ঢাকা, মঙ্গলবার, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ২৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

বিনোদন

সব মাধ্যমেই লিখে যেতে চান সেজুল

কামরুজ্জামান মিলু, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, ছবি: জনি | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১০৫৪ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২৬, ২০১৪
সব মাধ্যমেই লিখে যেতে চান সেজুল

সেজুল হোসেন এর জন্মস্থান সুনামগঞ্জে। হাওড় এলাকায় বড় হবার কারণে বাড়ির চারপাশে থাকা অনেক বাউলের সঙ্গে মেশার সুযোগ পান তিনি।

এমনকি শাহ আবদুল করিমের সাথেও তার বেশকিছু সময় কাটানোর সুযোগ তৈরি হয়েছে। লেখালেখির শুরুটা ছিল চিঠি লেখার মাধ্যমে। এরপর গান, কবিতা ও টিভি নাটকসহ বিভিন্ন মাধ্যমে লেখালেখি করে যাচ্ছেন।

এরই মধ্যে গীতিকার হিসেবে নিজের অবস্থান তৈরি করে নিতে সক্ষম হয়েছেন। বর্তমানে তিনি ‘স্বপ্নসিঁড়ি অডিও ভিজুয়্যাল’ নামের প্রযোজনা প্রতিষ্ঠানের প্রধান নির্বাহী পদে কাজ করছেন। এবারের ভালোবাসা দিবসে তার কথা ও আয়োজনে প্রকাশ হয়েছে মিশ্র অ্যালবাম ‘ইস্কাটনের চিঠি’।

গল্পের শুরুতেই জানতে চাইলাম তার লেখার শুরুর সময়ের কথা। সেজুল বললেন, ‘আমার লেখালেখির শুরু চিঠি লেখার মাধ্যমে। তখন আমি ৭ম শ্রেণীতে পড়তাম। আমার বড় বোনকে দেখতাম পাশের গ্রামে তার বান্ধবীকে মনের মাধুরী মিশিয়ে চিঠি লিখছেন। সেই চিঠি ও চিঠির উত্তর লুকিয়ে লুকিয়ে পড়তাম। একটা সময় নিজেও লিখেছি। এরপর পড়াশুনার পাশাপাশি দৈনিক সবুজ সিলেট, দৈনিক আমাদের সময়, সকালের খবর ও একুশে টিভিতে মফস্বল সাংবাদিকতায় জড়িত ছিলাম। ’

পত্রিকায় সাংবাদিকতা করার পাশাপাশি ২০০৬ সালের দিকে তিনি গান লেখা শুরু করেন। তার লেখা প্রথম প্রকাশিত গান ছিল ‘দিন কাটে না’ শিরোনামের একটি গান। সুমন কল্যাণের সংগীতে বাউল ঘরনার এ গানটিতে কণ্ঠ দেন শাহিন । ‘গানচিল’ থেকে প্রকাশিত এ অ্যালবামের নাম ছিল ‘ধূসর বিকেল’।

এরপরই গান লেখার নেশা পেয়ে বসে তাকে। নিজের মেধা বিকাশের জন্য ২০০৯ সালে ঢাকায় চলে আসেন। উদ্দেশ্য ছিল মফস্বলে থেকে শহরে এসে নিজের যে সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড বা সৃজনশীলতার পরিপূর্ণ বিকাশ ঘটানো।

এর অনেকখানি পূর্ণও হয়েছে তার। কারণ অল্প সময়ে তার লেখা গান অনেক গুণী শিল্পীরা করেছেন। এরমধ্যে ছিল মমতাজ এর ‘না জানি কোন অপরাধে’, বাপ্পার  কণ্ঠে ‘ঢেউয়ের গল্প’, কিশোর এর ‘বিষন্ন প্রেমিক’, ভারতীয় বাঙালি শিল্পী অপরাজিতার কণ্ঠে ‘বিষন্ন কাঁটাতার’, সুমন কল্যাণ এর ‘একটা গানের আশায়’, লুৎফর হাসানের ‘উত্তরী হাওয়া’, সামিনা চৌধুরীর ‘ঝড়ো বাদল’ উল্লেখযোগ্য।

