ঢাকা, বুধবার, ২০ কার্তিক ১৪৩১, ০৬ নভেম্বর ২০২৪, ০৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

নির্বাচন ও ইসি

দলীয় সরকারের অধীনে উপ-নির্বাচনও সুষ্ঠুভাবে সম্ভব নয় 

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৩৫০ ঘণ্টা, অক্টোবর ২২, ২০২২
দলীয় সরকারের অধীনে উপ-নির্বাচনও সুষ্ঠুভাবে সম্ভব নয় 

ঢাকা: দলীয় সরকারের অধীনে একটি উপ-নির্বাচনও সুষ্ঠুভাবে করা সম্ভব নয়। সদ্য বন্ধ হয়ে যাওয়া গাইবান্ধা-৫ আসনের উপ-নির্বাচন এমন বার্তাই দিল।

শনিবার (২২ অক্টোবর) ভার্চ্যুয়াল এক সংবাদ সম্মেলনে এমন ব্যাখ্যা দিয়েছে সুশাসনের জন্য নাগরিক-সুজন। এ সময় সংগঠনটি কর্মকর্তারাও যুক্ত ছিলেন।

সুজন সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার বলেন, এদেশে ১১টি নির্বাচনের মধ্যে সাতটি নির্বাচন দলীয় সরকারের অধীনে হয়েছে। প্রত্যেকটিতে ক্ষমতাসীনরাই ফের ক্ষমতায় এসেছে। আর চারটি তত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন দেশে ও বিদেশে গ্রহণযোগ্য হয়েছে। এছাড়াও ক্ষমতার পরিবর্তন হয়েছে।

তিনি বলেন, গাইবান্ধা-৫ উপ-নির্বাচনে প্রমাণ হয়েছে মাঠ প্রশাসনে সীমাহীন দলীয়করণ হয়েছে। তাই এজন্য নির্বাচনকালীন প্রশাসন ও আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর নিরপেক্ষতার জন্য নিরপেক্ষ সরকার হতে হবে। তবে তত্বাবধায়ক সরকারও হতে পারে। আবার সর্বদলীয় সরকারও হতে পারে। এটি ঠিক করবেন রাজনীতিবিদরাই।

সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, দলগুলোর নিজেদের মধ্যেই আলোচনা করে এই বিষয়ে সিদ্ধান্তে আসতে হবে। দলগুলোর মাঝেই অতীতের মতো এই অনুভূতি আসা উচিত যে দলীয় সরকারের অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয়। এজন্য সংবিধান সংশোধন করে নিরপেক্ষ নির্বাচনকালীন সরকার ব্যবস্থার বিষয়টি আনতে হবে।

অন্য এক প্রশ্নের জবাবে বদিউল আলম মজুমদার বলেন, নির্বাচন কমিশনের উচিত ১৫০ আসনে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) ব্যবহারের সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসা। কেন না, এতে সমস্যা আরো বাড়তে পারে। ইভিএম কিংবা সিসি ক্যামেরা বসিয়ে সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয়। এজন্য সংবিধান সংশোধন করে নির্বাচন ব্যবস্থার পরিবর্তন আনতে হবে।

ইভিএম মেশিনের কোনো সমস্যা নেই, সমস্যা ব্যক্তির, সেটি প্রমাণের জন্যই গাইবান্ধা-৫ নির্বাচন বন্ধ করেছে নির্বাচন কমিশন-এমন সন্দেহের কথাও উল্লেখ করেন তিনি।

লিখিত বক্তব্যে ড. মজুমদার বলেন, আমরা আমাদেরকে একটি ইভিএম এবং এর সোর্সকোর্ড দেওয়ার লিখিত দাবি কমিশনকে জানিয়েছি, যাতে আমরা প্রমাণ করতে পারি যে এই ইভিএম ব্যবহার করার মাধ্যমে বেড়ায়ই ক্ষেত খেতে পারে।

 নির্বাচন কমিশনের বিরুদ্ধে জোরালো অভিযোগ তোলা এবং অভিযোগের প্রমাণ হিসেবে অনেক প্রিসাইডং কর্মকর্তা থেকে সাদা কাগজে ‘নির্বাচন সুষ্ঠু হয়েছে’ এমন প্রত্যয়নপত্র নেওয়ার নজিরবিহীন পদক্ষেপ সন্দেহ তৈরি না করে পারে না। এছাড়াও কমিশনের এমন কঠোরতার কারণে জাতীয় নির্বাচনে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থার আর প্রয়োজন নেই– একজন মন্ত্রীর এমন বক্তব্যও জনগণকে সন্দিহান করতে বাধ্য। কারণ গাইবান্ধা উপনির্বাচনে কমিশনের পক্ষ থেকে কারচুপি উদ্ঘাটনের নজিরবিহীন প্রচেষ্টা এবং ক্ষমতাসীনদের কমিশনের বিরুদ্ধে জোরালো অভিযোগ তোলা উভয় পক্ষের জন্যই ‘উইন-উইন’– এর মাধ্যমে আউয়াল কমিশন যে স্বাধীন ও নিরপেক্ষ এবং তারা যে ক্ষমতাসীনদের প্রতি পক্ষপাতদুষ্ট নয় তা প্রতিষ্ঠিত হওয়ার সুযোগ সৃষ্টি হয়।

তিনি বলেন, আশা করি বিষয়টি কাকতালীয়। যদি তা না হয়ে থাকে, তাহলে এ নাটকে প্রযোজকের কূটবুদ্ধির প্রশংসা না করে পারা যায় না। কারণ এর মাধ্যমে একই ঢিলে দুই পাখি মারার সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে।

আমরা আবারও আউয়াল কমিশনকে ধন্যবাদ জানাতে চাই। তবে আমরা আশা করতে চাই যে, গাইবান্ধা-৫ আসনে কমিশন যা করেছে তা কমিশনের প্রতি জনগণের আস্থা ফেরানোর কোনো বৃহত্তর প্লটের অংশ নয়। তবে ঘরপোড়া গরু যেমন সিঁদুরে মেঘ দেখে ভয় পায়, তেমনিভাবে নির্বাচন কমিশনের আমাদের ভোটাধিকার হরণের একের একের পর এক অপচেষ্টার কারণে মানুষ সন্দেহের চোখেই দেখছে।  

এর আগে ১২ অক্টোবর গাইবান্ধা-৫ উপ-নির্বাচন সিসি ক্যামেরায় পর্যবেক্ষণ করে নির্বাচন কমিশন ব্যাপক অনিয়ম পাওয়ায় ৫০টি কেন্দ্র বন্ধ ঘোষণা করে। একটি কেন্দ্র বন্ধ করে দেন রিটার্নিং কর্মকর্তা। এই অবস্থায় নির্বাচনের যৌক্তিকতা না থাকায় পুরো নির্বাচন বন্ধ করে অনিয়মের কারণ উদঘাটন ও শাস্তি প্রদানের জন্য তিন সদস্যে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে ইসি। এই কমিটি ৬৮৫ জনের শুনানি করে কমিশন চলতি সপ্তাহেই প্রতিবেদন দেওয়ার কথা রয়েছে।

বাংলাদেশ সময়: ১৩৪৭ ঘণ্টা, অক্টোবর ২২, ২০২২
ইইউডি/এসআইএস
 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।