বরিশাল: সিটি করপোরেশন (বিসিসি) নির্বাচনে ভীত-সন্ত্রস্ত পরিবেশ তৈরির চেষ্টার পাশাপাশি লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নষ্ট হওয়ার দিকে যাচ্ছে বলে মন্তব্য করছেন মেয়র প্রার্থীরা। এমন কোনো ঘটনা ঘটলে কড়া আন্দোলনের হুঁশিয়ারি দিয়েছেন তারা।
নির্বাচনে জাতীয় পার্টির প্রার্থী ইকবাল হোসেন তাপস বলেন, মানুষ ভোট দেওয়ার জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছে। তবে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড এখনও নিশ্চিত হয়নি। আওয়ামী লীগের যারা নেতাকর্মী রয়েছেন, তারা বিভিন্নভাবে ভীত-সন্ত্রস্ত পরিবেশ তৈরি করার চেষ্টা করছে।
ছাত্রলীগের বিশেষ নেতা এখানে এসে নৌকার লোগো লাগিয়ে ঘুরে বেড়িয়েছে। ওই নেতা সারা বরিশালের বিভিন্ন জেলা থেকে লোক এনে একটা ভীত-সন্ত্রস্ত পরিবেশ সৃষ্টি করার চেষ্টা করছে। তাদের উদ্দেশ্য হলো জনগণ যেন ভোটকেন্দ্রে না যায়। এ ধরনের অবস্থা যদি তারা চালিয়ে যেতে থাকে, জনগণ সম্মিলিতভাবে তা প্রতিহত করবে। সরকারের কাছে অনুরোধ জানাচ্ছি তারা যেন এখানে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ডটা নিশ্চিত করেন। আর না হলে সারা বাংলাদেশে এই ভোট চুরির বিপক্ষে যে গণআন্দোলন শুরু হবে, সেই গণআন্দোলনে সরকার পদত্যাগ করতে বাধ্য হবে।
ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের প্রার্থী মুফতী সৈয়দ মুহাম্মাদ ফয়জুল করীম বলেছেন, মনে হচ্ছে ধীরে ধীরে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নষ্ট হওয়ার দিকেই যাচ্ছে। যেমন আমাদের কিছু লোককে হয়রানি করার খবর এসেছে। এরপর টুপি-দাড়ি দেখে আমাদের লোকজনকে জিজ্ঞাসা করা হচ্ছে কোথায় বাড়ি, আসছেন কেন? অথচ, নির্বাচন আচরণবিধির মধ্যে কোথাও লেখা নেই এই শহরের বাইরের কেউ ভোট চাইতে পারবে না, আসতে পারবে না। আশেপাশের কিছু লোক তো আসতেই পারে এবং সব প্রার্থীর নির্বাচনী প্রচারণার জন্যই তারা আসে।
আমি মনে করি নির্বাচন আচরণবিধির মধ্যে যা আছে, সেই দিকে প্রশাসনের লক্ষ্য করা উচিত। এর বাইরে অতি উৎসাহিত হয়ে অন্য কিছু না করাই ভালো। নির্বাচনের বিধি ছাড়া
যদি আমি কোনো কাজ করি তাহলে বলবে। কিন্তু বিধির মধ্যে কাজ হলে অতি উৎসাহী হয়ে আমাদের বাধা দেওয়ার কোনো আইনগত ভিত্তি নেই। আমি প্রশাসনের কাছে দাবি করবো, বরিশালের নির্বাচনের দিকে গোটা দুনিয়া তাকিয়ে আছে। কাজেই নির্বাচন যদি কোনো অবস্থায় প্রশ্নবিদ্ধ হয়, ক্লিন না হয় এবং যদি গ্রহণযোগ্য না হয়, তাহলে বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ আন্দোলনের অবস্থা ভিন্ন দিকে মোড় নিবে বলে আমি মনে করি।
তিনি আরও বলেন, যার মাধ্যমে বরিশালের সব দিকের উন্নয়ন হবে সেইরকম একজন প্রার্থীকে ভোটাররা যাতে ভোট দিয়ে নির্বাচিত করেন, সেই দাবি আমি জানাই। আমি যথেষ্ট সাড়া পাচ্ছি। ভোটাররা ভোট দেওয়ার প্রস্তুতিও নিয়ে ফেলছে। ফেয়ার-ফ্রি ভোট হলে হাতপাখা বিজয় অর্জন করবে।
জাকের পার্টির প্রার্থী মিজানুর রহমান বাচ্চুও মাঠে নেমে যথেষ্ট সাড়া পাচ্ছেন বলে জানিয়েছেন। তিনি আরও বলেন, যদি সুষ্ঠু নির্বাচন হয় এবং কমিশন যদি সঠিকভাবে ভোট নিতে পারে তাহলে আমি বিজয়ের আশা রাখি।
এখন পর্যন্ত অস্বাভাবিক কিছু দেখছেন না বলে জানিয়েছেন আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী আবুল খায়ের আব্দুল্লাহ (খোকন সেরনিয়াবাত)।
এদিকে নির্বাচনে প্রচারণার কাজে বাধা দেওয়ার লক্ষ্যে স্বতন্ত্র প্রার্থী ও সাবেক ছাত্রদল নেতা কামরুল আহসান রুপনের তিন কর্মীকে আটকের অভিযোগ উঠেছে। রুপন বলেন, বিষয়টি নিশ্চিত হয়ে পুলিশের কাছে গেলেও তারা সঠিকভাবে কিছু বলছে না। আবার বিকেল সাড়ে ৪টায় আদালতে গিয়ে জানতে পারলাম মো. রমজান, মো. মোনায়েম খান, সৈয়দ রফিকুল ইসলাম মন্টু নামে আমার তিন কর্মীকে এয়ারপোর্ট থানা পুলিশ বিনা কারণে গ্রেপ্তার করেছে। কিন্তু তাদের এখনও আদালতে তোলেনি।
এয়ারপোর্ট থানা পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, বরিশাল মেট্রোপলিটনের কাউনিয়া ও কোতোয়ালি থানা পুলিশ শুক্রবার (২ জুন) রাত থেকে শনিবার (৩ জুন) সকাল পর্যন্ত সন্দেহজনক কয়েকজনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করা হয়েছে। জিজ্ঞাসাবাদ শেষে তাদের ছেড়েও দেওয়া হয়েছে। এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন কাউনিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুর রহমান মুকুল।
বাংলাদেশ সময়: ১৭৩০ ঘণ্টা, জুন ৩, ২০২৩
এমএস/এমজে