গৌরীপুর (ময়মনসিংহ) থেকে ফিরে: ময়মনসিংহের গৌরীপুর পৌরসভার ধানমহাল এলাকায় বিএনপির মেয়র প্রার্থী সুজিত কুমার দাসের নির্বাচনী কেন্দ্র। সেখানে বসে আছেন উপজেলা বিএনপির সাবেক ভারপ্রাপ্ত আহবায়ক কোয়াছিম উদ্দিনসহ কয়েকজন নেতাকর্মী।
সেখানে বসে আগামী ৩০ ডিসেম্বরের পৌর নির্বাচনের প্রচারণার ছক করছিলেন তারা। জানালেন, তাদের প্রার্থী নির্বাচনী প্রচারণায় বের হয়ে পড়েছেন। মনোনয়নের আগে গ্রুপিং থাকলেও এখন নিজেদের মধ্যে কোনো দলাদলি নেই। দলের অন্য তিন মনোনয়ন প্রত্যাশীও সুজিতকেই সমর্থন দিয়েছেন।
শুক্রবার (০৪ ডিসেম্বর) রাতের ওই আড্ডায় উঠে এলো ময়মনসিংহ উত্তর জেলা বিএনপির আহবায়ক খুররম খান চৌধুরীর এ নির্বাচনে ভূমিকা নিয়ে। খুররম এখান থেকে প্রার্থী করতে চেয়েছিলেন জাপা থেকে বিএনপিতে আসা শরাফত হোসেন পাঠানকে। মুহূর্তেই ক্ষোভ ঝাড়তে শুরু করলেন উপজেলা বিএনপির একাংশের যুগ্ম আহবায়ক ও সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান মো: শফিকুল ইসলাম তালুকদার।
বলতে থাকলেন, ‘খুররম খান দলে আউলা লাগাইছিলেন। নান্দাইলে বইসা দলের কমিটি করেন। গৌরীপুরে তার কোনো গ্রুপ নাই। আমাদের দলে দ্বিধা দ্বন্দ্ব থাকলে তো স্বতন্ত্র প্রার্থী হইতেন। এখানে যাও একটু গ্রুপিং আছে, নির্বাচনের সুযোগেই সেই গ্রুপিংও মিটবো’। যুবদল নেতা শাহীন চৌধুরী বলে উঠলেন, ‘নির্বাচনের সময় কোন্দলের কথা বলার দরকার কি? তাদেরও তো ভোট থাকতে পারে!’
এ সময় এলেন গৌরীপুর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আহাম্মদ তায়েবুর রহমান হিরণ। আওয়ামী লীগ দলীয় বর্তমান মেয়র সৈয়দ রফিকুল ইসলামের সমালোচনায় মুখর উত্তর জেলা বিএনপির এ যুগ্ম আহবায়ক বললেন, মেয়র রফিক এলাকায় কোন উন্নয়ন করেননি। শেষদিকে লোক দেখানো কিছু কাজ করেছেন। সুষ্ঠু নির্বাচন হলে আমাদের প্রার্থীর বিজয় কেউ ঠেকাতে পারবে না’।
আওয়ামী লীগ, বিএনপি ও স্বতন্ত্র প্রার্থীরা নির্বাচনী আচরণবিধি মেনে চলছেন কি-না সে সম্পর্কে কোনো অভিযোগ করলেন না বিএনপি নেতারা। তবে মধ্যবাজার এলাকার আওয়ামী লীগ দলীয় বিদ্রোহী স্বতন্ত্র প্রার্থী সাবেক মেয়র সৈয়দ শফিকুল ইসলাম হবি নিজ দলের মনোনীত মেয়র প্রার্থীর বিরুদ্ধে অভিযোগের ঝাঁপি খুলে বসলেন।
বললেন, ‘স্থানীয় সংসদ সদস্য ক্যাপ্টেন (অব.) মুজিবুর রহমান ফকির মেয়র রফিকুলের পক্ষে প্রচারণা চালিয়ে নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘন করেছেন। তিনি নিজেই আমাদের কর্মী-সমর্থকদের ভয়ভীতি ও হুমকি দিচ্ছেন। দু’একদিনের মধ্যেই আমি প্রধান নির্বাচন কমিশনারের কাছে এ সংক্রান্ত লিখিত অভিযোগ দাখিল করবো’।
বিদ্রোহী প্রার্থী হবার অপরাধে দল কঠোর সিদ্ধান্ত নিলেও নির্বাচন থেকে সরে আসবেন না বলে জানান শফিকুল ইসলাম হবি। বলেন, ‘মেয়র রফিক ‘রাজাকারের সন্তান’। স্থানীয় সংসদ সদস্য কূটকৌশল করে তাকে মনোনয়ন পাইয়ে দিয়েছেন। এর প্রতিবাদ জানাতেই আমি মেয়র পদে প্রার্থী হয়েছি’।
নিজের সঙ্গেই বিএনপির প্রার্থীর লড়াই হবে বলেও মনে করেন সাবেক এ মেয়র। বর্তমান মেয়র সৈয়দ রফিকুল ইসলামের সমালোচনা করে তার অভিযোগ, রফিকুল পৌর এলাকায় কোনো কাজ করেননি। শেষবেলায় এসে উন্নয়নের নামে কোটি কোটি টাকা আত্মসাত করেছেন। ভোটারদের কাছ থেকে তার খাওয়া উঠে গেছে। তিনি ভোট টানতে পারবেন না’।
একই রকম অভিযোগ দলীয় বিদ্রোহী আরেক স্বতন্ত্র প্রার্থী আবু কাউসার চৌধুরী রন্টির মুখ থেকেও। তিনি বলেন, ‘বর্তমান মেয়রের বাবা ‘স্বাধীনতাবিরোধী’। দালাল আইনে তার জেলও হয়েছিল। আমি তাকে দলের প্রার্থী হিসেবে মানবো না। মেয়র নিজেও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের জন্য বিতর্কিত। তিনি আমার কর্মী-সমর্থকদের হুমকি-ধমকি দিচ্ছেন’।
এসব বিষয়ে কথা বলতে পৌরসভার ৪ নম্বর ওয়ার্ডের বাড়িওয়ালাপাড়া এলাকায় বর্তমান মেয়র সৈয়দ রফিকুল ইসলামের নির্বাচনী কেন্দ্রে গেলেও তার দেখা মেলেনি। পরে তার মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে বলেন, ‘মিডিয়ার সঙ্গে কথা বলার সময় নেই। লোক মারফত শিডিউল করে আসেন’।
** ভোটের আমেজে মার্কার অপেক্ষা !
বাংলাদেশ সময়: ১৭৩২ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ০৫, ২০১৫
এএসআর