ঢাকা: পৌরসভা নির্বাচনে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী মেয়র প্রার্থীদের কনভিন্স (বোঝানো) করার চেষ্টা করছেন দলের কেন্দ্রীয় নেতারা। আগামী ১৩ ডিসেম্বর মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের শেষ দিন পর্যন্ত এ প্রক্রিয়া অব্যাহত থাকবে বলে আওয়ামী লীগ নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে।
আওয়ামী লীগের একাধিক নেতার সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, যেসব পৌরসভায় বিদ্রোহী প্রার্থী রয়েছেন, সেসব পৌরসভায় সংশ্লিষ্ট জেলা, উপজেলার নেতারা বিদ্রোহীদের সঙ্গে আলোচনা করছেন। তাদেরকে বিভিন্নভাবে বোঝানোর চেষ্টা চলছে।
দলের দায়িত্বপ্রাপ্ত কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদকরাও বিদ্রোহীদের সঙ্গে নানাভাবে কথা বলছেন। তবে নির্বাচনী আচরণবিধির কারণে কাউকে জোর করে কিছু বলা বা প্রত্যাহারের জন্য জোরাজুরি করা যাচ্ছে না বলেও জানান ওই নেতারা।
আওয়ামী লীগের ওই নেতারা আরও জানান, নির্বাচন কমিশনের নির্বাচনী আচরণবিধি রয়েছে। আচরণবিধি লঙ্ঘিত হতে পারে, এ কারণে কাউকে জোর করে বসিয়ে দেওয়া সম্ভব নয়। তাই আচরণবিধি মেনে তারপর বিদ্রোহীদের বোঝানোর চেষ্টা চলছে।
আগামী ১৩ ডিসেম্বরের মধ্যে বিদ্রোহীদের প্রার্থিতা প্রত্যাহার করিয়ে নেওয়া সম্ভব হবে বলেও আওয়ামী লীগ নেতারা আশা করছেন। তবে সেটা সম্ভব না হলে ১৩ ডিসেম্বরের পরও যারা বিদ্রোহী প্রার্থী থাকবেন, তাদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থার দিকে যাবে দলটি।
নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, পৌরসভা নির্বাচনকে চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিয়েছে আওয়ামী লীগ। এটা স্থানীয় সরকার নির্বাচন হলেও এই নির্বাচন দল ও সরকারের জন্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, এবারের নির্বাচন হচ্ছে দলীয় প্রতীকে। প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে প্রতীকের সঙ্গে।
তাছাড়া প্রধান রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ বিএনপিও নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে। দীর্ঘ ৭ বছর পর আওয়ামী লীগের দলীয় প্রতীক নৌকার সঙ্গে প্রধান রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ বিএনপির ধানের শীষের সরাসরি ভোটের লড়াই হবে। এর আগে নৌকা ও ধানের শীষের সর্বশেষ প্রতিদ্বন্দ্বিতা হয় ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বরের জাতীয় নির্বাচনে।
গত ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির জাতীয় নির্বাচনে বিএনপি অংশ নেয়নি। ওই নির্বাচনে আওয়ামী লীগ পুনরায় ক্ষমতায় আসে। টানা দুইবার ক্ষমতায় এসে ৭ বছর সরকার পরিচালনাকারী দল আওয়ামী লীগের জন্য এই নির্বাচনের গুরুত্ব তাই অনেক।
নেতারাও মনে করছেন, এটা স্থানীয় সরকার নির্বাচন হলেও আওয়ামী লীগের জন্য ভাবমূর্তি রক্ষার ইস্যু হয়ে দাঁড়িয়েছে। এ কারণেই বুঝিয়ে বিদ্রোহীদের প্রত্যাহার করানো সম্ভব না হলে দল থেকে বহিষ্কারের ঘোষণা দেওয়া হয়েছে।
আগামী ৩০ ডিসেম্বর সারা দেশের ২৩৫টি পৌরসভায় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এবারের নির্বাচনে ৫০টিরও বেশি পৌরসভায় আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থীর বিপরীতে প্রায় ৭৫ জন বিদ্রোহী প্রার্থী মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন বলে জানা গেছে। আগামী ১৩ ডিসেম্বর মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের শেষ দিন। এ দিনটিকে সামনে রেখে বিভিন্ন তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছে আওয়ামী লীগ।
আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল-আলম হানিফ বাংলানিউজকে বলেন, বিদ্রোহী প্রার্থীরা সবাই প্রার্থিতা প্রত্যাহার করে নেবেন, কেউই থাকবেন না। আমরা সে চেষ্টাই করে যাচ্ছি।
আওয়ামী লীগের ঢাকা বিভাগের দ্বায়িত্বপ্রাপ্ত কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক আহমেদ হোসেন বাংলানিউজকে বলেন, বিদ্রোহী প্রার্থীরা মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করতে শুরু করেছেন। শরীয়তপুর জেলার শরীয়তপুর পৌরসভা, ডামুড্যা পৌরসভা ও ভেদরগঞ্জ পৌরসভা, টাঙ্গাইলের সখীপুর পৌরসভা, ময়মনসিংহের ইশ্বরগঞ্জ পৌরসভা এবং নেত্রকোনার মদন পৌরসভার বিদ্রোহী প্রার্থীরা ইতোমধ্যেই মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করে নিয়েছেন।
বরিশাল বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম বাংলানিউজকে বলেন, বিদ্রোহী প্রার্থীদের কনভিন্স করার চেষ্টা চলছে। জোর করে তো আর কিছু করা যাবে না। নির্বাচনী আচরণবিধি মেনে বু্ঝিয়ে-সুঝিয়ে কনভিন্স করার চেষ্টা করছি। ১৩ ডিসেম্বরের আগে সাংগঠনিক কোনো ব্যবস্থাও নেওয়া যাবে না। তবে আমরা আশা করি, সফল হবো।
দলের রংপুর বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক খালিদ মাহমুদ চৌধুরী বাংলানিউজকে বলেন, বিদ্রোহী প্রার্থীদের সঙ্গে জেলা, উপজেলার নেতারা কথা বলছেন। তাদের সঙ্গে আলোচনা করে বোঝানোর চেষ্টা করছেন। যেহেতু তারা দলের লোক, তাই আমরাও বিদ্রোহী প্রার্থীদের সঙ্গে কথা বলছি, বোঝানোর চেষ্টা করছি। প্রথমবারের মতো দলীয়ভাবে স্থানীয় নির্বাচন হচ্ছে। তাই হয়তো কিছু ভুল বোঝাবুঝি হয়েছে। এখনও সময় আছে। আশা করি, আলোচনা ফলপ্রসূ হবে। আগামী ১৩ ডিসেম্বরের মধ্যে সব প্রত্যাহার হয়ে যাবে।
বাংলাদেশ সময়: ০৭৩০ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ০৭, ২০১৫
এসকে/এএসআর