ঢাকা, রবিবার, ৭ পৌষ ১৪৩১, ২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৯ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

বিনোদন

গল্প এবং আমাকে ভালোবেসে দর্শক ‘হুব্বা’ দেখবে: মোশাররফ করিম

নাজমুল আহসান তালুকদার | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭০৭ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১৬, ২০২৪
গল্প এবং আমাকে ভালোবেসে দর্শক ‘হুব্বা’ দেখবে: মোশাররফ করিম

বহুমাত্রিক চরিত্রে অভিনয় করে নন্দিত হয়েছেন মোশাররফ করিম। দেশের গণ্ডি পেরিয়ে অনেক আগেই বিচরণ করেছেন ওপার বাংলার ওটিটি-সিনেমায়।

কুড়িয়েছেন প্রশংসা। আগামী ১৯ জানুয়ারি পশ্চিমবঙ্গে মুক্তি পাচ্ছে ব্রাত্য বসু পরিচালিত এ অভিনেতার নতুন সিনেমা ‘হুব্বা’। সিনেমাটি একই দিনে বাংলাদেশের প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পাচ্ছে।

‘হুব্বা’ সিনেমার নাম ভূমিকায় অভিনয় করেছেন মোশাররফ করিম। সিনেমাটি দেশের মানুষ কেন দেখবে? প্রশ্নের উত্তরে এই অভিনেতা বলেন, বাংলাদেশের দর্শক একটি হিন্দি, ইংলিশ এবং ওপেন প্ল্যাটফর্মের বিচিত্র ভাষার কাজগুলো কেন দেখে? যে গল্পের সঙ্গে তার নাড়ির যোগাযোগই নেই। কিন্তু সে গল্পের জন্যই দেখে। ‘হুব্বা’ গল্পের জন্যই দেখবে। আর আমি বিশ্বাস করি দর্শক আমাকে ভালোবাসে। এই দুই কারণেই তারা ‘হুব্বা’ দেখবেন।

‘হুব্বা’ সিনেমার ট্রেলার প্রকাশের পর সামাজিকমাধ্যমে রীতিমতো মোশাররফ-বন্দনা চলছে। দর্শকের মাঝে সিনেমাটি নিয়ে যে প্রত্যাশা তৈরি হয়েছে, মুক্তির পর সেটা কি পূর্ণতা পাবে? এ বিষয়ে মোশাররফ করিম বলেন, অবশ্যই প্রত্যাশা বাড়বে। পূর্ণতা না পাওয়ার কারণই নেই। কারণ চরিত্রটিই অসাধারণ। এই চরিত্রের অনেক স্তর, তারপর মানসিক দিকগুলোতে অভিনয়, পরিশেষে সেই চরিত্রটি হয়ে ওঠা এবং গল্পটি যেভাবে বলা হয়েছে এসব কারণেই মনে হচ্ছে দর্শক নিরাশ হবেন না। গল্পটা যেভাবে বলা হয়েছে সেটা পূর্ণতা পাবেই।

সিনেমাটি নিয়ে বেশ আত্মবিশ্বাসী মোশাররফ করিম। তার ভাষ্য মতে, বেশ নয়, প্রচুর। তিনি বলেন, এই সিনেমাটি দুই বাংলার দর্শককে আকর্ষিত করবে। তারা সিনেমাটি দেখে মজা পাবেন। আর নিজের কাজ নিয়ে আমি সব সময়ই আত্মবিশ্বাসী। কারণ ওই কাজটির সঙ্গে আমার সততা, শ্রম ও প্রত্যাশা মিশে থাকে।

‘হুব্বা’ খুব নৃশংস আর ভয়ংকর একটি চরিত্র। তাকে বলা হয় হুগলির দাউদ ইব্রাহিম। অভিনয় করতে গিয়ে কখনও সেই চরিত্রটি নিজের ব্যক্তিজীবনের সঙ্গে মেলাতে পেরেছেন? এমন প্রশ্নে এই অভিনেতা বলেন, প্রতিটি মানুষের মধ্যেই ভালো ও মন্দ স্বভাব থাকে। মন্দটা যত চেপে রাখা যায় সমাজে ততটাই ভালোমানুষ হিসেবে প্রতিষ্ঠা পাওয়া যায়। কিন্তু রাগ, ক্ষোভ, হিংস্রতা সবার মধ্যেই থাকে। আমিও রেগে গেলে খুব বাজেভাবে রিঅ্যাক্ট করি। সেজন্য পরে অনুশোচনা হয়। তাই চেষ্টা করি নিজের রাগ নিয়ন্ত্রণে রাখতে। ‘হুব্বা’র সঙ্গে সবার চরিত্রেরই মিল পাওয়া যাবে। তবে ‘হুব্বা’ মন্দ অনুভূতিগুলোর নিয়ন্ত্রণ করতে পারেনি বা করেনি। সে রাগ, প্রতিশোধ, হিংস্রতাই উপভোগ করেছে। সেই পরিণতিও তাকে বরণ করতে হয়েছে।

