ঈশ্বরগঞ্জ (ময়মনসিংহ) থেকে ফিরে: ‘মাঠ তো অহনও নীরব। প্রার্থীরা পাবলিকের বারাত যাইতাছে না।
ময়মনসিংহের ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলার মধ্যবাজার গোহাটা এলাকায় নাজিম উদ্দিনের চায়ের দোকানে জমে ওঠা আলোচনায় এমন মত দিলেন পৌরসভার ৪ নম্বর ওয়ার্ডের চরনিখলা এলাকার এ বাসিন্দা।
মোতালেবের কথায় সায় দেন নাজিম উদ্দিনও। কেটলি থেকে চায়ের কাপে গরম পানি ঢালতে ঢালতে ভোটারদেরও নির্বাচন নিয়ে মাথাব্যথা না থাকার কারণ জানালেন। বললেন, ‘ভোট লইয়্যা ভাবলে অইবো? অহন তো কাজ কামের দিন। গৃহস্থরা ধান লইয়্যা ব্যস্ত। আরো সাত/আটদিন যাক। পরে নির্বাচন নিয়া সবাই ভাববো’।
রোববার (০৬ ডিসেম্বর) দুপুর থেকে রাত পর্যন্ত আমেজহীন নির্বাচনের এমন অভিন্ন চিত্রের দেখা মিললো ঈশ্বরগঞ্জ পৌরসভার ২ নম্বর ওয়ার্ডের দত্তপাড়া, ১ নম্বর ওয়ার্ডের মধ্যবাজার গোহাটা, চরনিখলা, কাকনহাটি, দামদি, শিরাইসহ বিভিন্ন এলাকায়।
এ পৌরসভায় মেয়র পদে ভোটযুদ্ধে অবতীর্ণ প্রার্থীরা দৃশ্যপটে নেই। তাদের মাঝে এখনো শুরু হয়নি জনসংযোগের তোড়জোড়। তারা এখন ব্যস্ত আছেন মনোনয়নের আনুষ্ঠানিকতা নিয়ে।
প্রতীক বরাদ্দ পাওয়ার পর পরই তারা আদাজল খেয়ে মাঠে নামার পরিকল্পনা করায় অলস সময় কাটছে তাদের কর্মী-সমর্থকদেরও। ভোটের মাঠ নিরুত্তাপ থাকায় মাথা ঘামানোর চেয়ে হেমন্তের ধান কাটা নিয়েই বেশি ব্যস্ত বেশিরভাগ ভোটারও।
১৯৯৭ সালে গঠিত ঈশ্বরগঞ্জ পৌরসভায় মোট ভোটার ১৭ হাজার ৬৮ জন। প্রথম শ্রেণীর এ পৌরসভার কোনো কোনো ওয়ার্ড শহর নয়, নিদেনপক্ষে গ্রাম। এসব গ্রামের লোকজন ধানকাটা ও মাড়াইয়ের কর্মযজ্ঞে মেতেছেন।
‘আগে পেট, ভরে ভোট। ফলন ভালো হইছে। ধান কাটা শেষ হইলে পরে ভোটের চিন্তা’- বললেন লতিফ মিয়া। কাকনহাটি এলাকার এ বাসিন্দা ধানের বাম্পার ফলন পেয়ে রয়েছেন ফুরফুরে মেজাজে। ১০ কাঠা জমির প্রতি কাঠায় গড়ে ৪ মণ করে ফলন পেয়েছেন।
তবুও ভোটের হালহকিকত জানাতে ভোলেননি রাজনীতি সচেতন এ ভোটার- ‘মেয়র পদে ৪ প্রার্থী থাকলেও লড়াই হইবো হাবিব ও সাত্তারের মধ্যে। বিএনপির প্রার্থী মনে হয় খুব একটা সুবিধা করতে পারবো না। তার রেকর্ড ভালো না’।
দিনের বেশিরভাগ সময়েই ফাঁকা থাকছে এখানকার মানুষের প্রধান মিলনকেন্দ্র চায়ের দোকানগুলো। তবে সন্ধ্যা নামার সময়টাতে অনেকেই জড়ো হচ্ছেন এসব চায়ের দোকান কিংবা হোটেল-রেস্তোঁরায়।
তবে প্রসঙ্গক্রমে পৌর নির্বাচন নিয়ে কথা উঠলেও খুব একটা উৎসাহ-উদ্দীপনা দেখা যাচ্ছে না আড্ডায় শামিল হওয়া মানুষগুলোকে।
নির্বাচনী আমেজে কেন ভাটার টান, জানতে চাইলে ৯ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা ও মা বস্ত্রালয়ের দর্জি মোমতাজ উদ্দিনের সাফ জবাব, ‘এবার দলীয় মার্কার নির্বাচন। দলীয় মনোনয়নের কারণে অনেক প্রার্থীকেই বসে পড়তে হয়েছে। আর যারা দলীয় মনোনয়ন পেয়েছেন তারাও পাবলিকমুখী হচ্ছেন না। তাই নির্বাচনী উদ্দীপনাও অনেকটাই কম’।
সড়ক ধরে একটু এগোতেই বাকি মিয়ার চা দোকানেও দেখা গেলো বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের জটলা। দাঁড়িয়ে চায়ের কাপে চুমুক দিতে দিতে মান্নান ফকির ও হালিম উদ্দিনসহ কয়েকজন বললেন, ‘ভোটের মাঠ ড্যাম’।
‘কাউন্সিলর প্রার্থীরা হাটাচুড়া করলেও মেয়র প্রার্থীরা দলীয় নেতাকর্মীগরে নিয়াই আছে। মার্কা লইয়্যাই মনে হয় একবারে নামবো। আমগর কাছে আইবো’- বলছিলেন মান্নান ফকির।
‘দুই দলেই তো দলাদলি আছে। এইড্যাই বড় সমস্যা। ভোটের হিসাব-নিকাশ নির্বাচনের ১৫ দিন আগে’- পাশ থেকে বলে উঠলেন সালাহউদ্দিন নামের এক ক্ষুদে ব্যবসায়ী। তার মতে, ‘নির্বাচনে নৌকার সম্ভাবনাই বেশি। বিএনপি প্রার্থীরে ভোট দিলেও কাম হইবো না। উন্নয়ন তো করতে পারতো না। ভোট নষ্ট কইরা লাভ নাই’।
মেয়র প্রার্থীদের অদৃশ্য ভূমিকায় ভোটের মাঠ নীরব থাকলেও বসে নেই কাউন্সিলর প্রার্থীরা। প্রায় সব ওয়ার্ডেই এ পদে প্রার্থীরা নির্বাচনী ব্যয়ভারসহ আনুসঙ্গিক প্রস্তুতি সেরে নিচ্ছেন।
তাদের অনেকেই ময়মনসিংহ নগরীতে পোস্টারের অর্ডার দিয়ে রেখেছেন। প্রতীক পেলেই শুরু হবে পোস্টার ছাপার কাজ- জানালেন বেশ কয়েকজন ওয়ার্ড কাউন্সিলর প্রার্থী।
বাংলাদেশ সময়: ১০২৫ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ০৭, ২০১৫
এএসআর