ঢাকা, সোমবার, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

বিনোদন

গানের পাখি আঁখিতে মুগ্ধ ময়মনসিংহ

এম. আব্দুল্লাহ আল মামুন খান, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬০৯ ঘণ্টা, নভেম্বর ১৪, ২০১৫
গানের পাখি আঁখিতে মুগ্ধ ময়মনসিংহ ছবি : বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

ময়মনসিংহ: গানের প্রতি ভালোবাসা অহর্নিশ। জীবনের পথচলায় সুরকেই সঙ্গী করেছেন।

তাইতো ডাক পড়লে না করতে পারেন না। অসুস্থ শরীর নিয়েও ছুটে আসেন। সুরের মুর্ছনায় মাতিয়ে দেন মঞ্চ। সুশ্রী ও সুকণ্ঠী এ গায়িকা আঁখি আলমগীর।

সংগীত ভবুনের এ গানের পাখি শুক্রবার (১৩ নভেম্বর) রাতে মায়াবী কণ্ঠের জাদুতে মুগ্ধ করলেন শিক্ষা ও সংস্কৃতির নগরী ময়মনসিংহকে। আবার গ্ল্যামারাস এ কণ্ঠশিল্পীর হৃদয়ও জয় করে নিয়েছেন নগরীর সংগীতপ্রেমীরা। তাইতো আঁখি এখানকার শ্রোতাদের আখ্যা দিলেন ‘গান পাগল’।

জনপ্রিয় এ সংগীত তারকা মঞ্চ ঘুরে ঘুরে যতক্ষণ গাইলেন এ পাগল শ্রোতারা ঠিক ততক্ষণ মুহুর্মুহু হাততালি, মুঠোফোনে ছবি তোলা আর ভিডিও ধারণের প্রতিযোগিতায় নামলেন। পছন্দের গান শুনতে চিরকুটে প্রিয় তারকার কাছে আবদারও করছিলেন তারা।

অনুরোধে সাড়া দিয়ে এক এক করে সাতটি গান গাইলেন আঁখি। তার সঙ্গে কণ্ঠ মিলিয়ে গাইলো কয়েক হাজার শ্রোতা। শেষ বেলায় তার সঙ্গী হলেন ক্লোজআপ ওয়ান তারকা রাজিব। তাকে নিয়ে আরও দু’টি ডুয়েট গান উপহার দিয়ে শ্রোতাদের সুরের জোয়ারে ভাসিয়ে তবেই নামলেন মঞ্চ থেকে।

ময়মনসিংহ পৌরসভার উদ্যোগে চলতি বছরের এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষায় জিপিএ-৫ প্রাপ্ত কৃতি শিক্ষার্থীদের সংবর্ধনা অনুষ্ঠানকে ঘিরে শুক্রবার বিকেল থেকেই নগরীর টাউন হল মাঠে সংগীতানুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।

ময়মনসিংহ পৌরসভার মেয়র মো. ইকরামুল হক টিটু টানা পঞ্চমবারের মত কৃতি শিক্ষার্থীদের সংবর্ধনা অনুষ্ঠানকে স্মৃতির হীরক দ্যুতিতে জ্বলজ্বল করে রাখতে এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করেন। আর এতে শিক্ষার্থী ও তাদের অভিভাবকদের জন্য হাজির করলেন শ্রোতাপ্রিয় কণ্ঠশিল্পী আঁখি আলমগীর ও ক্লোজআপ ওয়ান তারকা রাজিবকে।

শুক্রবার রাত ৯ টা ৫ মিনিটে সবুজ পাড়ের কালো শাড়িতে অপূর্ব মনোহারিণী আঁখি টাউন হল মাঠের মঞ্চে উঠেন। ‘দমে দমে তোরে ডাকি’ গানের মাঝপথেই ধুম পড়লো আবদারের চিরকুটের। মঞ্চের বাম পাশের কৃতি ছাত্রীদের ‘হ্যালো সুন্দরীরা’ বলে গাইতে শুরু করলেন ‘তোর বিষের কাঁটা বাঁধলো আমার পায়’।

কিন্তু হাততালি কম হওয়ার বিষয়টি নজর এড়ায়নি এ কণ্ঠশিল্পীর, ‘এ গানটির সঙ্গে কিছুই বাজবে না। শুধু চলবে হাততালি। আপনাদের হাতের তালির জোর দেখবো আজ। ’

কানায় কানায় পূর্ণ টাউন হল মাঠের মাঝখান থেকে ‘পাঙ্খা পাঙ্খা’ রব উঠতে শুরু করলো। থামলেন আঁখি। খানিকটা সময় নীরব থেকে গালভরা হাসিতে হঠাৎ বলতে শুরু করলেন, ‘আমি আজ অসুস্থ। শুধুমাত্র মেয়রের সম্মানে এখানে চলে এসেছি। এসে অবাক হলাম। পাগলা এক অর্ডিয়্যান্স পেলাম। ’

