ঢাকা: সম্প্রতি অনুষ্ঠিত জেলা পরিষদ নির্বাচনের সব প্রার্থীর ব্যয়ের হিসাব নভেম্বরের মধ্যেই রিটার্নিং কর্মকর্তাদের কাছে জমা দিতে হবে।
নির্বাচন কমিশনের (ইসি) নির্বাচন ব্যবস্থাপনা শাখার উপ-সচিব মো. আতিয়ার রহমান জানিয়েছেন, নির্বাচনে অংশগ্রহণকারী সব প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীকে হিসাব জমা দেওয়ার নির্দেশনা এরই মধ্যে রিটার্নিং কর্মকর্তার মাধ্যমে প্রার্থীদের দেওয়া হয়েছে।
ইসি কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ১৭ অক্টোবর জেলা পরিষদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। আর নির্বাচনের গেজেট গত ১৯ অক্টোবর থেকে ২৭ অক্টোবর পর্যন্ত ধারাবাহিকভাবে প্রকাশ করা হয়েছে। এক্ষেত্রে যে জেলা পরিষদের নির্বাচনের ফলাফলের গেজেট যেদিন প্রকাশ করা হয়েছে, সেদিন থেকে পরবর্তী ৩০ দিনের মধ্যেই নির্বাচনী ব্যয়ের হিসাব জমা দিতে হবে। অর্থাৎ আগামী ২৭ অক্টোবরের মধ্যে সব প্রার্থীকেই এ হিসাব দিতে হবে।
নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে ৯৬ জন, সাধারণ সদস্য পদে এক হাজার ৫১৩ জন ও সংরক্ষিত সদস্য পদে ৬২২ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছেন।
নির্বাচনী আইন অনুযায়ী, চেয়ারম্যান পদপ্রার্থীর সর্বোচ্চ সাড়ে পাঁচ লাখ টাকা আর সদস্য পদপ্রার্থীর সর্বোচ্চ ব্যয়সীমা এক লাখ ১০ হাজার টাকা।
জেলা পরিষদ নির্বাচন বিধিমালার ৫১ বিধিতে বলা হয়েছে, সব প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী নির্বাচনী ব্যয়ের একটি রিটার্ন দাখিল করবেন। এক্ষেত্রে প্রত্যেক দিনে ব্যয় করা অর্থের সব বিল ও রসিদসহ একটি বিবরণী, ব্যাংক হিসাবে জমাকৃত এবং উত্তোলিত অর্থের ব্যাংকের দেওয়া হিসাব বিবরণীর একটি কপি, প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীর ব্যক্তিগত খরচের মোট পরিমাণ উল্লেখ করতে হবে। নির্বাচনী খরচের জন্য যে কোনো উৎস থেকে প্রাপ্ত সব অর্থ এবং তা প্রাপ্তির প্রমাণসহ একটি বিবরণীও দাখিল করতে হবে।
রিটার্নিং কর্মকর্তা প্রার্থীর দেওয়া হিসাব তার কার্যালয়ে বা উপযুক্ত কোনো স্থানে সংরক্ষণ করবেন। একই নির্ধারিত ফি পরিশোধ সাপেক্ষে অফিস চলাকালে পরবর্তী এক বছর যে কোনো ব্যক্তির পরিদর্শনের ব্যবস্থা থাকবে। জেলা পরিষদ নির্বাচনে রিটার্নিং কর্মকর্তার দায়িত্ব পালন করেছেন জেলা প্রশাসকরা।
নির্বাচনী ব্যয়সীমা অতিক্রম করলে নির্বাচন কমিশন কোনো প্রার্থীর প্রার্থিতা বাতিলের ক্ষমতা রাখে। এছাড়া এ বিষয়ে প্রতিকার পেতে নির্বাচনী ট্রাইব্যুনালেও যেতে পারবেন যে কোনো সংক্ষুব্ধ ব্যক্তি।
দ্বিতীয় জেলা পরিষদ নির্বাচনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় চেয়ারম্যান হয়েছেন ২৬ জন, নারী সদস্য হয়েছেন ১৮ জন এবং সাধারণ সদস্য হয়েছেন ৬৫ জন।
১৯৮৮ সালে এইচএম এরশাদ সরকারের সময় প্রণীত আইনে জেলা পরিষদ চেয়ারম্যানকে সরকার কর্তৃক নিয়োগ দেওয়ার বিধান ছিল। পরে আইনটি কার্যকারিতা হারায়।
এরপর বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ সরকারে এসে ২০০০ সালে নতুন আইন করে জেলা পরিষদ আইন প্রণয়ন করে। সে আইনটি মাঝে ফের অকার্যকর ছিল। পরে নবম সংসদ নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতায় এলে ২০১১ সালের ১৫ ডিসেম্বর ৬১ জেলায় নিজ দলের নেতাদের প্রশাসক হিসেবে নিয়োগ দেয় আওয়ামী লীগ। তাদের মেয়াদ শেষ হলে ২০১৬ সালে প্রথমবারের মতো সারাদেশে ৬১ জেলায় নির্বাচন দেওয়া হয়। সে সময় ১৯ জন চেয়ারম্যান বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হন।
দ্বিতীয়বারের মতো জেলা পরিষদ নির্বাচনের সময় ঘনিয়ে এলে অধিকতর আইনি সংশোধনের উদ্যোগ নেয় সরকার। এ অবস্থায় জেলা পরিষদে প্রশাসক নিয়োগের আগে প্রত্যেক জেলা পরিষদের প্রশাসনিক ও আর্থিক ক্ষমতা পরিচালনার জন্য প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা অথবা ভারপ্রাপ্ত প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তাদের দায়িত্ব দেওয়া হয়। জেলা পরিষদে প্রশাসক নিয়োগের বিষয়টি যোগ করে জেলা পরিষদ আইনের সংশোধনী গত ৬ এপ্রিল সংসদে পাস হয়। এরপর সংশোধনীর গেজেট প্রকাশ হয় ১৩ এপ্রিল।
আগের আইন অনুযায়ী, সিটি করপোরেশন, উপজেলা, পৌরসভা ও ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান, মেয়র এবং কাউন্সিলররা বা সদস্যরা ভোট দিয়ে জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান, ১৫ জন সদস্য ও পাঁচজন সংরক্ষিত সদস্য নির্বাচিত করতেন। কিন্তু সংশোধীত আইনে জেলা পরিষদের সদস্য সংখ্যা নির্ধারণ করা হয়েছে সংশ্লিষ্ট জেলার উপজেলার সংখ্যার সমান। আর নারী সদস্য সংখ্যা নির্ধারণ করা হয়েছে সংশ্লিষ্ট জেলার উপজেলা চেয়ারম্যানদের মোট সংখ্যার এক-তৃতীয়াংশ (দুই জনের কম নয়)। অর্থাৎ একেক জেলা পরিষদের সদস্যের সংখ্যা হবে একেক রকম, সংশোধনের আগে যেটা ২১ জন নির্দিষ্ট করে দেওয়া ছিল।
আগে পরিষদের মেয়াদ শেষ হলেও পরবর্তী নির্বাচন না হওয়া পর্যন্ত আগের পরিষদকেই দায়িত্ব পালন করার কথা বলা হয়েছিল আইনে। কিন্তু সংশোধিত আইনে সেটির পরিবর্তে প্রশাসক বসানোর বিধান আনা হয়েছে।
বাংলাদেশ সময়: ০৭৫১ ঘণ্টা, নভেম্বর ১১, ২০২২
ইইউডি/এসআই