একটা রেলগাড়ি যাচ্ছে স্টেশন ছেড়ে। প্লাটফর্ম পেরিয়ে, হুইসেল বাজিয়ে চলছে।
![](files/December2015/December01/Zakir_inner_1_123163647.jpg)
শুধুই কি চোখ? মন কি নয়? মন টেনেছে বলেই বেঙ্গল উচ্চাঙ্গসংগীত উৎসবের চতুর্থ রাতে এতো দর্শকের সারি! মঞ্চের সামনে যতোদূর তাবু টানানো, চেয়ার সাজানো নিচে; একটিও ফাঁকা নেই। মাঠ ভর্তি ইতস্তত বসে থাকা-দাঁড়িয়ে থাকা ভীড় পেরুলে, দু’পাশের গ্যালারিও ভর্তি প্রায়। হেমন্তের রাত শিশির ঝরাচ্ছে বেশ। চাদর-সোয়েটারে শরীর মুড়ে, মাথা ঢেকে দর্শক বসে আছেন রাত দেড়টার পরেও। আগের তিন রাত যারা এসেছিলেন, যতো বিস্ময় তাদের, ‘আজ এতো লোক!’ অথচ ছুটির দিন তো নয়। তবে? একমাত্র কারণ, ওস্তাদ জাকির হোসেন।
![](files/December2015/December01/Zakir_inner_2_145542301.jpg)
ভারতীয় এই সংগীতগুরু বাংলাদেশে এসেছেন এবারই প্রথম। এবারই প্রথম ঢাকার দর্শক চাক্ষুষ পেলো তাকে। তার তবলাকে। মুগ্ধতাজাগানিয়া তাল-লয়কে। আর রসিকতা? তবলায় বুঁদ হতে হতে দর্শক পেলো সেটাও। মাঝে মধ্যে যখন তিনি মুখেই উচ্চারণ করছিলেন তবলার তাল, বলছিলেন বিভিন্ন ঘটনা-কথোপকথন, আর সেটা তবলায় কেমন রূপ নেয়, দেখাচ্ছিলেন সেটাও। অনেকগুলো হাসি তখন কোরাস হয়ে আর্মি স্টেডিয়ামের বাতাসে মিশে ছড়িয়ে পড়ছিলো আশপাশে বহুদূর। হয়তো গোটা শহর ঢাকায়!
রাত ১টা ৪৫ মিনিট তখন। ঘোষণা হলো, ‘এবার মঞ্চে উঠবেন, সেই প্রত্যাশিত জন, যার জন্য এতো অপেক্ষা। ’ হুড়মুড়িয়ে লোকজন দৌড়ে গেলো যার যার আসনের দিকে। আর যারা আদৌ আসন পায়নি, তারা দু’পাশের জায়ান্ট স্ক্রিনের সামনে। ওস্তাদ জাকির হোসেন এলেন, বললেন ভাঙা বাংলায়, ‘হ্যালো ঢাকা, কেমন আছেন?’ তারপর কিছুক্ষণ সাবির খানের সরোদ। তারপর তবলায় ওস্তাদের হাত।
![](files/December2015/December01/Zakir_inner_4_591493221.jpg)
রেলগাড়ির বর্ণনা দিলেন। কীভাবে সেটা যায়, বৃষ্টিতে-বাদলায়। কীভাবে সেটা ছোটে, মাঝে মধ্যে বজ্রপাতে। তবলায় আর সরোদ-সঙ্গতে দৃশ্য-শব্দ-মুহূর্ত যেন অবিকল একটি রেলস্টেশনের মতোই, বৃষ্টি-বাদলার দিনের মতোই! যেভাবে রেলগাড়ি স্টেশন থেকে বের হয় ধীরে, গতি বাড়ে, শব্দ বাড়ে, একটানা ঝমঝম; তবলায় জাকির হোসেন মুহূর্ত তৈরি করলেন ঠিক তেমনই। একটা হরিণকে হাজির করলেন, শিকারে পরিণত হওয়ার ভয়ে কীভাবে সে দৌড়ে পালায়! সৃষ্টি করলেন ঘোড়ার খুরের আওয়াজও।
![](files/December2015/December01/Zakir1_banglanews24_505823441.jpg)
শুরু করেছিলেন রাত দু’টোর খানিক আগে। তবলা থেকে হাত সরিয়ে উঠে দাঁড়ালেন যখন, ঘড়িতে ৩টা ১৮ মিনিট। তবলায় দৃশ্যকল্প তৈরি করতে করতে, মুগ্ধ করতে করতে, ওস্তাদ জাকির হোসেন একফাঁকে কিন্তু জানিয়ে গেছেন, ‘রাতে খাওয়াটা খুব ভালো হয়েছে। কাচ্চি বিরিয়ানি, বোরহানি, ইলিশ মাছ...’
বাংলাদেশ সময়: ০৭২৭ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ০১, ২০১৫
কেবিএন/