১৩ মার্চ বঙ্গবন্ধু আর্ন্তজাতিক সন্মেলন কেন্দ্রে অনুষ্ঠিত হলো জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার ২০১১-এর জমকালো অনুষ্ঠান। বিকেল ৪টায় অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
শেখ হাসিনা বলেন, “চলচ্চিত্র বিনোদনের অন্যতম প্রধান গণমাধ্যম। এ গণমাধ্যম জনগণকে গভীরভাবে প্রভাবিত করার ক্ষমতা রাখে। কাজেই চলচ্চিত্র জ্ঞান চর্চা, জাতি গঠন ও সমৃদ্ধ সমাজ এবং শিক্ষা সম্প্রসারণে শক্তিশালী অস্ত্র। দেশের সমৃদ্ধ ইতিহাস, ঐতিহ্য, সংস্কৃতি এবং মহান মুক্তিযুদ্ধের পাশাপাশি সামাজিক সমস্যাগুলো চলচ্চিত্রে তুলে ধরা প্রয়োজন। ”
শিশুতোষ চলচ্চিত্র নির্মাণের জন্য নির্মাতাদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “চলচ্চিত্রের মাধ্যমে শিশুদের মনে ভালো-মন্দ, ন্যায়-অন্যায় বোধের সু-ধারণা, সুন্দর আগামীর স্বপ্ন ও নতুন আশা জাগিয়ে দেওয়া সম্ভব। ”
তিনি আরও বলেন, “দর্শকরা যাতে ছবিটি দেখার পর কিছু শিক্ষা নিয়ে বাসায় ফিরতে পারে, কিছু বাণী পায়, যা তারা ঘরে ও সমাজে প্রয়োগ করতে পারে। সেদিকে নজর দিতে হবে। ”
শেখ হাসিনা বলেন, “সমাজ ও জনগণের প্রতি আপনাদের কর্তব্য অন্যদের তুলনায় অনেক বেশি। কারণ জনগণ আপনাদের অনুসরণ করে। জনগণকে চলচ্চিত্রের প্রতি আকৃষ্ট করতে ৩ এপ্রিল জাতীয় চলচ্চিত্র দিবস হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে। পূর্ণদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র নির্মাণের জন্য আমরা অনুদানের পরিমাণ বাড়িয়ে দিয়েছি। সরকার প্রথমবারের মতো স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র নির্মাণে অনুদান দিয়েছে এবং সিনেপেক্স তৈরিতে কর মওকুফ করেছে। এছাড়া সিনেমা হলে ছবি প্রদর্শনের ওপর ৩৫ শতাংশ সম্পূরক কর প্রত্যাহার করা হয়েছে। এফডিসি আধুনিকায়নে হাতে নেওয়া হয়েছে ৬০ কোটি টাকার একটি প্রকল্প। ”
আমাদের সবার সন্মিলিত প্রয়াস বাংলাদেশের চলচ্চিত্রকে আর্ন্তজাতিক অঙ্গনে সুপরিচিত ও সুপ্রতিষ্ঠিত করুক- এ কামনা ব্যক্ত করে তিনি তার বক্তব্য শেষ করেন।
তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনুর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে আরও বক্তৃতা করেন, তথ্য মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি এ কে এম রহমত উল্লাহ ও তথ্য সচিব হেদায়েতুল্লাহ আল-মামুন।
এরপর পুরস্কারপ্রাপ্তদের নাম ঘোষণা এবং তাদের উপর নির্মিত ভিডিওচিত্র প্রদর্শন করা হয়। এরপর আসে সেই শুভক্ষণ। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এক এক করে সন্মানিতদের হাতে পুরস্কার তুলে দেন। দেশীয় চলচ্চিত্রের জীবন্ত কিংবদন্তি নায়করাজ রাজ্জাককে দেওয়া হয় আজীবন সন্মাননা।
মোট ২২টি ক্যাটাগরির মধ্যে ১৬টি পুরস্কারই জিতে নিয়েছে মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক চলচ্চিত্র ‘গেরিলা’। চলচ্চিত্রটি পরিচালনা করেছেন নাসির উদ্দিন ইউসুফ বাচ্চু।
