ঈশ্বরগঞ্জ (ময়মনসিংহ) থেকে ফিরে: পর পর দু’বার পৌরসভা নির্বাচনে মেয়র পদে দাঁড়িয়ে শোচনীয়ভাবে পরাজিত হয়েছেন ফিরোজ আহমেদ বুলু। তিনি ময়মনসিংহের ঈশ্বরগঞ্জ পৌর বিএনপির সভাপতি।
বুলু তৃতীয়বারের মতো ঈশ্বরগঞ্জ পৌরসভা নির্বাচনে মেয়র প্রার্থী হওয়ায় ক্ষুব্ধ বিএনপির বেশিরভাগ নেতাকর্মী ও সমর্থকরা। দু’বারের ‘হারা’ এই প্রার্থীর মনোনয়ন মানতে না পেরে নির্বাচনী টিমওয়ার্ক থেকে কৌশলে নিজেদের সরিয়ে রেখেছেন অনেকে। ফলে বেকায়দায় পড়তে হচ্ছে বুলু সমর্থিতদের।
অন্যদিকে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ থেকে এবারো দলীয় মনোনয়ন পেয়েছেন ‘হ্যাট্রিক মেয়র’ মো: হাবিবুর রহমান হাবিব। কিন্তু নিজ দলীয় উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মাহমুদ হাসান সুমনের প্রকাশ্য বিরোধিতার মুখে ভোটের রাজনীতিতে চ্যালেঞ্জে রয়েছেন তিনি। নৌকা ডুবাতে কূটকৌশল করছেন উপজেলা চেয়ারম্যান- এ অভিযোগ তুলে নালিশ করেছেন কেন্দ্রের দায়িত্বশীল নেতাদের কাছে।
তৃণমূলের বিএনপি নেতাকর্মীদের অনেকের অভিযোগ, গ্রুপিংয়ের রাজনীতিতে সাবেক সংসদ সদস্য শাহ নুরুল কবির শাহীনকে কোনঠাসা করতে ফিরোজ আহমেদ বুলুকে দলীয় মনোনয়ন পাইয়ে দিয়েছেন উত্তর জেলা বিএনপির আহবায়ক খুররম খান চৌধুরী। আর এর পেছনে কলকাঠি নেড়েছেন দলে নবাগত লুৎফুল্লাহেল মাজেদ বাবু। তাদের অভিযোগ, বছর দুয়েক ধরে দলে ভিড়েই ছড়ি ঘুরাতে শুরু করেছেন ‘হঠাৎ রাজনীতিক’ বাবু।
উপজেলার মধ্যবাজার গো-হাটা এলাকায় রোববার (০৬ ডিসেম্বর) উপজেলা বিএনপির কার্যালয়ে গিয়ে দেখা গেছে, জনাপাঁচেক নেতাকর্মী নিয়ে নিজ দলের কয়েক নেতার বিরুদ্ধে খিস্তি-খেউর করছেন দলীয় মেয়র প্রার্থী বুলু। পাশেই তার নির্বাচনী কেন্দ্রের সারি সারি চেয়ার ফাঁকা, নেতাকর্মীশূন্য।
নেতাকর্মীশূন্য দলীয় ও নির্বাচনী কার্যালয় মনোনয়ন নিয়ে অসন্তোষের প্রতিফলন কি-না জানতে চাইলে ফিরোজ আহমেদ বুলুর উত্তর, ‘আরে না। দলে গ্রুপিং নেই। সবাই আমার সঙ্গেই আছেন’।
নির্বাচনী পরিবেশ নিয়ে তার কয়েকজন কর্মী প্রশ্ন তুললেও এ নিয়ে শঙ্কা নেই বুলুর মনে।
ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মীরা ভোটের মাঠে দাপট না দেখানোর কারণে ভাবলেশহীন বুলু মূলত তলে তলে ব্যস্ত নিজেদের কোন্দল সামলাতেই। তিনি বললেন, ‘এখন পর্যন্ত কোনো বাঁধা পাইনি। ঠিকমতোই কাজ করতে পারছি। কোনো সমস্যা হচ্ছে না’।
সরেজমিনে ঈশ্বরগঞ্জ পৌরসভার বিভিন্ন এলাকায় গেলে সাধারণ ভোটাররাও মন্তব্য করেন, প্রার্থী মনোনয়নে ভুল হওয়ায় শেষ পর্যন্ত এ পৌরসভায় হারের পুনরাবৃত্তি ঘটাতে পারে বিএনপি। বিএনপি প্রার্র্থীকে নিয়ে পজেটিভ মনোভাব দেখা গেলো না বিভিন্ন ওয়ার্ডের বেশিরভাগ ভোটারের মধ্যেও। কারণ হিসেবে অনেকেই অভিযোগ করেন, এ বছরের ১৬ জুন রাতে মদপান করে পৌর এলাকায় ঘোরাঘুরির সময় তাকে আটক করেছিল পুলিশ। এ সময় পুলিশের এক উপ-পরিদর্শককে (এসআই) থাপ্পড়ও মেরেছিলেন বুলু।
বিএনপি প্রার্থী বুলুর নেতিবাচক এসব কর্মকাণ্ডে এবারের ভোটযুদ্ধে তাকে ‘দুর্বল প্রার্থী’ হিসেবেও মনে করছেন অনেক ভোটার। বুলুর নির্বাচনী অফিসের মাত্র ২০ গজের মধ্যে একটি চায়ের দোকানে আড্ডা দেওয়া বেশ কয়েকজন বললেন, ‘জেতার জন্য বুলু নির্বাচন করেন না। এটা মূলত তার নেশা। এ কারণে দু’বার শোচনীয়ভাবে হারলেও তার খায়েশ মেটেনি’।
এখানেই বসে থাকা আব্দুল মোতালেব নামের এক ভোটার জানান, এ পৌরসভা নির্বাচনে মেয়র পদে মূলত প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে আওয়ামী লীগের প্রার্থী তিনবারের মেয়র হাবিবুর রহমান ও স্বতন্ত্র প্রার্থী উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার এম এ সাত্তারের মধ্যে। গত পৌরসভা নির্বাচনেও হাবিবের কাছেই পরাজিত হয়েছিলেন সাত্তার।
আওয়ামী লীগের প্রার্থী হাবিবুর রহমান হাবিব অভিযোগ করে বলেন, নিজ দলীয় উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান সুমন তাকে হারাতে নানা কূটকৌশল করছেন। দলীয় সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থীর পক্ষে প্রচারণা চালাচ্ছেন তিনি ও তার ছোট ভাই খায়ের। আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক আহম্মদ হোসেনের কাছে ইতোমধ্যে এ অভিযোগ করা হয়েছে।
অবশ্য নির্বাচনী কার্যালয়ে উপস্থিত হাবিবের কর্মী-সমর্থকরা মন্তব্য করেন, বিএনপির বার বারের পরাজিত প্রার্থী এবারও প্রার্থী হওয়ায় এখানে আওয়ামী লীগের জয় নিয়ে তারা খুব একটা চিন্তিত নন।
বাংলাদেশ সময়: ১১৫৫ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ০৮, ২০১৫
এএসআর