অনেক দিন ধরে আড়ালে রয়েছেন ঢাকাই সিনেমার এক সময়ের জনপ্রিয় চিত্রনায়িকা সাদিকা পারভিন পপি। প্রথম দিকে পপির এ অনুপস্থিতিকে স্বাভাবিক মনে করেছিলেন চলচ্চিত্র সংশ্লিষ্টরা।
এ ঘটনায় আড়াল ভেঙে এলেন ক্যামেরার সামনে। দীর্ঘ ৩ বছর পর সামনে এসে পপি বললেন, তাকে নাকি খুন করতে খুনিও ভাড়া করেছিল তার পরিবার।
বৃহস্পতিবার (০৬ ফেব্রুয়ারি) সামাজিকমাধ্যমে পপির একটি ভিডিও প্রকাশ হয়। ওই ভিডিওতে তার বিরুদ্ধে মা-ভাই-বোনের আনা সব অভিযোগ মিথ্যা দাবি করেন পপি।
তিনি বলেন, দীর্ঘ ২৮ বছর সুনামের সঙ্গে চলচ্চিত্রে কাজ করেছি, মানুষের ভালোবাসা পেয়েছি। কিন্তু এই মুহূর্তে ক্যামেরার সামনে কথা বলছি একজন ব্যর্থ মানুষ হিসেবে। ব্যর্থ মানুষ বলছি এই কারণে, সবার মন জয় করতে পারলেও দীর্ঘ ২৮ বছর যাদের জন্য কাজ করেছি, এই হাতে যাদের লালন পালন করেছি তাদের কাছে আমি অযোগ্য একজন মানুষ। তাদের মনমতো চলতে পারিনি। সেজন্যই বলেছি আমি একজন ব্যর্থ মানুষ।
পপি বলেন, মানুষ তো সবসময় সবার কাছে ভালো হতে পারে না। আমি যখন ইনকাম করেছি দুহাতে দিতে পেরেছি তখন আমার পরিবারের কাছে অনেক প্রিয় একজন মানুষ ছিলাম। এখন তাদের প্রয়োজন অনুযায়ী দিতে পারি না। তাই তাদের কাছে গলার কাঁটা, শত্রু এবং অপছন্দের মানুষ।
সাম্প্রতিক ইস্যুতে পপি বলেন, দুইদিন যাবত দেখলাম আমার পরিবার কতটা নিচে নামতে পারে। কত হিংস্র ব্যবহার করতে পারে। কত নোংরা শব্দ ব্যবহার করতে পারে। মিডিয়ার কাছ থেকে সবসময় আমি সহযোগিতা পেয়েছি। পরিবারের কয়েকটা মানুষের মিথ্যা কিছু কথাবার্তা, মিথ্যা অভিনয়-নাটক, মিথ্যা অভিযোগ বলার সাথে সাথে যে মানুষগুলো আমাকে সবচেয়ে বেশি সাপোর্ট করার কথা তারাই মানুষের কথা অনুযায়ী আমাকে ভুলভাবে বাংলাদেশের মানুষের কাছে উপস্থাপন করেছেন। এর থেকে দুঃখজনক কিছুই হতে পারে না। যাদের জন্য কাজ করেছি আজ তারা আমার না। এজন্যই আল্লাহ বলেন, কেয়ামতের মাঠে কেউ কাউকে চিনবে না।
মূল প্রসঙ্গের বিষয়ে পপি বলেন, আজ যে অভিযোগগুলো আমার মা-বোন করছে। শক্তভাবে আমি প্রতিবাদ করছি। এর পুরোটাই বানোয়াট। তাদের স্বার্থ উদ্ধার হয়নি বলে সত্য একটা জিনিসকে অসত্য বলে প্রমাণিত করার চেষ্টা করছে। আমি একজন শিল্পী, আমি কি ভূমিদস্যু? যাদেরকে এই দুই হাতে ছোটবেলা থেকে লালন পালন করেছি, জীবনের যে সময়টা উপভোগ করার সেই সময়টা তাদের জন্য ব্যয় করেছি। এটা আমার দায়িত্ব না, তারপরও ভাই বোনকে নিজের সন্তান হিসেবে লালন পালন করেছি। নিজের ভবিষ্যৎ, ভালো লাগা, মন্দ লাগা অনেক কিছুই বাদ দিয়েছি। শুধু আমার ভাই-বোনকে মানুষ করার জন্য। কিন্তু এখন এসে দেখলাম মানুষ হয়নি। হিংস্র পশুরও কৃতজ্ঞতা থাকে। এদের মধ্যে সেই কৃতজ্ঞতা নেই।
