ঢাকা, রবিবার, ৭ পৌষ ১৪৩১, ২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৯ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

বিনোদন

‘মিঞা ভাই’ চলে যাওয়ার পর প্রথম জন্মদিন

বিনোদন ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬১৩ ঘণ্টা, আগস্ট ১৮, ২০২৩
‘মিঞা ভাই’ চলে যাওয়ার পর প্রথম জন্মদিন আকবর হোসেন পাঠান ফারুক

সাদাকালো থেকে রঙিন পর্দায় ঢাকাই সিনেমার জীবন্ত কিংবদন্তি আকবর হোসেন পাঠান ফারুক। সবার কাছে যিনি ফারুক নামেই পরিচিত।

চলচ্চিত্রের মানুষের কাছে যিনি ‘মিঞা ভাই’। ঢাকাই সিনেমার এই কালজয়ী নায়ক চলতি বছরের ১৫ মে সিঙ্গাপুর মাউন্ট এলিজাবেথ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ইন্তেকাল করেন তিনি।

শুক্রবার (১৮ আগস্ট) প্রয়াত এই অভিনেতার জন্মদিন। ১৯৪৮ সালের আজকের এই দিনে জন্মগ্রহণ করেন ফারুক। বেঁচে থাকলে এবার ৭৫ বছরে পা রাখতেন তিনি।

মাত্র আট বছর বয়সে ফারুক তার মা আফজালুন্নেসাকে হারিয়েছিলেন। মাকে হারানোর পর জন্মদিনটা সেভাবে উদযাপন করা হয়নি তার। যা হতো সেটিও আর হয়নি ১৯৭৫ সালে ১৫ আগস্ট জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমানের প্রয়াণের পর। নিজের নেতা ও তার পরিবারের সদস্যদের মৃত্যুর মাসে আনন্দ করতেন না তিনি।  

ফারুকের শৈশব-কৈশোর কেটেছে পুরান ঢাকায়। ১৯৭১ সালে এইচ আকবর পরিচালিত ‘জলছবি’ চলচ্চিত্রে অভিনয় শুরু করেন তিনি। এরপর ১৯৭৩ সালে খান আতাউর রহমান পরিচালিত ‘আবার তোরা মানুষ হ’, ১৯৭৪ সালে নারায়ণ ঘোষ মিতা পরিচালিত ‘আলোর মিছিল’ দুটি মুক্তিযুদ্ধ ভিত্তিক চলচ্চিত্রে অভিনয় করেন তিনি।

১৯৭৫ সালে তার অভিনীত ‘সুজন সখী’ ও ‘লাঠিয়াল’ সিনেমা দু’টি ব্যবসা সফল ও আলোচিত হয়। ‘লাঠিয়াল’ চলচ্চিত্রের জন্য সেরা পার্শ্ব চরিত্রে অভিনেতা হিসেবে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার লাভ করেন। এরপর সময় যতো পেড়িয়েছে পর্দায় নিজেকে গড়েছেন ভেঙেছেন। অভিনয়ে সমৃদ্ধ করেছেন ঢাকাই সিনেমাকে।

একে একে অভিনয় করেছেন ‘সূর্যগ্রহণ’, ‘মাটির মায়া’, ‘নয়নমনি’, ‘সারেং বৌ’, ‘গোলাপী এখন ট্রেনে’, ‘নাগরদোলা’, ‘দিন যায় কথা থাকে’, ‘কথা দিলাম’, ‘মাটির পুতুল’, ‘সাহেব’, ‘ছোট মা’, ‘এতিম’, ‘ঘরজামাই’, ‘মিয়া ভাই’র মতো অসংখ্য সিনেমায়। সবশেষ ২০০৮ সালে ‘ঘরের লক্ষ্মী’ সিনেমায় অভিনয় করেন ফারুক।

তার অভিনীত প্রায় নব্বই ভাগ চলচ্চিত্র ব্যবসা সফল হয়েছে। দীর্ঘ ক্যারিয়ারে স্বীকৃতি হিসেবে পেয়েছেন ১৯৭৫ সেরা পার্শ্ব চরিত্রে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার। এরপর ১৯ বার মনোনীত হয়েও সেরা অভিনেতার পুরস্কার পাননি ফারুক। সবশেষ ২০১৬ সালের জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারে আজীবন সম্মাননায় ভূষিত হন এই কিংবদন্তি।

অভিনয়ের বাইরে নায়ক ফারুক একজন রাজনীতিবিদ। স্কুল জীবন থেকে আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত হয়েছিলেন। এরপর ১৯৬৬ সালে ছয় দফা আন্দোলনে যোগ দেন। সে সময়ে তার নামে প্রায় ৩৭টি মামলাও দায়ের করা হয়। ১৯৭১ সালে পাক হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেন। সবশেষ একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে ঢাকা-১৭ আসনে প্রথমবারের মতো সাংসদ নির্বাচিত হয়েছিলেন তিনি।

ব্যক্তিগত জীবনে নায়ক ফারুক ভালোবেসে বিয়ে করেন ফারজানা পাঠানকে। তাদের সংসারে দু’টি সন্তান রয়েছে। কন্যা ফারিহা তাবাসসুম পাঠান ও পুত্র রওশন হোসেন।

২০২১ সালের ৪ মার্চ সিঙ্গাপুরের মাউন্ট এলিজাবেথ হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য ভর্তি হন ফারুক। মৃত্যুর আগ পর্যন্ত সেখানেই চিকিৎসাধীন ছিলেন তিনি।

২০২২ সালের জন্মদিন উপলক্ষে হাসপাতাল থেকেই তিনি একটি ভিডিও বার্তা দিয়েছিলেন ফারুক। সেই ভিডিওতে বরেণ্য এই নায়ক বলেছিলেন, ‘আমার জন্মদিনকে সামনে রেখে দেশবাসীকে শুভেচ্ছা জানাই। আমি আল্লাহর রহমতে ভালো আছি। ইনশাআল্লাহ, আমি খুব শিগগিরই দেশে ফিরব। ’

কথা বলতে বলতে কান্নায় ফারুকের কণ্ঠ জড়িয়ে আসে। সেই জড়ানো কণ্ঠে দোয়া চেয়ে তিনি আরও বলেছিলেন, ‘দেশের মানুষের ভালোবাসা ফারুক কোনোদিন ভুলবে না। দেশের প্রতিটি মানুষের কাছে আমি দোয়া চাই, যেন খুব তাড়াতাড়ি দেশে ফিরে আসতে পারি। ’

কিন্তু জীবন্ত অবস্থায় আর ফারুকের ফেরা হয়নি প্রিয় মাতৃভূমিতে। চলতি বছরের মে মাসে যখন ফিরলেন তখন তিনি দেহ ত্যাগ করে চলে গেছেন অন্তিম যাত্রায়।  

বাংলাদেশ সময়: ১৬১৩ ঘণ্টা, আগস্ট ১৮, ২০২৩
এনএটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।