ঢাকা, সোমবার, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

বিনোদন

‘অনি একজন হিরো ও অভিনেতা’

জান্নাতুল মাওয়া, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯১৯ ঘণ্টা, অক্টোবর ৪, ২০১৬
‘অনি একজন হিরো ও অভিনেতা’ ওমর আয়াজ অনি, ছবি: নূর-বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

‘গেরিলা’র অভিনেতা ওমর আয়াজ অনি অভিনীত পাঁচ পর্বের সিরিজ ‘কালি’ সম্প্রতি বায়োস্কোপ লাইভ ওয়েবসাইটে প্রকাশিত হয়েছে। অমিত আশরাফ পরিচালিত এই সিরিজে গোয়েন্দা চরিত্রে অভিনয় করেছেন তিনি।

মঙ্গলবার (৪ অক্টোবর) দুপুরে বাংলানিউজ কার্যালয়ে এসে ‘কালি’ সিরিজ ও বিনোদন অঙ্গনে পুরনো, বর্তমান ও ভবিষ্যৎ কাজ নিয়ে সঙ্গে কথা বললেন অনি।

প্রথমেই জানা যাক, ওয়েব সিরিজ ‘কালি’র সঙ্গে যুক্ত হওয়ার ঘটনা। অনি বললেন, “প্রায় পাঁচ বছর ধরে অমিতের (পরিচালক) সঙ্গে আমার পরিচয়। আমি দেশের বাইরে থাকার সময়ও তার সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ হতো ফেসবুকে। বেশ কিছুদিন আগে থেকেই ‘কালি’ নিয়ে আমাদের মধ্যে কথাবার্তা শুরু হয়। একদিন তার বাসায় আমাকে ডাকা হয়। গিয়ে দেখি ‘কালি’ নিয়ে রীতিমতো গবেষণা শুরু করেছে অমিত। পুরো বাড়ি জুড়ে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে কস্টিউমসহ বিভিন্ন সেট তৈরির উপকরণ ইত্যাদি। এরপর ‘কালি’র চিত্রনাট্য চূড়ান্ত হলো। গোয়েন্দার চরিত্রে অভিনয় করতে হবে জেনে উচ্ছ্বসিত হলাম। ”

‘কালি’তে অভিনয়ের জন্য বেশ প্রস্তুতি নিতে হয়েছিলো অনিকে। কারণ এর আগে গোয়েন্দার চরিত্রে দেখা যায়নি তাকে। তবে আগে থেকে গোয়েন্দা চরিত্রে কাজ করেছেন এমন অভিনেতাদের সঙ্গে পরিচয় থাকার সুবাদে তাদের বিভিন্ন অভিব্যক্তি দেখে ও বুঝে সেগুলো কাজে লাগিয়েছেন তিনি। সিরিজটি প্রকাশের পর থেকে ভালো সাড়া পাচ্ছেন অনি।

‘কালি’ সিরিজের গোয়েন্দা চরিত্রটি অন্যায়কে প্রশ্রয় দেয় না। কেন্দ্রীয় চরিত্র কালি (আজরা মাহমুদ) হরহামেশাই খুন করে বেড়ায়। যদিও প্রতিটি খুনের পেছনে একটি করে কারণ আছে। তবুও এই হত্যাকান্ডকে প্রশ্রয় দিতে পারে না গোয়েন্দা। এজন্য সর্বক্ষণ মেয়েটির বিভিন্ন পদক্ষেপের নজরদারি করেন তিনি।

‘কালি’র প্রথম পাঁচ পর্বকে বলা হচ্ছে সিজন-ওয়ান। অনির কথায়, ‘বায়োস্কোপ লাইভ ডটকমে এখনও দর্শকরা এটা দেখছেন। আরও কিছুদিন সবকিছু পর্যবেক্ষণের পর সিজন-টু নির্মাণের পরিকল্পনা করবেন পরিচালক। আশা করছি, আগামী বছর থেকেই এর শুটিংয়ের উদ্যোগ নেওয়া হবে। ’

অনি কিন্তু হুট করেই ‘কালি’ হাতে পাননি। অভিনয়ে তার অভিজ্ঞতা কম নয়। শৈশব-কৈশোর কেটেছে ঢাকায়। ছেলেবেলায় অনেকের ডাক্তার বা ইঞ্জিনিয়ার হওয়ার স্বপ্ন থাকলেও ব্যতিক্রম ছিলেন তিনি। কারণ স্কুলে ভর্তি  হওয়ার আগে থেকেই অনি চাইতেন অভিনেতা হতে। এক্ষেত্রে মামা (পদাতিকের সদস্য আতিকুর রহমান) ছিলেন তার অনুপ্রেরণা। টিভিতে প্রায়ই মামাকে অভিনয় করতে দেখতেন। ছোটবেলায় বুঝে বা না বুঝে দেখা অভিনেতা হওয়ার স্বপ্ন বাস্তবে পূরণ হয়েছে অনির।