প্রশ্ন নিয়ে পপি বলেন, কাদের নামে অভিযোগ করব? অভিযোগ করে বাইরের মানুষের নামে। যেহেতু আমার ভাই-বোন, বাবা-মাকে অনেক ভালোবাসি। তাই তাদের প্রতি কোনো অভিযোগ নেই। তাদের দ্বারা আমার জীবনে অনেক কিছু ফেস করেছি। নির্যাতিত, লাঞ্ছিত, অপমানিত হয়েছি।
যোগ করে পপি বলেন, আমি যে আয় করেছি তারা সব নিয়ে নিয়েছে। আমার সাথে বেইমানি করেছে। আমার টাকা দিয়ে কেনা সম্পত্তি আমার নামে ছিল না। আমার ব্যাংক অ্যাকাউন্ট শূন্য ছিল। আমার দেহটা ছাড়া কোনো কিছুই আমার ছিল না। সবকিছু তাদের নিয়ন্ত্রণে ছিল। আমিও তাদের নিয়ন্ত্রণে ছিলাম। একটা পর্যায়ে এসে মানুষের জীবনে বেঁচে থাকার জন্য অবলম্বন লাগে। একটা সময় যখন জানতে পারলাম আমার পরিবার আমাকে ঠকিয়েছে। জানার পরও চুপ ছিলাম। তাদের দ্বারা অনেক নির্যাতিত হয়েছি। আমাকে শারীরিকভাবে নির্যাতন করেছে। আমার টাকা চুরি করেছে। আমাকে খুন করতে খুনিকে টাকা দিয়ে ভাড়া করেছে। আমার আপন মা-ভাই-বোন জড়িত ছিল।
মায়ের ব্যাপারে তিক্ততা নিয়ে পপি বলেন, পৃথিবীতে সব মাই মা না। খারাপ মাও আছে। দুর্ভাগ্যবশত আমার মা হয়তো আমাকে সেই পরিমাণ ভালবাসতে পারেনি। আমার পরিবারের কাছে সবসময় সোনার ডিম পাড়া একটা হাঁসছিলাম, দুধ দেওয়া একটি গরু ছিলাম, টাকা ছাপানোর মেশিন ছিলাম। সন্তান হিসেবে কখনোই ভালোবাসাটা পাইনি। তারপরও কোনো অভিযোগ নেই, এখনও নেই।
পপি আরও বলেন, একটা মানুষ যখন মেশিন নিয়ে পরিণত হয় তখন তার মূল্য মেশিন হিসেবে থাকে। মানুষ হিসেবে থাকে না। আমার বাবা-মা আমার সঙ্গে অনেক বড় বিশ্বাসঘাতকা করেছে। আমার সব টাকা-পয়সা বোনের অ্যাকাউন্টে ছিল তারপরও কিছু বলিনি। ২০০৭ সালের ঘটনা বলছি। তখন জানতে পারলাম কোন কিছুই আমার নেই। তখন সিনেমার মুরুব্বীরা মিলে সবকিছু ঠিকঠাক করে দিয়েছিলেন।
প্রসঙ্গত, পপি সবশেষে প্রকাশ্যে এসেছিলেন ২০২২ সালে শিল্পী সমিতির নির্বাচনের সময়। সেসময় সাধারণ সম্পাদক প্রার্থী নিপুণ আক্তারকে সমর্থন দিয়েছিলেন ওই ভিডিও বার্তায়।
বাংলাদেশ সময়: ১৬২৪ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ০৬, ২০২৫
এনএটি