এবার জানতে চাইলাম তার লেখা ১০০ গান নিয়ে ১২টি অ্যালবামের যে কাজ তার অগ্রগতি নিয়ে। বললেন, ‘আমার এ প্রজেক্টে আমার লেখা ১০০ গান ১২টি অ্যালবামে গাইবেন ১০০জন শিল্পী। প্রথম অ্যালবাম ‘ইস্কাটনের চিঠি’ ইতিমধ্যে ভালোবাসা দিবসে প্রকাশ হয়েছে। পরের অ্যালবামও খুব শিগগিরই আসবে। পরেরটি থাকছে লোকগানের অ্যালবাম। নাম রেখেছি ‘উচাটন’। ’

সেজুলের বাবা আব্দুল বারী বেশকয়েক বছর ধরেই মধ্যপ্রাচ্যে থাকনে। মা আলেয়া খাতুন একজন গৃহিনী। পরিবারে সাত ভাই-বোনের মধ্যে তার অবস্থান তৃতীয়। সিলেটের একটি কলেজ থেকে বাংলা বিষয়ে মাস্টার্স সম্পন্ন করেছেন তিনি। সেভাবে কখনই কোথাও চাকরি করেননি।

তার মতে, ‘পরিবার চাইত বড় হয়ে সরকারি চাকরি করি, আমার ইচ্ছে ছিল না। ’

এবারের অমর একুশে গ্রন্থমেলায় ভাষাচিত্র থেকে ‘দখিন দুয়ারের হাওয়া’ নামে একটি কবিতার বই প্রকাশ পেয়েছে তার। এটি তার তৃতীয় কাব্যগ্রন্থ। এর আগে ২০১০ সালে ‘ফুল পাখির জন্মমৃত্যু’, ২০১৩ সালে ‘স্মৃতিমেঘ, স্বপ্নজলরেখা’ নামে একটি জার্নাল প্রকাশ পায়।

এছাড়া শাহ আবদুল করিমকে নিয়ে সংক্ষিপ্ত আত্মজীবনী লিখছেন তিনি। এর নাম ‘শাহ আবদুল করিম সহজপাঠ’। এবারের বইমেলাতে এটি প্রকাশ করার ইচ্ছে আছে তার।

লেখালেখি নিয়ে মিডিয়ার নানা শাখায় তার পদচারণা।   গান, কবিতা লেখার পাশাপাশি বেশকিছু টিভি নাটকও লিখেছেন তিনি। তার লেখা প্রথম নাটকের নাম ‘ফাঁদ’। নিজের চিত্রনাট্য ও পরিচালনায় এ নাটকটি প্রচারের অপেক্ষায় রয়েছে। তবে তার লেখা ও সোলায়মান জুয়েল এর পরিচালনায় ‘অপঘাত’ নামে একটি খন্ড নাটক এরইমধ্যে প্রচার হয়েছে।

সেজুল মনে করেন সৃষ্টিশীল জিনিসে লেখার মাধ্যম সবই। যখন যে মাধ্যমে লেখার আগ্রহ জন্মে সেটাই তিনি লিখে ফেলেন।

তারপরও মানুষের ভবিষৎ পরিকল্পনা থাকে। কাজ নিয়ে নানা ধরনের চিন্তা থাকে, সে বিষয়ে জানতে চাইলাম তার নিকট। বললেন ‘প্রতিটি সৃষ্টিশীল মানুষের সৃষ্টিশীল হয়ে ওঠার আগে একটা প্রস্তুতি পর্ব থাকে। বর্তমান সময়ে যারা গান, কবিতা লিখছেন তাদের প্রস্তুতি নেই বললেই চলে। তারা খুব দ্রুত জনপ্রিয় হবার বিভ্রান্তিতে ভুগছেন। আয়েজন করে কোন ভালো লেখা হয়না। তাই আমি সময় নিয়ে ভালোকিছু লিখে যেতে চাই। ’

বাংলাদেশ সময়: ১০৫১ ঘণ্টা, ২৬ ফেব্রুয়ারি, ২০১৪

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।