বেশ কয়েকদিন ধরেই শুটিং সেটের একটি ঘটনাকে কেন্দ্র করে খবরের শিরোনামে রয়েছেন ছোট পর্দার দুই অভিনয়শিল্পী রুকাইয়া জাহান চমক ও আরশ খান। পাল্টাপাল্টি অভিযোগে দ্বন্দ্বে জড়িয়েছেন তারা।
গেল শুক্রবার (৪ আগস্ট) উত্তরার একটি শুটিং বাড়িতে আদিব হাসান পরিচালিত ‘শ্বশুর বাড়িতে প্রথম দিন’ নাটকের দ্বিতীয় দিনের শুটিংয়ে তাদের মধ্যে কথা কাটাকাটি হয়। একপর্যায়ে শুটিং বন্ধ হয়ে যায়। বিষয়টি এখন ডিরেক্টরস গিল্ড ও অভিনয় শিল্পী সংঘের কাছে বিচারাধীন।
চমকের অভিযোগ এসব ঘটনার মূল ইন্ধন দাতা সহশিল্পী-বন্ধু আরশ খান। আরশের ব্যক্তিগত স্বার্থ হাসিল না হওয়ায় তার বিরুদ্ধে মিথ্যাচার করছেন অভিনেতা। বিষয়টি নিয়ে সবাই কথা বললেও পুরো সপ্তাহজুড়ে চুপ ছিলেন অভিনেত্রী চমক।
তবে নিজের ক্যারিয়ার এবং আত্মসম্মানের কথা ভেবে এবার মুখ খুললেন তিনিও। অকপটে জানিয়েছেন সহশিল্পী-বন্ধুর কাছ থেকে বিভিন্ন হয়রানি সম্পর্কে। এর বিচার চেয়ে লিখিত অভিযোগ ও সাধারণ ডায়েরি করেছেন তিনি।
বিষয়টি নিয়ে চুপ থাকার কারণ জানিয়ে চমক বলেন, আসলে এতদিন অনেক বিষয় নিয়েই খোলাসা করে কথা বলতে পারছিলাম না। কারণ, ডিরেক্টরস গিল্ড ও অভিনয় শিল্পী সংঘ থেকে কথা বলতে নিষেধ ছিল। যে কারণে চুপ ছিলাম। তাদের কাছে আমি লিখিত অভিযোগ দিয়েছি। দু-একদিনের মধ্যে বিষয়টি নিয়ে তাদের বসার কথা রয়েছে। এতদিন এই দিনটির অপেক্ষায় ছিলাম। কিন্তু এখনো যদি চুপ থাকি তাহলে সবার আমার প্রতি নেতিবাচক ধারণা তৈরি হবে। একপ্রকার বাধ্য হয়েই কথা বলতে হচ্ছে। প্রতিনিয়ত আমাকে নিয়ে সংবাদমাধ্যমে মিথ্যাচার করা হচ্ছে যেটা আমার ক্যারিয়ারের জন্য বড় ধরনের হুমকি। যার কারণে আর চুপ থাকার সুযোগ নেই।
আরশের নামে অভিযোগ এনে তিনি বলেন, আরশ আমার খুব ভালো বন্ধু ছিল এবং তার সঙ্গে বেশ কিছু কাজও করেছি। কিন্তু এই বন্ধুত্বের আড়ালে আরশ আমার কাছে বেশি কিছু দাবি করে বসে। এর মধ্যে আমি ইন্ডাস্ট্রির বেশ কিছু নায়িকার কাছ থেকে তার চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যের কথা জানতে পারি। জানার পর বন্ধুত্বের বেশি যে সম্পর্ক সে গড়তে চেয়েছিল তাতে আমি রাজি হইনি। এরপর আমি তাকে জানাই, যদি সে এভাবে আমাকে হ্যারেজ করতে থাকে তাহলে আমি তার সঙ্গে আর কাজ করব না। এরপর আরশ আমাকে জানায়, সে আমার সঙ্গে প্রফেশনালি কাজ করবে, এ ধরনের কথা আর বলবে না।
চমক আরও বলেন, আরশের সঙ্গে এরপর বেশকিছু কাজের প্রস্তাব আসে আমার কাছে। তখন পরিচালকদের জানাই একসঙ্গে এত বেশি কাজ করতে চাই না। মাসে এক-দুটি কাজ করতে চাই। এতে আমার প্রতি তার ক্ষোভ তৈরি হয়। সেই ক্ষোভ থেকে এ ধরনের বিষয় চলে এসেছে।
আরশের বিরুদ্ধে তিনি অভিযোগ করেন, সম্পর্কে না জড়ানোর ক্ষোভে তাকে শুটিং সেটে অনাকাঙ্ক্ষিতভাবে টাচ করা হতো। ফোন করে বিরক্ত করা হতো। এ ঘটনার সঙ্গে নাটকটির পরিচালকও জড়িত রয়েছেন বলে দাবি করেন চমক।
অভিনেত্রী জানান, আরশ ও আদিব পরস্পর খুব ভালো বন্ধু। আরশের ইন্ধনেই নির্মাতা তার কাছে ৩ লাখ ৮০ হাজার টাকা দাবি করে এবং টাকা না দিলে তার লোকজন এসে টাকা আদায় করবে বলেও হুমকি দেয়।
