‘আমাদের এন্ড্রু কিশোর। আমি বলি গলিত সোনার নহর।
১৯৫৫ সালের এই দিনে রাজশাহীতে জন্মগ্রহণ করেন এন্ড্রু কিশোর। আটবার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারপ্রাপ্ত এই কণ্ঠশিল্পী ২০২০ সালের ৬ জুলাই না ফেরার দেশে চলে যান। এন্ড্রু কিশোর চলে যাওয়ার পর এটি চতুর্থ জন্মদিন।
এ দিন তাকে নিয়ে কনকচাঁপা লেখেন, আমার তো মনে হয় পৃথিবীর আনাচে-কানাচে যেখানেই বাংলা ভাষাভাষী আছেন সেখানেই প্রতি সেকেন্ডেই কারো না কারো কাছে তার গান বাজে। কেউ গায়, কেউ গুনগুন করে, কেউ শেখার চেষ্টা করে। কেউ তাকে, কেউ তার গান, তার কণ্ঠ নিয়ে গবেষণা করে।
তিনি লেখেন, আমি ভাবতেই চাই না তিনি (এন্ড্রু কিশোর) নেই, তবুও আমি মানুষ! তার অনুপস্থিতি আমাকে বিষন্ন করে। হঠাৎ আনমনা হয়ে ভাবি একদিন ওনাকে মজার রান্না করে খাওয়াবো, পরক্ষণেই সম্বিত ফিরে পাই, বাস্তবে ফিরে এসে বুঝি তিনি নেই এবং কী হারালাম!
এন্ড্রু কিশোর কী জীবদ্দশায় সঠিক সম্মান পেয়েছেন? সেই প্রশ্নই সামনে এনে কনকচাঁপা যুক্ত করলেন এভাবে, আবারও বলি আমাদের একজন কিশোরদা ছিলেন যিনি আমাদের অনেক দিয়েছেন, কিন্তু আমরা কি তাকে সঠিক সম্মান দিয়েছি? স্টেডিয়ামে বিশাল করে একটা এন্ড্রু কিশোর নাইট করে রাতভর তার গান পেটভরে, হৃদয় ভরে শুনেছি! এখন কোটিবার উচ্চারণ হয় “বড্ড অপূরনীয় ক্ষতি” হয়ে গেলো! তাতে তার আর কিছুই আসে যায় না। যায় কি?
এই পোস্টের সর্বশেষে প্রয়াত এন্ড্রু কিশোরকে তার জন্মদিেন শুভেচ্ছা জানিয়েছেন কনকচাঁপা।
প্রসঙ্গত, আব্দুল আজিজ বাচ্চুর অধীনে প্রাথমিকভাবে সংগীতে পাঠ গ্রহণ শুরু করেন এন্ড্রু কিশোর। বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের পর নজরুল সংগীত, রবীন্দ্র সংগীত, আধুনিক, লোকসংগীত ও দেশাত্মবোধক গানের শিল্পী হিসেবে রাজশাহী বেতারে তালিকাভুক্ত হন।
এন্ড্রু কিশোর চলচ্চিত্রে প্লেব্যাক শুরু করেন ১৯৭৭ সালে আলম খান সুরারোপিত ‘মেইল ট্রেন’ চলচ্চিত্রের ‘অচিনপুরের রাজকুমারী নেই যে তার কেউ’ গানের মধ্য দিয়ে। তার রেকর্ডকৃত দ্বিতীয় গান বাদল রহমান পরিচালিত ‘এমিলের গোয়েন্দা বাহিনী’ চলচ্চিত্রের ‘ধুম ধাড়াক্কা’। তবে এ জে মিন্টু পরিচালিত ১৯৭৯ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত ‘প্রতিজ্ঞা’ চলচ্চিত্রের ‘এক চোর যায় চলে’ গানটি গেয়ে শ্রোতাপ্রিয়তা লাভ করেন।
‘বড় ভালো লোক ছিল’ (১৯৮২) চলচ্চিত্রে প্লেব্যাক করে প্রথম জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার লাভ করেন এন্ড্রু কিশোর। মহিউদ্দিন পরিচালিত এই চলচ্চিত্রে সৈয়দ শামসুল হকের লেখা ‘হায়রে মানুষ রঙিন ফানুস’ গানটিতে কণ্ঠ দেন তিনি। এ গানের জন্য শ্রেষ্ঠ পুরুষ কণ্ঠশিল্পী বিভাগে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পান তিনি।
১৯৮৪ সালে আহমেদ ইমতিয়াজ বুলবুলের কথা ও সুরে ‘নয়নের আলো’ চলচ্চিত্রের তিনটি গানে কণ্ঠ দেন। গানগুলো হলো- ‘আমার সারা দেহ খেয়ো গো মাটি’, ‘আমার বাবার মুখে প্রথম যেদিন’ ও ‘আমার বুকের মধ্যে খানে’। এমন অসংখ্য চলচ্চিত্রের গানে কণ্ঠ দিয়েছেন এই শিল্পী, যা এখনো মানুষের মুখে মুখে ফেরে।
বাংলা গানের কিংবদন্তি এই সংগীতশিল্পী ‘প্লেব্যাক সম্রাট’ নামেও পরিচিত। বাংলা চলচ্চিত্রের গানে তাকে বলা যেতে পারে এক মহাসমুদ্র। যেখানে তিনি সাঁতার কেটেছেন কয়েক দশক ধরে।
আটবার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারপ্রাপ্ত এই কণ্ঠশিল্পী দীর্ঘ ১০ মাস ক্যান্সারে আক্রান্ত ছিলেন। অবশেষে ২০২০ সালের ৬ জুলাই না ফেরার দেশে চলে যান এই গায়ক।
তবে তার শত শত কালজয়ী গান এখনো মানুষের মুখে মুখে। এর মধ্যে- আমার সারা দেহ খেয়ো গো মাটি, হায়রে মানুষ রঙিন ফানুস দম ফুরাইলে ঠুস, ডাক দিয়াছেন দয়াল আমারে, কারে দেখাব মনের দুঃখ গো, আমি চিরকাল প্রেমের কাঙাল, এক জনমের ভালোবেসে ভরবে না মনসহ অসংখ্য শ্রোতাপ্রিয় গান আজও তাকে বাঁচিয়ে রেখেছে।
তার জনপ্রিয় গানের মধ্যে আরও রয়েছে, পৃথিবীর যত সুখ আমি তোমার ছোঁয়াতে খুঁজে পেয়েছি, সবাইতো ভালোবাসা চায়, বেদের মেয়ে জোসনা আমায় কথা দিয়েছে, তুমি আমার জীবন আমি তোমার জীবন, ভালো আছি ভালো থেকো, তুমি মোর জীবনের ভাবনা, চোখ যে মনের কথা বলে ইত্যাদি।
ব্যক্তিগত জীবনে লিপিকা এন্ড্রু ইতির সঙ্গে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন এন্ড্রু কিশোর। এ দম্পতির দু’টি সন্তান রয়েছে। প্রথম সন্তানের নাম সংজ্ঞা আর দ্বিতীয়জনের নাম সপ্তক।
বাংলাদেশ সময়: ১৭২৭ ঘণ্টা, নভেম্বর ০৪, ২০২৩
এনএটি