দেশের দুই গুণী নাট্যব্যক্তিত্ব আতাউর রহমান ও ফেরদৌসী মজুমদার। স্বাধীনতার পর থেকে তারা নাট্যচর্চাকে ঋদ্ধ করে চলেছেন নিরলস।
কাকতালীয় হলো, দু’জনেরই গ্রামের বাড়ি নোয়াখালীতে! আতাউর রহমান ১৯৪১ সালে নানাবাড়িতে জন্মগ্রহণ করেন। আর ফেরদৌসীর জন্ম ১৯৪৩ সালে।
স্কুলজীবনেই সাংস্কৃতিক অঙ্গনে পা রাখেন আতাউর রহমান। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘নটীর পূজা’ নাটক দেখে তার মঞ্চপাঠ শুরু। ষাটের দশকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র থাকাকালে ২১ ফেব্রুয়ারি উপলক্ষে শহীদুল্লাহ হল থেকে আব্দুল্লাহ আল মামুনসহ আতাউর রহমান প্রথম মঞ্চ নাটকে অভিনয় করেন। ১৯৬৮ সালে প্রতিষ্ঠিত নাগরিক নাট্য সম্প্রদায়ের সাধারণ সম্পাদক মনোনীত হন আতাউর রহমান।
১৯৭২ সালে ‘বুড়ো শালিকের ঘাড়ে রোঁ’ এর মাধ্যমে তার নাট্য নির্দেশনা শুরু। এরপর তিনি নির্দেশনা দেন বাদল সরকারের লেখা ‘বাকি ইতিহাস’। এর মধ্য দিয়েই বাংলাদেশে প্রথম দর্শনীর বিনিময়ে নাটক প্রদর্শন শুরু হয়। এরপর নিজের দলে ও অন্য দলের হয়ে অসংখ্য নাটকে নির্দেশনা দিয়েছেন তিনি।
মঞ্চ নাটকের নির্দেশনার পাশাপাশি আতাউর রহমান অভিনয়ও করছেন সমানতালে। রেডিও, টেলিভিশনেও রয়েছে তার উপস্থিতি। এছাড়া নাট্য বিষয়ক বই, নাট্যসমালোচনা, উপস্থাপনা, শিক্ষকতা, টেলিভিশন নাট্যকার, প্রবন্ধকার, বক্তাসব ক্ষেত্রেই রয়েছে আতাউর রহমানের সরব পদচারণা। ২০০১ সালে নাট্যক্ষেত্রে অবদানের জন্য একুশে পদক পান আতাউর রহমান।
এদিকে, মঞ্চ ও টেলিভিশন জগতের জীবন্ত কিংবদন্তি অভিনেত্রী ফেরদৌসী মজুমদার। স্বাধীনতা-উত্তরকালে দুই ভুবনে সফলতার সঙ্গে অভিনয় করে বিপুল জনপ্রিয়তা লাভ করেন তিনি। ‘কোকিলারা’, ‘সংশপ্তক’, ‘পায়ের আওয়াজ পাওয়া যায়’ নাটকগুলোতে অভিনয় করে ব্যাপক প্রশংসা লাভ করেন এই কিংবদন্তি।
ফেরদৌসী মজুমদারের জন্মস্থান বরিশালে হলেও তার পৈতৃক নিবাস নোয়াখালীতে। কিন্তু তিনি বেড়ে উঠেছেন ঢাকায়। ইডেন কলেজে ইন্টারমিডিয়েট পড়ার সময় ভাই মুনীর চৌধুরী থেকে প্রস্তাব পান একটি নাটকে রোবটের চরিত্রে অভিনয় করার, যার নাম ছিল ‘ডাক্তার আবদুল্লাহর কারখানা’। এটি লিখেছিলেন শওকত ওসমান। নাটকটি মঞ্চস্থ হয়েছিল ইকবাল হলে, বর্তমানে যেটি জহুরুল হক হল।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির পর ফেরদৌসী মজুমদার পাবলিক লাইব্রেরিতে ‘দন্ড ও দন্ডধর’ নাটকে অভিনয় করেন। এরপর বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি নাটকের ফোরামে জড়িয়ে পড়েন।
১৯৭২ সালে ‘থিয়েটার’ গঠন করা হয়- যেখানে ছিলেন আবদুল্লাহ আল মামুন, রামেন্দু মজুমদারসহ অনেকে। ফেরদৌসী মজুমদার সেই দলে যোগ দেন। বাংলাদেশ টেলিভিশনের প্রায় ৩০০-এর মতো নাটক করেন তিনি। আবদুল্লাহ আল মামুন ৮৬ মিনিটের একটি তথ্যচিত্র নির্মাণ করেন ফেরদৌসী মজুমদারকে নিয়ে, যার নাম ‘জীবন ও অভিনয়’।
তার অভিনীত উল্লেখযোগ্য নাটকগুলোর মধ্যে- কোকিলারা, এখনো ক্রীতদাস, বরফ গলা নদী, জীবিত ও মৃত, বাঁচা, অকুল দরিয়া, সংশপ্তক, চোখের বালি, নিভৃত যতনে, শঙ্খনীল কারাগার, এখনও দুঃসময়, পায়ের আওয়াজ পাওয়া যায় অন্যতম। তিনি মায়ের অধিকার (১৯৯৬), মেঘলা আকাশ (২০০১), দরিয়া পাড়ের দৌলতি (২০০৯) ছাড়াও বেশ কিছু সিনেমায়ও অভিনয় করেছেন।
ফেরদৌসী মজুমদার তার কাজের স্বীকৃতি হিসেবে পেয়েছেন একুশে পদক ১৯৯৮, শহিদ আলতাফ মাহমুদ স্মৃতি পদক ২০১৮, স্বাধীনতা পুরস্কার ২০২০ এবং বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার ২০২১-সহ অসংখ্য পুরস্কার ও সম্মাননা।
ব্যক্তিজীবনে মা-বাবার অমতে ১৯৭০ সালের ১৪ মার্চ রামেন্দু মজুমদারকে বিয়ে করেন ফেরদৌসী মজুমদার। তাদের একমাত্র মেয়ে ত্রপা মজুমদারও সংস্কৃতি অঙ্গনের সঙ্গে জড়িত। মজার বিষয় হচ্ছে, কাকতালীয়ভাবে মায়ের মতো একই তারিখে (১৮ জুন) জন্মগ্রহণ করেন অভিনেত্রী ত্রপা মজুমদার। রবিবার তার ৫০তম জন্মদিন।
বাংলাদেশ সময়: ০৯১৬ ঘণ্টা, জুন ১৮, ২০২৩
এনএটি/এমএইচএস