেন, বিগত দিনে জেলা পরিষদ নির্বাচনে তেমন কোনো প্রতিদ্বন্দ্বিতা না থাকলেও এবারের পরিস্থিতি একেবারেই ভিন্ন। আওয়ামী লীগের প্রার্থীর পাশাপাশি শক্তিশালী স্বতন্ত্র (বিদ্রোহী) প্রার্থী মাঠে থাকায় জমজমাট প্রচারণার পাশাপাশি কদর বেড়েছে ভোটারদের। তাই এবারের নির্বাচন নিয়ে বেশ কৌতূহলের সৃষ্টি হয়েছে।
নির্বাচনের শেষ প্রান্তে এসে নানামুখী মেরুকরণ হচ্ছে। প্রার্থীদের জয়-পরাজয়ের ফ্যাক্টর হিসেবে সামনে আসছে বিভিন্ন সমীকরণ। অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে ভোটের লড়াই হবে হাড্ডাহাড্ডি। শেষ পর্যন্ত ফলাফল কী হয় তা দেখার জন্য অপেক্ষা করতে হবে ১৭ অক্টোবর পর্যন্ত।
জেলা নির্বাচন অফিসের সূত্র জানায়, এ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে ৩ জন, ৯টি সাধারণ সদস্য পদে ২৮ এবং ৩টি সংরক্ষিত সদস্য পদে ১৩ জন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন। নির্বাচনে মোট ভোটার ৯৭৮ জন।
তারা হলেন- খুলনা সিটি করপোরেশনের মেয়র, ৩১ কাউন্সিলর, ১০ সংরক্ষিত কাউন্সিলর, ৬৮ ইউপি চেয়ারম্যান, ৯ উপজেলা চেয়ারম্যান, ১৮ ভাইস চেয়ারম্যান, সব সাধারণ ও সংরক্ষিত ইউপি সদস্য।
দশ কেন্দ্রেই হবে ভোট। ভোট কেন্দ্রগুলো- খুলনা জিলা স্কুল, রূপসা উপজেলা ভূমি অফিস, দিঘলিয়া উপজেলা পরিষদ মিলনায়তন, তেরখাদা শহীদ স্মৃতি মহাবিদ্যালয়, বটিয়াঘাটা সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়, ফুলতলা উপজেলা পরিষদ মিলনায়তন, ডুমুরিয়া শহীদ যোবায়েদ আলী মিলনায়তন, পাইকগাছা উপজেলা পরিষদ মিলনায়তন, কয়রা উপজেলা পরিষদে মিলনায়তন ও চালনা বাজার সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়।
ভোট কেন্দ্রগুলোতে ১০ জন প্রিজাইডিং অফিসার, ২০ জন সহকারী প্রিজাইডিং অফিসার ও ৪০ জন পোলিং অফিসার দায়িত্ব পালন করবেন। ইভিএম পদ্ধতিতেই জেলা পরিষদের ভোট।
খুলনা জেলা পরিষদ নির্বাচন নিয়ে পাল্টাপাল্টি অভিযোগ করেছেন চেয়ারম্যান প্রার্থীরা। দুই স্বতন্ত্র চেয়ারম্যান প্রার্থী নির্বাচনী প্রচারে আচরণবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগ করেছেন আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থীর বিরুদ্ধে।
অপরদিকে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী বলছেন স্বতন্ত্র প্রার্থীরা ঘোলা পানিতে মাছ শিকারের চেষ্টা করছেন।
শেখ হারুনুর রশিদ বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আমাকে মনোনয়ন দিয়েছেন। আমি আশা করছি, ৮০-৯০ শতাংশ ভোট পেয়ে জয়ী হবো। অন্য দুই প্রার্থী ৫-১০ ভাগ ভোট পেতে পারেন।
এস এম মোর্তুজা রশিদী দারা বলেন, ভীষণ ব্যস্ত সময় পার করছি। ভোটারদের দ্বারে দ্বারে ভোট প্রার্থনা করেছি। আশা করছি, ভোটাররা আমাকে মূল্যায়ন করবেন।
এদিকে খুলনা জেলা পরিষদ নির্বাচনের ১০টি ভোট কেন্দ্রে সিসি ক্যামেরা স্থাপন, কেন্দ্রে মোবাইল ফোনসহ সব ইলেকট্রনিক ডিভাইস নিষিদ্ধ করা, ইভিএম বুথে ভোটার ব্যতীত অন্য কাউকে প্রবেশ করতে না দেওয়া এবং ভোট কেন্দ্রে পর্যাপ্ত নিরাপত্তা নিশ্চিত করার দাবি জানিয়েছেন স্বতন্ত্র চেয়ারম্যান প্রার্থী ডা. শেখ বাহারুল আলম।
শনিবার দুপুরে খুলনা বিএমএ মিলনায়তনে সংবাদ সম্মেলন করে তিনি এ দাবি জানান। ডা. বাহারুল আলম খুলনা জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক যুগ্ম সম্পাদক এবং খুলনা বিএমএর সভাপতি।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে ডা. বাহার অভিযোগ করেন, ক্ষমতাসীন ব্যক্তিরা বিভিন্নভাবে ভোটারদের হুমকি দিচ্ছেন। তারা ভোটারদের সঙ্গে করে ভোট কেন্দ্রে নিয়ে যাবে এবং তাদের উপস্থিতিতে ভোট প্রদান করতে হবে বলে হুমকি জারি রেখেছেন। শক্তির এমন নগ্ন প্রয়োগ ও ভোটারদের হুমকি নির্বাচনের মাঠে এক ভয়ের পরিবেশ সৃষ্টি করেছে। নির্বাচনে এসব আধিপত্য বিস্তার বন্ধ করা না গেলে কোনক্রমেই ১৭ অক্টোবরের জেলা পরিষদ নির্বাচন সুষ্ঠু হবে না।
তিনি আরও অভিযোগ করেন, অপর চেয়ারম্যান প্রার্থী শেখ হারুনুর রশিদ খুলনা জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি। তিনি নির্বাচনী মঞ্চ ব্যবহার করে প্রচারণা চালানোয় অন্য মতাদর্শের ভোটাররা আতঙ্কগ্রস্ত। তারা সুষ্ঠুভাবে ভোট দিতে আসতে পারবেন কিনা এ নিয়ে রীতিমতো শঙ্কিত।
বাংলাদেশ সময়: ১৬৩৫ ঘণ্টা, অক্টোবর ১৫, ২০২২
এমআরএম/এএটি