যোগ করে চমক বলেন, আরশ বলেছেন আগের দিন শুটিং শেষে তাকে কেন আমি নামিয়ে দিয়েছি। রাতের বেলা যদি একজন প্রডাকশন বয়কেও নামিয়ে দিতে হয় নামিয়ে দিতাম। এটা শুধু আরশ বলে নয়। তাছাড়া আমার বাসার পাশেই আরশের বাসা। সেদিন গাড়ি থেকে নামার সময়ও আরশ বলতেছিল- চমক তুমি আমার ‘অলিখিত প্রেমিকা’। তখন আমি বলেছিলাম তোমার আমার বন্ধুত্বের সম্পর্কের জন্যই কাজটি করতে রাজি হয়েছিলাম। এর বাইরে কিছু হলে কিন্তু কাজ করব না। আমাকে মানসিকভাবে বিব্রত করার জন্যই এগুলো সে করেছে। সেটে বিভিন্ন আকার ইঙ্গিতে কথা বলা টাচ করতে ছিল। যেগুলো আমি এড়িয়ে যাচ্ছিলাম কাজ শেষ করার জন্য। দ্বিতীয় দিন সকালে আরশ ফোন দিচ্ছিল। তখন আমি বললাম- তুমি নিজেই সেটে না এসে কেন কল দিলে? সেটে ডাকার দায়িত্ব তোমার না। এসব কথা নিয়ে সে ক্ষেপে যায়।
চমক আরও বলেন, শুটিং সেটে আমি পুলিশ ডেকেছি ব্যক্তিগত নিরাপত্তার জন্য। কাউকে হেনস্থা করার জন্য নয়। পুলিশ যখন সেট থেকে আমাকে নিয়ে বের হওয়ার চেষ্টা করেছে, তারা আমাকে বের হতে দেয়নি। জিম্মি করে রেখেছিল।
অভিনেত্রী বলেন, আরশের ব্যক্তিগত ইগো থেকে এটা শুরু হয়েছে। সেটা কেউ বুঝতে চাইল না। পেছনের গল্পটি কেউই জানে না। পরিচালককে আরশ ইন্ধন দেয় তখন পরিচালক আমাকে অপমানমূলক কথা বলতে শুরু করে। তখন আমি বললাম এ ধরণের কথা বললে কাজটি করতে পারব না। তখন সে বলে সেট থেকে যেতে হলে ৩ লাখ ৮০ হাজার টাকা দিয়ে যেতে হবে। কার এত বড় সাহস সেট থেকে বেরিয়ে যাবে। আমি একটি ফোন দিলে উত্তরার সব পোলাপান চলে আসবে। তখন নিজের নিরাপত্তার কথা ভেবে প্রশাসনের সহযোগিতা চাই।
চমক প্রশ্ন তুলেছেন নির্মাতার অসুস্থতা নিয়েও। তিনি বলেন, আমি জানতে চাই এই অল্প সময়ে আদিব হাসান কোন হাসপাতালে গিয়েছিল এবং ডাক্তার কি বলেছে। যদিও সে বিষয়টি পরিস্কার করে কিছু বলেনি। আর কিভাবেই এই অল্প সময়ে সুস্থ হয়ে সেটে আসে। এটি হওয়ার কারণে সেটের সবাই আমার ওপর ক্ষেপে যায়। সেটের সব মানুষকে উসকে দিয়ে আমার বিপরীতে নিয়ে গেছে আরশ। ব্যক্তিগত আক্রোশ থেকে এই কাজটি করেছে। পুরো ঘটনা নিয়ে লিখিত জানিয়েছি এবং এ নিয়ে সাধারণ ডায়েরি করেছি।
চমক জানিয়েছেন, মাসুম বাশার আঙ্কেল আর আমাকে ঘিরে যে বিষয়গুলো আসছে তা ভয়ংকর মিথ্যাচার। মাসুম বাশারের মেয়ে বলেছে আমি নাকি সেটে ধ্বংসযজ্ঞ চালিয়েছি তাহলে পুলিশ আসার পর তারা কেন তাদের বলেনি। তখন কেন চুপ ছিল? পুলিশ মানুষের বন্ধু। আমি তো কোনো সন্ত্রাস ডাকিনি। নিজের নিরাপত্তার জন্য তাদেরে এনেছি। এটা নিয়ে তারা বড় ইস্যু করছে। মাসুম আঙ্কেল বলেছেন পুলিশ ডেকে নাকি তাকে অপমান করা হয়েছে। এটা মিথ্যাচার। তারা আমাকে আটকাতে চেয়েছিল অথচ সংবাদমাধ্যমে বলেছে আটকানো হয়নি। এটাই তো বড় মিথ্যাচার। পুলিশ আমাকে নিয়ে বের হতে চেয়েছিল তারা বের হতে দেয়নি।
শুটিংয়ের প্রথম দিনের কথা উল্লেখ করে চমক বলেন, এর আগের দিন বাহিরের ১২ জনের মতো গুন্ডা টাইপের লোক সেটে এনে আড্ডা দেয় পরিচালক। এটি কি একটি সেটে শোভন?
