ঢাকা, সোমবার, ২২ আশ্বিন ১৪৩১, ০৭ অক্টোবর ২০২৪, ০৩ রবিউস সানি ১৪৪৬

বিনোদন

ভারতের চলচ্চিত্র উন্নয়নে বাংলাদেশকে দরকার জানতাম না : ফারুকী

জনি হক, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০১৩৫ ঘণ্টা, অক্টোবর ৮, ২০১৫
ভারতের চলচ্চিত্র উন্নয়নে বাংলাদেশকে দরকার জানতাম না : ফারুকী মোস্তফা সরয়ার ফারুকী / ছবি: নূর- বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

ভারতীয় ছবি আমদানির অংশ হিসেবে বলিউডের দুই নির্মাতা রমেশ সিপ্পি ও মুকেশ ভাট চলতি সপ্তাহে ঢাকা এসেছিলেন। তারা বাংলাদেশ থেকে কিছু নিতে নয়, বাংলাদেশের চলচ্চিত্রকে কিছু দিতে এসেছেন বলে যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন; তা নিয়ে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন মোস্তফা সরয়ার ফারুকী।

আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন এই নির্মাতার দাবি, উন্নয়নের আশ্বাস দিয়ে মূলত নিজেদের ছবি ঢোকানোই ভারতীয়দের লক্ষ্য।
 
রমেশ ও মুকেশের সফর নিয়ে গত ৬ অক্টোবর রাতে ফেসবুকে বেশকিছু মন্তব্য করেন ফারুকী। তিনি লিখেছেন, ‘দুই দেশের চলচ্চিত্র উন্নয়নে যৌথভাবে কাজ করতে ভারত-বাংলাদেশ যৌথ টাস্কফোর্স গঠিত হয়েছে। প্রশ্ন হলো-উন্নয়নটা কার দরকার? ভারতের না বাংলাদেশের? মনে হচ্ছে দুই দেশেরই উন্নয়ন দরকার। ভারতের চলচ্চিত্র উন্নয়নে বাংলাদেশের সাহায্য দরকার আগে জানতাম না! আর যদি বাংলাদেশের চলচ্চিত্র উন্নয়নের দায়িত্ব বলিউড নিয়ে থাকে সেটাও আজগুবি ব্যাপার বলে মনে হচ্ছে! কখনও শুনিনি এক দেশের পক্ষে আরেক দেশের চলচ্চিত্রের উন্নয়ন ঘটানো সম্ভব। বিষয়টা যারা তত্ত্বাবধান করছেন, তারা চরম অপরিপক্কতা ও অস্থিরতার পরিচয় দিচ্ছেন। মনে রাখতে হবে, অস্থিরতা উইকেট পতনের কারণ। ’
 
বাংলাদেশে ভারতীয় ছবি আমদানি-রপ্তানির ব্যাপারে অবশ্য আপত্তি তোলেননি ফারুকী। তবে এ ক্ষেত্রে জাতীয় চলচ্চিত্র নীতিমালা তৈরির প্রয়োজনীয়তার কথা গুরুত্বের সঙ্গে উল্লেখ করেছেন তিনি। হিন্দি ছবি কতো শতাংশ আমদানি করা যাবে, নিজেদের ছবি কতো শতাংশ দেখাতে হবে, বিদেশি ছবির ওপর কতো শতাংশ কর থাকবে ইত্যাদি চূড়ান্ত করা জরুরি বলে মন্তব্য তার। তিনি জানান, ভারতের বিভিন্ন রাজ্যে প্রয়োজনমাফিক নীতিমালা আছে। এ কারণে স্থানীয় ছবি কম কর দেয়, হিন্দি ছবিকে বেশি কর দিতে হয়।
 
টাস্কফোর্স গঠনের চেয়েও কার্যকর যৌথ প্রযোজনা বাড়ানোকে গুরুত্বপূর্ণ ভাবছেন ফারুকী। তার মতে, সঠিক নীতিমালা থাকলে টাস্কফোর্সের প্রয়োজনীয়তা নেই। তাছাড়া টাস্কফোর্সে কাজ করার মতো যথাযথ বিজ্ঞ লোকজন থাকবে কি-না তা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছেন তিনি। এই সময়ে এসে টাস্কফোর্সে প্রযুক্তিগত, বাণিজ্যিক এবং সৃজনশীল চ্যালেঞ্জগুলো মাথায় রেখে সোচ্চার ভূমিকা পালনের মতো দক্ষ লোক থাকাটা দেশীয় চলচ্চিত্র শিল্পের উন্নয়নের জন্য জরুরি বলে অভিমত তার।
 
অবশ্য ভারতীয় বিনিয়োগকারীরা বাংলাদেশে নতুন দিনের ফিল্মমেকারদের ছবিতে বিনিয়োগ করলে ইতিবাচক ফল আসতে পারে বলে মনে করেন ফারুকী। কিন্তু সে সম্ভাবনা আছে কি-না তা নিয়ে সন্দিহান তিনি। তাই ধোঁয়াশা পরিস্থিতি এড়াতে দুই দেশের চলচ্চিত্র উন্নয়নের ক্ষেত্রে সহযোগিতার সফরে ওয়াকিবহাল মানুষজনকে পাঠানোর জন্য ভারতীয় চলচ্চিত্র সংশ্লিষ্টদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন ফারুকী। তখন তাদের সফরকে শুধুই নিজেদের ছবির রপ্তানির অংশ মনে হবে না বলে মতামত তার।
FAROOKI
ফারুকী ফেসবুকে আরও লিখেছেন, ‘ভারতের চলচ্চিত্র অঙ্গনে বহু মেধাবী মানুষ আছে যারা বাংলাদেশের ছবি সম্পর্কে ভালো ধারণা রাখে। যে দু’জন এসেছিলেন তারা ফাঁকা এবং হাস্যকর কথাবার্তা বলে গেছেন। আশংকার জায়গা হলো, এটা দুই দেশের মাঝে সত্যিকারের সহযোগিতা বাধাগ্রস্ত করতে পারে। কেউ কাউকে বোকা না ভেবে সত্যিকারের সহযোগিতার মনোভাব নিয়ে এগোলে দুই দেশেরই লাভ হবে। অর্থনৈতিক এবং শৈল্পিক লাভের চেয়ে সামাজিক এবং সাংস্কৃতিক লাভটা কম নয়। ’
 