আবদার রক্ষায় আঁখি গাইলেন, ‘বন্ধু আমার রসিয়া, খাটের উপর বসিয়া, একখানা গান বানাইছে’ এবং ‘শ্যাম পিরিতি আমার অন্তরে’। গোটা টাউন হল মাঠ তখন অন্য রকম উত্তেজনায় কাঁপছে। তখনই ভেসে আসলো ‘ও বাবু বাবুজিরে’ ও হিন্দি ‘নাগিন নাগিন’ গান।

মঞ্চের এপাশ-ওপাশ ঘুরে যখন সুরের মূর্ছনা তৈরি করছেন আঁখি আলমগীর, সেই মুহূর্তে শ্রোতাদের ছবি তোলার আগ্রহে দৃষ্টি দিলেন, বললেন ‘গান গাইতে গাইতে ছবি তোলা যায় না। ’ অতঃপর মঞ্চের দু’পাশে শ্রোতাদের সঙ্গে খানিকটা মুহূর্ত ক্যামেরাবন্দি হলেন।

মাইক হাতে বললেন, আমার শেষ গান গাইবো এবার। ড্রাম বেজে ওঠার সঙ্গে সঙ্গেই আঁখির কণ্ঠে এবার ‘জল পড়ে, পাতা নড়ে, তোমার কথা মনে পড়ে...। ’ গানের শেষপ্রান্তে ‘সার্কাস’ ভঙ্গিতে লাফিয়ে মঞ্চ উঠলেন ওয়ার্ড কাউন্সিলর রোকসানা শিরিন। অবাক হলেন দর্শকরা। কেউ কেউ ক্ষোভ ঝাড়লেন।

আঁখি বিষয়টি স্বাভাবিকভাবে নিলেও দর্শকদের দুয়োধ্বনিতে মিনিট কয়েক পর সটকে পড়লেন কাউন্সিলর।

এরপর ক্লোজআপ তারকা রাজিবের সঙ্গে আঁখি গাইলেন, ‘আমার গরুর গাড়িতে বউ সাজিয়ে’ এবং ‘চিরদিনই তুমি যে আমার, যুগে যুগে আমি তোমারই’। তারপর বিদায় জানালেন ময়মনসিংহকে। আঁখির আগে রাজিবও গাইলেন ‘মন ভাবে তারে, এ মেঘলা দিনে, শীতল কুয়াশে তার স্পর্শে’সহ বেশ কয়েকটি জনপ্রিয় গান।

গানের পর্ব শেষ হতেই রাজিব এমন অনুষ্ঠান আয়োজনের জন্য বিনম্র কৃতজ্ঞতা জানালেন ময়মনসিংহ পৌরসভার মেয়র মো. ইকরামুল হক টিটু’র প্রতি, ‘মেয়র আপনাদের জন্য অনেক পরিশ্রম করেছেন। তার কাছে গিয়ে কেউ খালি হাতে ফিরে না। তিনি আপনাদের সঙ্গে সারা জীবন থাকার ওয়াদা করেছেন। ’

শুক্রবার সকাল সাড়ে ৯টা থেকে রাত সাড়ে ১০টা পর্যন্ত টাউন হল মাঠে জিপিএ-৫ প্রাপ্ত শিক্ষার্থী ও তাদের অভিভাবকরা টানা তের ঘণ্টা অবস্থান করে অনন্য এক রেকর্ড গড়েন। ‘ময়মনসিংহের ইতিহাসে একটানা দীর্ঘ সময় সবাই একসঙ্গে হাসি-আনন্দে মেতে ওঠার ঘটনা এটাই প্রথম’ অনুষ্ঠান মঞ্চে বলেই ফেললেন উচ্ছ্বসিত আওয়ামী লীগ নেতা মেয়র টিটু।

‘গান, নৃত্যসহ বিভিন্ন বিষয়াদি নিয়ে ভিন্নমাত্রার এ আয়োজনে আমরা সত্যিই বিমোহিত। আমাদের জীবনে দেখা সেরা সুশৃঙ্খল একটি অনুষ্ঠান’- বাংলানিউজকে বলছিলেন আনন্দমোহন কলেজ থেকে এইচএসসি উত্তীর্ণ এখলাছ জার্সিস। তার সঙ্গে অভিন্ন কণ্ঠ মেলাতে দেখা গেলো মাহমুদুল হাসান, আয়মানসহ অনুষ্ঠানে আগত অসংখ্য শিক্ষার্থীকে।

তাদের ভাষ্যে, ‘মেয়র সকাল থেকেই এক মুহূর্তের জন্যও এখান থেকে নড়েননি। সবার সঙ্গে মিলেমিশে থাকতে পারেন এবং ভালোবাসেন। নৌকা বাইচ উৎসবের আয়োজন করে তিনিই নগরবাসীর মাঝে নির্মল আনন্দের উপলক্ষ তৈরি করতে পারেন। ’

বাংলাদেশ সময়: ১৬০৭ ঘণ্টা, নভেম্বর ১৪, ২০১৫
এইচএ/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।