ঢাকা, রবিবার, ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ২২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

বিনোদন

আমিরের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ ও থানায় অভিযোগ

বিনোদন ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪২১ ঘণ্টা, নভেম্বর ২৫, ২০১৫
আমিরের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ ও থানায় অভিযোগ আমির খান

ভারতে ক্রমবর্ধমান ধর্মীয় অসহিঞ্চুতা নিয়ে বিতর্কিত মন্তব্য করায় আমির খানের বিরুদ্ধে দেশের ‘সম্মানহানি’র অভিযোগ করা হলো পুলিশের কাছে। মঙ্গলবার (২৪ নভেম্বর) নিউ অশোক নগর থানায় এ অভিযোগ করেন স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র নির্মাতা উল্লাস পিআর।

তিনি বলেন, ‘আমাদের মৌলিক কর্তব্য রয়েছে। এর মধ্যে অন্যতম হলো জাতির মধ্যে সম্প্রীতি বজায় রাখা। তাই এ ধরনের বিবৃতি দেওয়ার সময় প্রথমেই উল্লেখ করা উচিত কোন সমাজের কথা বলছেন তারা, যেখানে মানুষ আতঙ্কিত পরিস্থিতির মধ্যে থাকে। ’


একই নির্মাতা পুলিশকে ‘ঠুল্লা’ বলায় আমিরের ‘পিকে’ ছবির বিরুদ্ধেও অভিযোগ তুলেছিলেন। এবারের অভিযোগে উল্লাস আরও বলেন, ‘তারকাদের উচিত তাদের অবস্থান ও দায়িত্ব বুঝে মন্তব্য করা। শান্তি ও সমৃদ্ধি আনতে না পারেন, অসহিঞ্চুতা ও অন্যান্য প্রসঙ্গে কথা বলে মানুষের মধ্যে ভীতি তৈরি করা উচিত নয় তাদের। ‘

দেশজুড়ে অশান্তি ও হতাশা বিরাজ করছে- এমন নেতিবাচক মন্তব্য করায় একের পর এক সমালোচনার তীরে বিদ্ধ হচ্ছেন আমির। তার প্রতি নিন্দা জানিয়েছেন অনেক তারকাও। এর আগের দিন এক পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে বলিউডের এই সুপারস্টার জানান, সন্তানের নিরাপত্তাহীনতার কথা ভেবে তার স্ত্রী কিরণ রাও ভয়ে দেশ ছাড়ার পরামর্শ দিয়েছিলেন। তিনি বলেছিলেন, ‘‘আমার স্ত্রী কিরণ (রাও) পর্যন্ত উদ্বিগ্ন হয়ে জানতে চেয়েছিলো, আমাদের দেশ ছেড়ে চলে যাওয়া উচিত কি-না। ও সন্তানের ভবিষ্যতের কথা ভেবে ভয় পাচ্ছে। ’ 

আমির যে অনুষ্ঠানে একথা বলেন, সেখানে ছিলেন কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলি এবং সংসদ বিষয়কমন্ত্রী এম বেঙ্কাইয়া নায়ডু, যোগাযোগমন্ত্রী রবিশঙ্কর প্রসাদ এবং সংসদ বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী রাজীবপ্রতাপ রুডি। তাই কেন্দ্রীয় মানবসম্পদ উন্নয়নমন্ত্রী স্মৃতি ইরানি বলেন, ‘আমির খান আমাদের দেশের পর্যটন শিল্প— ইনক্রেডিবল ইন্ডিয়ার ব্র্যান্ড-দূত। তিনি অরুণ জেটলির সামনে ওই কথাগুলো বলতে পেরেছেন, এটাই তো ইনক্রেডিবল! এটাই তো প্রমাণ করে, দেশে বাকস্বাধীনতা রয়েছে। ’ 

এদিকে মুম্বাইয়ের বান্দ্রায় আমিরের বাড়ির সামনে হিন্দুসেনার শতাধিক কর্মী বিক্ষোভ করেছে। ‘আমির খান মুর্দাবাদ’, ‘আমির খান চলে যাও’ স্লোগান দেন তারা। এ কারণে বাড়ানো হয়েছে সেখানকার নিরাপত্তা ব্যবস্থা। বেড়েছে পুলিশি পাহারা।  প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর ‘স্বচ্ছ ভারত প্রকল্পে’র ব্র্যান্ড-দূত আমির অসহিষ্ণুতা নিয়ে মুখ খোলায় লাইন দিয়ে আক্রমণে নেমে পড়েন একাধিক কেন্দ্রীয় মন্ত্রী। পটনা এবং এলাহাবাদে বিজেপি কর্মী-সমর্থকেরা তার ছবিতে কালি মাখান।  আ্মির যে অ্যাপের ব্র্যান্ড-দূত, সেই ‘স্ন্যাপডিল’ অ্যান্ড্রয়েড অ্যাপের বিরোধিতা করে টুইটারে দেখা যাচ্ছে ‘অ্যাপওয়াপসি’ হ্যাশট্যাগ।  

বিজেপি আগের দিন থেকেই নিন্দা জানাচ্ছে আমিরকে। তার সমালোচনা করেছেন বলিউড অভিনেতা অনুপম খের, পরেশ রাওয়াল, অভিনেত্রী রাভিনা ট্যান্ডন, ওস্তাদ রশিদ খানসহ অনেকে। পুনের পরিবেশ মন্ত্রী রামদাস কদম এই মন্তব্য বিশ্বাসঘাতকতা হিসেবে অভিহিত করেছেন। তিনি বলেন, ‘ভারতে নিরাপত্তাহীনতায় ভুগলে আমির পাকিস্তানে চলে যেতে পারেন। ভারতে আমরা আমির খান, শাহরুখ খান ও সালমান খানকে ভালোবাসা দিয়েছি। আমরা তাদের শিল্পকে মূল্য দেই, ধর্মকে নয়। তাহলে কি দুধ দিয়ে কালসাপ পুষেছি?’