পরেরদিন এ নিয়ে হুমকি দেওয়া হয়। তারপরও কি আমি চুপ থাকব? ছুটির দিন শিল্পী সংঘ আমার ডাকে দ্রুত সাড়া দিয়ে এসে রক্ষা করেছেন। এটা অনেক বড় কিছু। এই সময়টা আমি হুমকিতে ছিলাম। ভয়-ভীতি থেকে পুলিশ ডেকেছিলাম।
মাসুম বাশার আঙ্কেল পেছনের গল্প জানে না উল্লেখ করে চমক বলেন, যতটুকু তিনি দেখেছেন এবং পরিচালকের অসুস্থতার নাটকের কারণে তিনি আমার ওপর ক্ষেপে যান। আমার শুধু পরিচালকের সঙ্গে কথা কাটাকাটি হয়েছে অন্য কারো সঙ্গে নয়। বাজে কথা বলার জন্য আমি উত্তেজিত হয়েছিলাম এটা মানছি। কিন্তু মাসুম বাশার আঙ্গেলের সঙ্গে খারাপ আচারণ করিনি। তখন উভয়ের সঙ্গেই তার চেচামেচি হয়।
এই অভিনেত্রী বলেন, তিনি বয়স্ক একজন লোক তার সামনে যদি উচ্চ স্বরে কথা বলা হয় সেটিও একধরনের বেয়াদবি। এটার জন্য আমি সরি। কিন্তু তাকে মারতে গিয়েছি এটা বড় একটা মিথ্যাচার। মারতে গেলে সেদিনই বলত। শিল্পী সংঘে তখন তার কথা হয়েছিল তখন তো এমন কিছু বলেনি। ঘটনার তিন-চার দিন পর তার মেয়ে (অভিনেত্রী নাজিবা বাশার) ফেসবুক স্ট্যাটাস দিয়েছে। এতে পুরো ইন্ডাস্ট্রিতে আমার ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন করল। এই মিথ্যাচারের বিচার হওয়া উচিত। আমার সঙ্গে যে মিথ্যাচার হচ্ছে সে বিচার কে করবে? নাজিবা আমার বিরুদ্ধে সাইবার বুলিং করেছে। সেটা নিয়ে এখনো চুপ আছি। কারণ শিল্পী সংঘের প্রতি আমার আস্থা আছে। তাদের বিচারের অপেক্ষায় আছি। আমার বিরুদ্ধে যেসব ভয়ংকর মিথ্যাচার হচ্ছে তার বিচার চাই।
সবশেষে চমক বলেন, আরশের এ রকম নারী ঘটিত বিষয় আরও অনেক আছে। তদন্ত করলে সব বেরিয়ে আসবে। আমাকে যে হয়রানি করেছে তার কি হবে? আমি ভালো কাজ করার চেষ্টা করছি। ডাক্তারি পেশা ছেড়ে ভালোবেসে অভিনয়ে এসেছি নিরাপদ ও মুক্ত ভাবে কাজ করতে। আমি স্বাধীনভাবে কাজ করতে চাই। দয়া করে আমাকে হেয়প্রতিপন্ন না করে পাশে থাকবেন প্লিজ।
বাংলাদেশ সময়: ১৬০৪ ঘণ্টা, আগস্ট ১২, ২০২৩
এনএটি