ঢাকা, সোমবার, ১৭ আষাঢ় ১৪৩১, ০১ জুলাই ২০২৪, ২৩ জিলহজ ১৪৪৫

বিনোদন

বাংলা একাডেমির হীরক জয়ন্তী উৎসবের সমাপনী

বিনোদন ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২২০৫ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ৪, ২০১৫
বাংলা একাডেমির হীরক জয়ন্তী উৎসবের সমাপনী

বাঙালি জাতিসত্তা ও বুদ্ধিবৃত্তিক উৎকর্ষের প্রতীক-প্রতিষ্ঠান বাংলা একাডেমির গৌরব ও ঐতিহ্যের ছয় দশক পূর্তিতে আয়োজিত দু’দিনব্যাপী হীরক জয়ন্তী উৎসবের সমাপনী হলো শুক্রবার (৪ ডিসেম্বর) বিকেল ৪টায়। একাডেমির আবদুল করিম সাহিত্যবিশারদ মিলনায়তনে এ অনুষ্ঠানের শুরুতে সদ্যপ্রয়াত বিশিষ্ট কবি এবং বাংলা একাডেমির সম্মানিত ফেলো ওমর আলীর মৃত্যুতে শোকপ্রস্তাব গৃহীত হয় এবং তার স্মরণে দাঁড়িয়ে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়।



বাংলা একাডেমি ঘিরে স্মৃতিচারণায় অংশ নিয়ে বিশিষ্ট গবেষক ও লেখক অধ্যাপক মোহাম্মদ আবদুল কাইউম বলেন, “বাংলা একাডেমি প্রতিষ্ঠাকালীন সীমতি পরিধি ছাপিয়ে আজ এক বৃহৎ প্রতিষ্ঠানে রূপ নিয়েছে। তবে একাডেমি শুরুতে গবেষণামূলক কার্যক্রমের ওপর জোর দিলেও একই সঙ্গে সমকালীন নাট্যচর্চা এবং সাংস্কৃতিক আন্দোলনেও যুক্ত হয়েছে। একাডেমির বর্ধমান হাউজ মঞ্চে অভিনীত হয়েছে মাইকেল মধূসুদনের কৃষ্ণকুমারী, সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহর ‘বহিপীর’-এর মতো নাটক। ”
 
স্মৃতিচারণায় অংশ নিয়ে বাংলা একাডেমির প্রকাশন, মুদ্রণ ও বিক্রয় বিভাগের প্রাক্তন পরিচালক, লেখক ফজলে রাব্বি বলেন, ‘স্মৃতি ও প্রীতিময় সময় কেটেছে বাংলা একাডেমিতে। বাংলাদেশের প্রকাশনা জগতের ইতিহাস লিখতে গেলেও বাংলা একাডেমির প্রসঙ্গ আসবে। বুদ্ধিবৃত্তিক চর্চার এই মহৎ প্রতিষ্ঠানে এদেশের সেরা লেখকবৃন্দ যে পারিবারিক আবহে কাজ করেছেন, আড্ডা দিয়েছেন আজ তা আমাদের জাতীয় সাহিত্য-সংস্কৃতির ইতিহাসের অংশ। ’