কেন্দ্রীয় সংখ্যালঘু বিষয়কমন্ত্রী মুখতার আব্বাস নকভির কথায়, ‘উদ্দেশ্যপ্রণোদিত রাজনৈতিক প্রচারে প্রভাবিত হয়ে আমির এমন মন্তব্য করেছেন। এতদিন এ দেশের যে মানুষজন তাকে সম্মান দেখিয়েছেন, আমির তাদের অপমান করেছেন। ’ এক কদম এগিয়ে কেন্দ্রীয় নগরোন্নয়ন প্রতিমন্ত্রী বাবুল সুপ্রিয় টুইটারে লিখেছেন, ‘আমিরকে বলা হোক, তিনি যেন পিকে’র ধাঁচে ইসলাম ধর্মের প্রবক্তাকে নিয়ে শ্লেষাত্মক ছবি করে সিরিয়ায় যান। দেখা যাবে, কারা অসহিষ্ণু’। সাংবাদিক বৈঠকে বিজেপির সংখ্যালঘু মুখ তথা মুখপাত্র শাহনওয়াজ হুসেনের মতে, দেশবাসীকে অপমান করেছেন আমির। লেখিকা তসলিমা নাসরিন টুইটারে বলেন, ‘বিশ্বের সর্বত্রই কম-বেশি অসহিষ্ণুতা আছে। আমির খান ও তার পরিবারের জন্য ভারতই সবচেয়ে নিরাপদ। ’


অসহিষ্ণুতা বিতর্কে সম্প্রতি মুখ খুলেছিলেন অমিতাভ বচ্চন, সলমন খান, সরোদ শিল্পী আমজাদ আলি খানও। প্রশ্ন উঠছে, সেই সময় বিজেপি’র প্রথমসারির নেতা-মন্ত্রীরা তেমনভাবে সরব না হলেও আমিরের বেলায় কেন্দ্র এবং বিজেপি এত তৎপর কেন। রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের একাংশের মতে, সামাজিক আন্দোলনের ক্ষেত্রেও আমিরের জনপ্রিয়তা ব্যাপক। টেলিভিশনে ‘সত্যমেব জয়তে’ অনুষ্ঠান তাঁকে বাড়তি গ্রহণযোগ্যতা দিয়েছে। দ্বিতীয়ত, গত বছর গান্ধীজির জন্মদিনে ‘স্বচ্ছ ভারত’ কর্মসূচির উদ্বোধনের দিন আমির ছিলেন প্রধানমন্ত্রীর পাশেই। সেই প্রেক্ষিতে তার মন্তব্য কেন্দ্রের কাছে অনেক বেশি ‘অস্বস্তিকর’। সেকারণেই পাল্টা আক্রমণের বহর বেশি।  

তবে আমিরকে অনেকে সমর্থনও জানিয়েছেন। এ তালিকায় আছেন দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়াল, কংগ্রেসের সহ-সভাপতি রাহুল গান্ধী, অস্কারজয়ী সুরস্রষ্টা এআর রহমান। সিপিএমের সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরির টুইটারে বলেন, ‘সত্বযি কথা বলেছেন বলে আমিরকে হুমকি দেওয়া উচিত নয়’। কোনো মন্তব্য করতে অস্বীকৃতি জানান মহারাষ্ট্রের মুখ্যমন্ত্রী দেবেন্দ্র ফাড়নাবিস ও ন্যাশনালিস্ট কংগ্রেস পার্টির সভাপতি শরদ পাওয়ার।  রাহুল টুইটারে বলেন, ‘যারাই সরকার এবং মোদী’জিকে প্রশ্ন করেছেন, তাদেরকে দেশবিরোধী, জাতীয়তাবিরোধী বা উদ্দেশ্যপ্রণোদিত তকমা দেওয়া হয়েছে। তাদের গলার জোরে, ভয় দেখিয়ে বা কুৎসা করে চুপ করানোর পরিবর্তে সরকার বরং বোঝার চেষ্টা করুক, কেন তারা বিচলিত। এটাই ভারতের সমস্যা মেটানোর রাস্তা। ’


আমির অবশ্য এরপর আর মুখ খোলেননি। সাংবাদিকদের প্রশ্ন এড়িয়ে বাড়ি থেকে বেরিয়ে গেছে তার ব্যক্তিগত গাড়ি।  ‘সত্যমেভ জয়তে’র সফল এই সঞ্চালক হাড়ে হাড়ে বুঝছেন, সত্যি বড়ই কঠিন! 

* ভয়ে দেশ ছাড়তে চেয়েছিলেন আমিরের বউ

বাংলাদেশ সময়: ১৪১৪ ঘন্টা, নভেম্বর ২৫, ২০১৫
জেএইচ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।