কলকাতা থেকে: তথ্যটা অনেকেরই অজানা। ১৯৭১ সালে আলমগীর যুবক ছিলেন।
এদিন আলমগীর ছিলেন সারপ্রাইজ প্যাকেজ। এখানে তার আসার কথা ছিলো না। তিনি এসেছেন নিজের আলাদা একটা কাজে। উৎসবের এদিনের আকর্ষণ আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন কণ্ঠশিল্পী রুনা লায়লা হলেন তার সহধর্মিণী। তাছাড়া মুক্তিযুদ্ধের একজন কণ্ঠসৈনিক হিসেবে বিজয় উৎসব এড়িয়ে যেতে পারেননি তিনি। রুনা তার পরিবেশনার ফাঁকে তাকে মঞ্চে আমন্ত্রণ জানান। হাততালি দিয়ে তাকে স্বাগত জানান দর্শক-শ্রোতারা।
মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে আয়োজিত বাংলাদেশ বিজয় উৎসবে অংশগ্রহণ প্রসঙ্গে আলমগীর শুরুতে বলেন, ‘১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে ভারত সরকার আমাদের স্বাধীনতাকে যেভাবে সমর্থন করেছিলো, সেজন্য বিজয় দিবসের এই আয়োজনে তাদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাচ্ছি। স্বাধীনতা সংগ্রামে বাংলাদেশের পাশাপাশি ভারতীয় বাঙালি ও সৈনিক যারা শহীদ হয়েছেন, তাদের প্রতিও অনেক শ্রদ্ধা। ’ যোগ করে তিনি বলেছেন, ‘আমার ভাষা এখানকার মানুষ বোঝেন। একইভাবে পশ্চিমবঙ্গের মানুষ কি বলেন আমি তা বুঝতে পারি। আমরা একই। আমাদের হৃদয়ে হৃদয়ে মিল। মাঝখানে শুধু একটা বর্ডার রয়ে গেছে। এটা কোনো বিষয়। আসলে শিল্পীদের কোনো দেশ নেই, সীমান্ত নেই। ’
নয়বার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারপ্রাপ্ত অভিনেতা আলমগীর এখনও টগবগে যুবকের মতো দেখতে! ঈর্ষনীয় উচ্চতা। বলিষ্ঠ ব্যক্তিত্ব। দরাজ কণ্ঠ। সব মিলিয়ে এখনও সব বয়সী মেয়েদের স্বপ্নের পুরুষ তিনি। উপস্থাপিকা শান্তা জাহান সেটাই মনে করিয়ে দিলেন দর্শক-শ্রোতাকে। তার নিজেরও নাকি স্বপ্নপুরুষ আলমগীর! একথা শুনে রসিকতার করে অক্টোপ্যাডের যন্ত্র (দেখতে লাঠির মতো) দেখিয়ে শান্তাকে বুঝিয়ে দেন, কপালে মাইর আছে!
মুক্তিযুদ্ধে গান গাইতেন, নিজের ছবির গানও গেয়েছেন, তাই আলমগীরের কাছে গান শোনানোর বায়না আসা স্বাভাবিক। এলোও। তাই নায়ক নন, কলকাতায় পাওয়া গেলো গায়ক আলমগীরকে। তিনি সবার অনুরোধ রেখে শুরুতে গেয়েছেন, ‘বাংলাদেশ, তুই বিহনে পরান কান্দিয়া কান্দিয়া মরে, ও তোর অঙ্গন ছাড়িয়া বিদেশ-বিভূঁইয়ে রহিবো কি করে’। এই গানটি মুক্তিযুদ্ধে তিনি গাইতেন। এরপর শুনিয়েছেন ১৯৭১ সালের স্বাধীনতা সংগ্রামে গাওয়া আরেকটি গান। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় পশ্চিমবঙ্গের একজন গীতিকার একটি গান লিখেছিলেন। তার নাম জানতে পারিনি। মুক্তিযোদ্ধাদের বিভিন্ন ক্যাম্পে সেটা গেয়েছি। আমি এর একটু গেয়ে শোনাই। ’
গানটি হলো- ‘সাড়ে সাত কোটি বাঙালির হে বিধাতা, তোমায় নমস্কার/মুজিবুর ওই নামের পতাকা উড়াইলাম এবার’। সবশেষে নিজের অভিনীত ছবির জনপ্রিয় গান ‘তুমি আরেকবার আসিয়া, যাও মোরে কান্দাইয়া, একবার মনের সুখে একবার কানতে চাই’ গেয়ে শুনিয়েছেন জনপ্রিয় এই অভিনেতা। এরপর তার কথা- ‘আমি গায়ক নই। নিজের ছবিতে ঠোঁট মেলাতে গিয়ে একটু-আধটু যা বুঝেছি তা কাজে লাগিয়ে গাই। আর ওর (রুনা লায়লা) সুবাদে টুকটাক সংগীত চর্চা করা হয়। ’
মঞ্চে তখন বসে আছেন রুনা। আলমগীর গান শেষে মঞ্চ থেকে নামতে চাইলে অনুরোধ এলো রুনার সঙ্গে দ্বৈতকণ্ঠে গাওয়ার। কিন্তু এ যাত্রায় মন রক্ষা করলেন না তিনি। রসিকতার সুরে তখন রুনা বলেন, ‘আমরা বাসায় গিয়ে ডুয়েট গাইবো!’ এনি রুনার পরিবেশনা শেষে মঞ্চে আরেকবার ওঠেন আলমগীর। নেমে যাওয়ার আগে তিনি বলেন, ‘বিজয়ের মাসের এই আয়োজনে একটি কথা না বললে অপূর্ণতা থেকে যাবে। সেটা হলো- জয় বাংলা’।
** রুনা-নচিকেতার দ্বৈত মুহূর্ত
** তোরা যাসনে ও পাগলের কাছে!
** হিন্দি গান গাইলেনই না রুনা লায়লা
** বাংলাদেশ বিজয় উৎসবে বিপুল দর্শক সমাগম
** বাংলাদেশই বাংলা ভাষাটা ধরে বেঁচে আছে
** জমে উঠেছে বাংলাদেশ বিজয় উৎসব
** বিজয় দিবসের কাকভোরে কলকাতার পথে পথে
** নেতাজী ইনডোর স্টেডিয়ামে এক টুকরো বাংলাদেশ
**কলকাতায় শুরু হলো বাংলাদেশ বিজয় উৎসব
** ‘মমতার অন্তরের একদিকে পশ্চিমবঙ্গ অন্যদিকে বাংলাদেশ’
কলকাতা সময় : ০২২৫ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১৮, ২০১৫
জেএইচ