‘বাংলা একাডেমির ষাট বছর’ বিষয়ে এই প্রতিষ্ঠানের উদ্ভব, বিকাশ, গবেষণা কার্যক্রম, বিজ্ঞান প্রকাশনা, ফোকলোর চর্চা, স্মারক প্রকাশনা এবং একাডেমি আয়োজিত অমর একুশে গ্রন্থমেলা ইত্যাদি বিষয়ে সাতটি পৃথক প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন অধ্যাপক আবুল আহসান চৌধুরী, অধ্যাপক মাহবুবুল হক, অধ্যাপক শান্তনু কায়সার এবং বাংলা একাডেমির চার পরিচালক অপরেশ কুমার ব্যানার্জী, শাহিদা খাতুন, মো. মোবারক হোসেন, ড. জালাল আহমেদ। তারা বলেন, হীরক জয়ন্তীতে পৌঁছে বাংলা একাডেমি নিশ্চিতভাবেই বলতে পারে এ প্রতিষ্ঠান আজ বাঙালি জাতির হৃৎস্পন্দনে রূপ নিয়েছে। মহান ভাষা আন্দোলনের স্মারক এই প্রতিষ্ঠান বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের গবেষণা দিয়ে যাত্রা শুরু করে আজ নানা বিষয়ে পাঁচ হাজারেরও বেশি বইয়ের প্রকাশক-সংস্থার নাম। আমাদের পাঠকদের মাঝে অভিধান-মনষ্কতা তৈরি বাংলা একাডেমির এক অবিস্মরণীয় কাজ। পাশাপাশি প্রাচীন ও মধ্যযুগের পুঁথি সম্পাদনা, বাংলা ভাষায় বিজ্ঞান চর্চা, প্রথম প্রমিত বাংলা ব্যকরণ রচনা, বিভিন্ন বিষয়ে স্মারক প্রকাশনা, বিজ্ঞানভিত্তিক ফোকলোর চর্চা, বাংলা সাহিত্যের বহুমাত্রিক অনুবাদ এবং বিশ্বের দীর্ঘকাল স্থায়ী বইমেলার আয়োজক প্রতিষ্ঠান হিসেবে একাডেমি আজ প্রকৃতার্থেই বাঙালি জাতিসত্তা ও বুদ্ধিবৃত্তিক উৎকর্ষের প্রতীক-প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছে।

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির ভাষণে সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের সচিব আক্তারী মমতাজ বলেন, ‘বাংলা একাডেমি ১৯৫৫ সালে প্রতিষ্ঠার পর থেকে জ্ঞানের বহুকৌণিক চর্চায় যেভাবে ভূমিকা রেখে এসেছে অনাগত দিনগুলিতে তা আরো বিস্তার লাভ করে বিশ্ববোধসম্পন্ন মানুষের সৃষ্টি ও বিকাশে ভ‚মিকা রাখবে বলে আমরা দৃঢ় আশাবাদী। হীরক জয়ন্তীতে আমাদের প্রত্যাশা বাংলা একাডেমি ক্রমশ হয়ে উঠবে বঙ্গীয় ও বিশ্বজ্ঞান-চর্চার এক অনন্য অঙ্গন। ’

সভাপতির বক্তব্যে বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক অধ্যাপক শামসুজ্জামান খান বলেন, দু’দিনব্যাপী বাংলা একাডেমির হীরক জয়ন্তী উৎসব ঘিরে যে আনন্দমুখর পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে, তা আমাদেরকে ভবিষ্যৎ-যাত্রার বিষয়ে আশাবাদী করে তুলে। বাংলা একাডেমি ঐতিহ্যের বিস্তার সাধনে গত ষাট বছরের মতো সামনের দিনগুলোতেও অবিচল থাকবে এবং তৃণমূলের সঙ্গে সংযোগ রেখে আন্তর্জাতিকতার মাত্রা অর্জনে প্রয়াসী হবে। ’

অনুষ্ঠানে অন্যানের মধ্যে ছিলেন শাঁওলী মিত্র, ভি বি গনেশন, বারিদবরণ ঘোষ, বিচারপতি কাজী এবাদুল হক, সৈয়দ হাসান ইমাম, ড. মনিরুজ্জামান, ড. রাজিয়া সুলতানা, ড. শফি আহমেদ, ড. বিপ­ব বালা, কবি রবীন্দ্র গোপ, কবি মোহাম্মদ সাদিক, কবি ইকবাল আজিজ, কবি অনামিকা হক লিলি, কবি হাসান হাফিজ প্রমুখ।

সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে সংগীত পরিবেশন করেন মাহবুবা রহমন, ফারহানা শিরিন, মো. আনোয়ার হোসেন এবং সঞ্জয় কুমার দাস। যন্ত্রাণুষঙ্গে ছিলেন, পিনু সেন দাস (তবলা), হোসেন আলি (বাঁশি), সাকীল মোহাম্মদ দীপন (গীটার), মোঃ ফারুক (কক্টোপ্যাড), শরীফুল ইসলাম (দোতারা) এবং ডালিম কুমার বড়–য়া (কি-বোর্ড)। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন বাংলা একাডেমির উপপরিচালক ড. মোঃ শাহাদাৎ হোসেন নিপু।

বাংলাদেশ সময় : ২২০২ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ০৪, ২০১৫
জেএইচ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।