অনেকের মতো ফারুকীও সংবাদমাধ্যমে রমেশ সিপ্পি ও মুকেশ ভাটের কথাবার্তা শুনেছেন। তার মতে, ‘তারা বলেছেন, আমাদের তরুণদের সম্ভাবনায় বিশ্বাস করেন, তাই আমাদের সিনেমাকে সাহায্য করতে এসেছেন। কিন্তু পুরো সাক্ষাৎকার পড়ে ভারতের ছবি আমদানি ছাড়া আর কোনও ব্লু প্রিন্ট খুঁজে পেলাম না। বাংলাদেশের কোন তরুণদের কাজ দেখে তারা কাদের পাশে এসে দাঁড়াতে চাইলেন ঠিক বোধগম্য হলো না। বাংলাদেশের কোন কোন ছবি দেখে তারা সম্ভাবনা খুঁজে পেলেন তা-ও জানা গেলো না। তাদের কথা সারমর্ম- ‘আমাদের ছবিটা তোমাদের দেশে চালাও’! এ ছাড়া আর কিছু আমি ভেবে নিতে পারছি না। তাদের এসব কথাবার্তাকেও পরিপক্ক মন্তব্য মনে হচ্ছে না। ’
 
ফেসবুকে এই লেখা দেখে ফারুকীর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বাংলানিউজকে এ ব্যাপারে আরও কিছু মন্তব্য করেন। তার কথায়, ‘বাংলাদেশের চলচ্চিত্র উন্নয়নের আসল সূত্র নিহিত আছে ভারতকে কপি করার মধ্যে নয়, ভারতের ফর্মূলা অনুসরণ করার মধ্যেও নয়। আমাদের নিজস্ব কনটেন্ট দিয়ে আমাদের নিজেদের স্টাইল তৈরি করাটাই হবে সামনের দিনের উন্নতির চাবিকাঠি। ভারত, চীন, ইরান নিজস্ব কনটেন্ট দিয়ে নিজেদের ঢঙে গল্প বলে সাফল্য পাচ্ছে। তবে পশ্চিমবঙ্গ এবং বাংলাদেশের মানুষ যেহেতু একই ভাষায় কথা বলে। তাই দুই বাংলার মধ্যে সমান আদান-প্রদান হলে নিজেদের কণ্ঠ বাঁচিয়ে রাখা সহজতর হবে। কিন্তু কলকাতার বন্ধুদের কাছে যতোখানি সহযোগিতা আশা করা হয়েছিলো, আমাদের প্রতি তাদের নিজেদের দুয়ার যতোখানি খোলা দরকার ছিলো, তারা তা খোলেননি। সকলের লক্ষ্য যদি হয় আমার ছবিটা তোমাদের দেশে চালাও, তাহলে তো সহযোগিতা হবে না। ’
 
ফারুকী বাংলানিউজকে আরও বলেছেন, ‘দুই দেশের চলচ্চিত্র ও কর্মীরা কাছকাছি এলে এবং বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক বজায় থাকলে দুই দেশেরই লাভবান হওয়ার সুযোগ আছে। সেটা যদি সত্যিকারের সহযোগিতা হয়। কিন্তু ভারতের কাছ থেকে খুব বেশি সহযোগিতার বাস্তব কিছু দেখতে পাচ্ছি না। ফাঁকা কথাই বেশি শুনছি। মনে রাখতে হবে, দুই দেশের কেউ কিন্তু কাউকে দয়া করছে না। আমাদের ভারতের বন্ধুদের বুঝতে হবে, বাংলাদেশের মানুষকে বোকা বানিয়ে ঘোরের মধ্যে ও অধীনস্ত রেখে বেশিদূর যেতে পারবেন না। বরং বন্ধুত্ব করলে অনেকদূর যাওয়া সম্ভব। ’
 
ফারুকী ভারতের প্রতি আন্তরিকতা ও ভারতের সঙ্গে সুসম্পর্কের কথাও উল্লেখ করেন স্ট্যাটাসে। তিনি লিখেছেন, ‘আমি ভারত-বাংলাদেশ সহযোগিতায় পরিপূর্ণ ঈমান আনা একজন মানুষ। আমার বহু কাজের সঙ্গী ভারতের সরকারি প্রতিষ্ঠান এনএফডিসি। ভারতের নিউওয়েভের আমি সমর্থক এবং বন্ধু। আমার কাজেরও তারা সমর্থক এবং বন্ধু। আমরা নানাভাবেই একে অপরের সঙ্গে জড়িত। এই সম্পর্ক এবং সহযোগিতা সামনে আরও বাড়বে। ’

* মোস্তফা সরয়ার ফারুকীর স্ট্যাটাসটি পড়তে এখানে ক্লিক করুন :

বাংলাদেশ সময় : ০১৩০ ঘণ্টা, অক্টোবর ০৭, ২০১৫
জেএইচ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।