সেরা ছবি ছাড়াও শ্রেষ্ঠ পরিচালক, শ্রেষ্ঠ চিত্রনাট্যকার, শ্রেষ্ঠ সংলাপ রচিয়তা, শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রী, খল চরিত্রে শ্রেষ্ঠ অভিনেতা, শ্রেষ্ঠ সম্পাদক, শ্রেষ্ঠ শিল্প নির্দেশক, শ্রেষ্ঠ মেকআপম্যান এবং শ্রেষ্ঠ পোশাক ও সাজসজ্জা শাখায় পুরস্কার পায় ছবিটি।
সেরা অভিনেতা ও অভিনেত্রীর পুরস্কার পান ফেরদৌস আহমেদ ও জয়া আহসান। জয়া পুরস্কার জিতেছেন গেরিলা ছবিতে দুর্দান্ত অভিনয়ের জন্য।
নায়ক ফেরদৌস ‘কুসুম কুসুম প্রেম’ চলচ্চিতে অভিনয়ের জন্য জেতেন পুরস্কার। শ্রেষ্ঠ কাহিনীকারের পুরস্কার পান মুহম্মদ জাফর ইকবাল ‘আমার বন্ধু রাশেদ’ চলচ্চিত্রের জন্য।
এছাড়া `কে আপন কে পর` চলচ্চিত্রে কুশলী অভিনয়ের জন্য শ্রেষ্ঠ পার্শ্ব অভিনেতার পুরস্কার পেয়েছেন এম এ আলমগীর। একই চলচ্চিত্রে অভিনয় করে পার্শ্ব চরিত্রে শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রীর পুরস্কার জিতেছেন ফরিদা আক্তার ববিতা।
শ্রেষ্ঠ সংগীত পরিচালকের পুরস্কার পেয়েছেন হাবিব ওয়াহিদ (প্রজাপতি)। ইমন সাহা শ্রেষ্ঠ সুরকার (কুসুম কুসুম প্রেম), শ্রেষ্ঠ গীতিকার শফিক তুহিন (প্রজাপতি) কুমার বিশ্বজিৎ শ্রেষ্ঠ গায়ক (প্রজাপতি) এবং নাজমুন মুনিরা ন্যান্সি শ্রেষ্ঠ গায়িকার (প্রজাপতি) পুরস্কার পান।
অন্যান্য ক্ষেত্রে পুরস্কার বিজয়ীরা হলেন- শ্রেষ্ঠ চিত্রনাট্যকার নাসির উদ্দীন ইউসুফ বাচ্চু ও এবাদুর রহমান (গেরিলা), শ্রেষ্ঠ সংলাপ রচিয়তা নাসির উদ্দীন ইউসুফ বাচ্চু ও এবাদুর রহমান (গেরিলা), খল চরিত্রে শ্রেষ্ঠ অভিনেতা শতাব্দী ওয়াদুদ (গেরিলা) ও মিশা সওদাগর (বস নাম্বার ওয়ান), শ্রেষ্ঠ শিশুশিল্পী সেমন্তী (খণ্ডগল্প-১৯৭১), শ্রেষ্ঠ চিত্রগ্রাহক এল অপু রোজারিও (আমার বন্ধু রাশেদ), শ্রেষ্ঠ শব্দগ্রাহক রতন পাল (আমার বন্ধু রাশেদ), শ্রেষ্ঠ সম্পাদক সামির আহমেদ (গেরিলা), শ্রেষ্ঠ শিল্প নির্দেশক অনিমেষ আইচ (গেরিলা), শ্রেষ্ঠ মেকআপম্যান মো. আলী বাবুল (গেরিলা) এবং শ্রেষ্ঠ পোশাক ও সাজসজ্জা শিমূল ইউসুফ (গেরিলা)। ফখরুল আরেফীন প্রযোজিত ‘আল-বদর’ এবং চলচ্চিত্র ও প্রকাশনা অধিদপ্তর প্রযোজিত ‘লোকনায়ক কাঙ্গাল হরিনাথ’ শ্রেষ্ঠ প্রামাণ্য চলচ্চিত্রের পুরস্কার পায়।
প্রথমবারের মতো জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পেলেন- জয়া আহসান- শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রী (গেরিলা), মিশা সওদাগর - শ্রেষ্ঠ খলনায়ক (বস নাম্বার ওয়ান), শতাব্দী ওয়াদুদ - শ্রেষ্ঠ খলনায়ক (গেরিলা), হাবিব ওয়াহিদ- শ্রেষ্ঠ সংগীত পরিচালক (প্রজাপতি), ন্যান্সি- শ্রেষ্ঠ গায়িকা (প্রজাপতি), শফিক তুহিন- শ্রেষ্ঠ গীতিকার (প্রজাপতি)।
প্রধানমন্ত্রী বিদায় নেওয়ার পর অনুষ্ঠানের দ্বিতীয় পর্বে পরিবেশিত হয় মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। বাইরে তখন রিমঝিম বৃষ্টি। মঞ্চে অনুষ্ঠান উস্থাপনার জন্য হাজির হন ফেরদৌস ও কুসুম সিকদার।
বিভিন্ন শিল্পী নৃত্য ও গান দিয়ে পুরো অনুষ্ঠান প্রাণবন্ত করে রাখেন বঙ্গবন্ধু আর্ন্তজাতিক সন্মেলন কেন্দ্রের হল অব ফেইম।
অনুষ্ঠানে মিডিয়ার কলাকুশলীসহ বিভিন্ন অঙ্গনের সন্মানিত অনেক অতিথি উপস্থিত ছিলেন।
বাংলাদেশ সময়: ২২১৫ ঘণ্টা, মার্চ ১৩, ২০১৩
এমকে/সম্পাদনা: আসিফ আজিজ, নিউজরুম এডিটর