সংস্কৃতির বিভিন্ন ক্ষেত্রে প্রতি বছর সাতজন গুণী শিল্পীকে সম্মান জানাতে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমীর আয়োজনে ২০১৩ সালে ‘শিল্পকলা পদক’ প্রদান শুরু হয়। এ বছর নাট্যকলায় শিল্পকলা পদক পাচ্ছেন লাকী ইনাম।
আগামী ১৯ ফেব্রুয়ারি বিকেল সাড়ে ৩টায় বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমীর জাতীয় নাট্যশালা মিলনায়তনে ‘শিল্পকলা পদক ২০১৪’ প্রদান অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে থাকবেন রাষ্ট্রপতি মোঃ আবদুল হামিদ। লাকী ইনামের পাশাপাশি এবার শিল্পকলা পদকে ভ‚ষিত হবেন ওস্তাদ বজলুর রহমান বাদল (নৃত্যকলা), পণ্ডিত অমরেশ রায় চৌধুরী (কণ্ঠসংগীত), পণ্ডিত মদন গোপাল দাস (যন্ত্রসংগীত), সৈয়দ আব্দুল্লাহ খালিদ (চারুকলা), আশরাফুল আলম (আবৃত্তি), ও ড. শহিদুল আলম (আলোকচিত্র)।
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে থাকবেন সংস্কৃতি মন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর, সংস্কৃতি সচিব ড. রণজিৎ কুমার বিশ্বাস এবং বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমীর মহাপরিচালক লিয়াকত আলী লাকী। পদক প্রদানের পর থাকছে নৃত্যাঞ্চলের পরিবেশনায় তিনটি খন্ড নৃত্য। এগুলো হলো- ‘ময়ূর’, ‘পুতুল নাচ’ এবং ‘নাও ছাড়িয়া দে’।
১৯৭২ সালে ‘বুড়ো শালিকের ঘাড়ে রোঁ’ নাটকে অভিনয়ের মাধ্যমে মঞ্চে পদার্পণ করেন লাকী ইনাম। তিনি প্রায় ৩৫টি মঞ্চ নাটকে অভিনয় করেছেন। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য ‘মোহনগরী’, ‘অচলায়তন’, ‘নুরুলদীনের সারাজীবন’, ‘গ্যালিলিও গ্যালিলি’, ‘খোলস’, ‘জনতার রঙ্গশালা’, ‘সরমা’, ‘আমি বীরাঙ্গনা বলছি’, ‘গৃহবাসী’। নির্দেশিত মঞ্চনাটকের সংখ্যা প্রায় ২০টি। এর মধ্যে উল্ল্যেখযোগ্য- ‘সুলতানার স্বপ্ন’, ‘সুদূরে দিগন্ত’, ‘স্বপ্ন’, ‘সরমা’, ‘আমি বীরাঙ্গনা বলছি’, ‘গৃহবাসী’, ‘উদ্বাহ’, ‘প্রাগৈতিহাসিক’, ‘সেইসব দিনগুলো’, ‘পুশি বিড়াল ও একজন প্রকৃত মানুষ’।
মঞ্চনাটকে লাকী ইনামের অন্যতম চর্চার ক্ষেত্র কোরিওগ্রাফি। ‘অচলায়তন’, ‘মোহনগরী’, ‘মুক্তির উপায়’, ‘জনতার রঙ্গশালা’সহ বেশকিছু নাটকে তিনি দৃষ্টিনন্দন কোরিওগ্রাফি করেছেন। তার লেখা মঞ্চনাটকের মধ্যে উল্ল্যেখযোগ্য হচ্ছে- ‘সুদূর দিগন্ত’, ‘সুলতানার স্বপ্ন’ (বেগম রোকেয়ার ছোট গল্প অবলম্বনে), ‘আকাশ ভরা সূর্য তারা’ (বেগম রোকেয়ার ছোট গল্প অবলম্বনে), ‘পাথরের সুপ’ (ছোটদের নাটক), ‘কাবাবের কাণ্ড’ (ছোটদের নাটক), ‘বিভ্রাট’, ‘খোলস’ (রূপান্তরিত), ‘উষর উর্বশী’ (রূপান্তরিত), ‘ভিক্টোরিয়া স্টেশন’ (অনুবাদ)।
মঞ্চের পাশাপাশি ১৯৭২ সাল থেকে টেলিভিশন ও বেতারে নিয়মিত অভিনয় করে আসছেন লাকী ইনাম। তার অভিনীত বেতার ও টেলিভিশন নাটকের সংখ্যা প্রায় পাঁচ শতাধিক। এ ছাড়া তার লেখা প্রায় শতাধিক নাটক টেলিভিশন ও বেতারে প্রচারিত হয়েছে।
শিল্পকলা পদক প্রদানের পাশাপাশি বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমীর প্রতিষ্ঠার ৪১ বছর এবং মহান শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে ১৯ ফেব্রুয়ারি থেকে তিন দিনের অনুষ্ঠানমালার আয়োজন করা হয়েছে। একাডেমী প্রাঙ্গণ ‘নন্দনমঞ্চে’ প্রতিদিন সন্ধ্যা ৬টায় আলোচনা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও জাতীয় চিত্রশালার ১ নং গ্যালারিতে একাডেমীর ৪১ বছরের তথ্যভিত্তিক প্রদর্শনী এবং মহান শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে বাংলাদেশে অবস্থিত বিশ্বের বিভিন্ন দেশের দূতাবাসের অংশগ্রহণে বিভিন্ন ভাষায় সংগীত, নৃত্য ও আবৃত্তি অনুষ্ঠানের মাধ্যমে ২১ ফেব্রুয়ারি বিকেল ৩টায় কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে আয়োজন করা হয়েছে আলোচনা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।
গতবার শিল্পকলা পদক পান নাট্যকলায় খালেদ খান, নৃত্যকলায় আমানুল হক, যন্ত্রসংগীতে ওস্তাদ মতিউল হক খান, লোকসংস্কৃতিতে সাইদুর রহমান বয়াতী, চারুকলায় সমরজিৎ রায় চৌধুরী, কন্ঠসংগীতে ফাহমিদা খাতুন, চলচ্চিত্রে মানজারে হাসীন মুরাদ।
বাংলাদেশ সময় : ১৮৪৯ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৭, ২০১৫