একই সময়ে আপনি আরও কাজে ব্যস্ত থাকেন। কখনও হুব্বা, কখনও ওসি হারুন। বেশ কিছু চরিত্র নিয়েই আপনাকে ভাবতে হয়। এতগুলো চরিত্র একসঙ্গে একটা মানুষ কীভাবে ধারণ করে? এ প্রশ্নে মোশাররফ করিমের উত্তর, এটা একটা উদাহরণ দিয়ে বলছি। ধরেন, একজন সৎ দোকানদার। মনোহারি দোকানদার। তিনি যদি লাড্ডু বানান, দাম ২ টাকা। আবার রসগোল্লাও বানান, দাম ৪ টাকা। কিন্তু লাড্ডুর জায়গায় লাড্ডুর কোয়ালিটি তিনি ঠিক রাখেন, আবার রসগোল্লার কোয়ালিটিও ঠিক রাখেন। অর্থাৎ তিনি যদি সৎ হন, তবে লাড্ডুকেও তিনি ধারণ করেন, আবার রসগোল্লাকেও ধারণ করেন। ব্যাপারটা এ রকম। সৎভাবে কাজটি করা।

দীর্ঘ অভিনয় জীবনে বহুমাত্রিক চরিত্রে অভিনয় করতে দেখা গেছে মোশাররফ করিমকে। এই অভিনেতার কথায়, আমি গল্পটি মাথায় নেই। সে অনুযায়ী চরিত্রটি ফুটিয়ে তোলার চেষ্টা করি।

অন্য কোনো পরিচয় নয় অভিনেতা হিসেবেই বেঁচে থাকতে চান মোশাররফ করিম। তিনি জানালেন, আমি অভিনেতা, যতদিন বাঁচি অভিনয় করতে চাই। আমি কাজটা করে আনন্দ পাই। আর এ আনন্দটা আমি সারা জীবন পেতে চাই। ভালো না লাগলে সেটা তো আমি করি না, করতে পারি না। মানুষ আমাকে অনেক বেশি ভালোবাসে। মাঝেমধ্যে অনেক ভক্ত দেখা করতে আসেন। এক-দুবার দুর্ঘটনাও ঘটেছে। আমাকে দেখে তারা অজ্ঞান হয়ে গিয়েছিল। আমি মানুষের এত ভালোবাসা পাওয়ার যোগ্য কিনা তা ঠিক জানি না।

বর্তমান সময়ে ওটিটি প্ল্যাটফর্ম রমরমা। কিন্তু এই মাধ্যমে বিনোদনের ওপর কোনও সেন্সরশিপ নেই। এ নিয়ে অভিনেতা মোশাররফ করিমের ভাষ্য, এটার সোজাসাপটা উত্তর আমি জানি না।

কেন তিনি জানেন না তার ব্যাখ্যায় মোশাররফ করিম বলেন, কখনও মনে হয় সেন্সরশিপ থাকা উচিত নয়। কারণ, সেন্সর থাকলে মুক্তমনা মানুষের গলা টিপে ধরা হয়। আবার সেন্সর না থাকলে কাজে সেচ্ছাচারীতা চলে আসে। এর উত্তর দেওয়া মুশকিল। তবে শিল্পীকেই বেছে নিতে হবে কোনটা করা উচিত এবং কোনটা করা উচিত নয়। শুধু অভিনয়শিল্পী নয়, শিল্পের সঙ্গে জড়িত সবাইকে শিল্পী বলতে বোঝানো হয়েছে। এতে সবারই দায়বদ্ধতা আছে। যখন এটার বিচার করার কেউ নেই তখন এটি শিল্পীকেই বিচার করতে হবে। সে নিজেই ভালো জানে তার উদ্দেশ্য কী।

শিল্পচর্চার বড় মাধ্যম থিয়েটার। থিয়েটার নিয়ে তার মত এমন, আমাদের এখানে মানসম্মত সেভাবে চর্চা কেন্দ্র নেই। তবে এখানকার কিছু মানুষ ব্যক্তিগত প্রেমের জায়গা থেকে আন্তর্জাতিক মানের সিনেমাটোগ্রাফার ও পরিচালক তৈরি হয়েছে। তাদের স্যালুট করতে চাই। আমাদের কিছু নেই তার মধ্যেও অনেক ভালো ভালো কাজ হচ্ছে। আমাদের এখানেও শিল্পচর্চার জন্য ইনস্টিটিউট দরকার। তাহলে আমরাও আরো অসাধারণ কাজ উপহার দিতে পারব।

বাংলাদেশ সময়: ১৭০৭ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১৬, ২০২৪
এনএটি 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।