১৯৯৯ সাল থেকে নাগরিক নাট্য সম্প্রদায়ের হয়ে মঞ্চনাটকে অভিনয় শুরু করেন ওমর আয়াজ অনি। এর দুই বছর পর তার জীবনের মোড় ঘুরে যায় অভিনেত্রী সারা যাকেরের ডাকে। নিমা রহমান পরিচালিত ‘নক্ষত্রের আলো’ নাটকের জন্য একজন নতুন মুখের সন্ধান চলাকালীন ডাক পড়ে তার।

কি ঘটেছিলো তখন? অনি বললেন, ‘তখন এসআইবিএল ব্যাংকে চাকরি করি। দুপুরে অডিশনের জন্য ধ্বনিচিত্রের অফিসে যাওয়ার কথা ছিলো আমার। ম্যানেজারকে অনুরোধ করার পরও অনুমতি পাওয়া হলো না। তাই রিজাইন লেটার দিয়ে ব্যাংক থেকে বেরিয়ে আসি (হাসি)। অভিনয়ের জন্য এমন পাগলামিও করেছি। অডিশন দিয়ে অনেকের মধ্য থেকেই আমি নির্বাচিত হলাম। প্রথম ক্যামেরার সামনে দাঁড়ালাম ‘নক্ষত্রের আলো’র জন্য। মনে আছে, নাটকটি প্রচারের এক সপ্তাহ পর অভিনেতা ও আমার আইডল আলী যাকের স্যারের সঙ্গে একদিন দেখা হতেই তিনি আমাকে কোলে তুলে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেন!’

এরপর থেকে অনিকে আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। অল্প সময়ে কাজ পেয়েছেন অনেক নাটকের। ২০০৪ সালে শিশুতোষ সিরিজ ‘সিসিমপুর’-এ যুক্ত হন। সেখানেই কেটেছে তিন বছর। এর তিন বছর পর অমিতাভ রেজার নির্দেশনায় গ্রামীণফোনের একটি বিজ্ঞাপনচিত্রে মডেল হওয়ার সুবাদে তার জনপ্রিয়তার পালে নতুন হাওয়া লাগে।

ছোটপর্দায় অনেকটা সময় ব্যস্ত থাকার পর নির্মাতা নাসিরউদ্দীন ইউসুফের ডাক পান অনি। ‘গেরিলা’ ছবির জন্য অডিশন দিতে হয় তাকে। এবারও ভাগ্য তার সহায়। মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক এই ছবিতে কাজের সুযোগ পেয়ে নিজেকে গর্বিত ভাবতে শুরু করলেন তিনি। মুক্তির পর তার অভিনয়ের সুনাম শোনা গেলো অনেকের মুখে।

‘গেরিলা’র সুবাদে ‘পুত্র যখন পয়সাওয়ালা’ ছবিতে কাজের প্রস্তাব পান অনি। কারণ এর নির্মাতা নারগিস আক্তার তাকে চিনতেন না। ‘গেরিলা’ দেখার পর তিনি অভিনয়ের প্রস্তাব দেন তাকে। তার কথায়, “এ ছবিতে অভিনয় করতে পেরেও আমি আনন্দিত। কারণ এটাই ববিতা আপা অভিনীত সবশেষ ছবি। শুটিংয়ের সময় ববিতা আপার সান্নিধ্য পেয়েছি। এরপর থেকে তিনি আমার সঙ্গে কাউকে পরিচয় করিয়ে দিতে গেলে বলতেন, ‘অনি একজন হিরো ও অভিনেতা’। তার কাছ থেকে অভিনয়ের অনেক কিছু শিখেছি। ”

এতো সুনাম আর প্রশংসার পরও অনি আলোচনায় ছিলেন না। কারণ পড়ালেখাসহ বিভিন্ন ব্যস্ততার কারণে অভিনয় করেননি দীর্ঘ পাঁচ বছর। অস্ট্রেলিয়ার নিউ সাউথ ওয়েলস ইউনিভার্সিটি থেকে পাবলিক রিলেশন অ্যান্ড অ্যাডভার্টাইজিং বিষয়ে মাস্টার্স করেছেন তিনি। এ ছাড়া ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এমবিএ ও ম্যানেজমেন্টেও মাস্টার্স ডিগ্রি আছে তার। পড়ালেখার জন্য দেশের বাইরে থাকা ও ফিরে চাকরিতে ব্যস্ত হয়ে পড়ায় অভিনয়ের সঙ্গে দূরত্ব বেড়ে যায় তার। কিন্তু তার মনেপ্রাণে সেই ছোটবেলা থেকে অভিনয় করার ঝোঁক চেপে আছে, তাই অভিনয় থেকে দূরে থাকতে পারেননি তিনি।

অনি এখন ব্যস্ত টিভি নাটক নিয়ে। ছোটপর্দায় নিয়মিত থাকবেন বলে জানালেন তিনি। তার কথায়, ‘একসময় নাটকে বা সিনেমায় আমার চরিত্রটিসহ গল্পকে প্রাধান্য দিতাম। এজন্য মনের মতো না হওয়ায় অনেক প্রস্তাব ফিরিয়েও দিয়েছি। এ কারণে আমাকে পর্দায় নিয়মিত দেখা যায়নি। তাছাড়া দেশের বাইরে যাওয়ায় দীর্ঘ সময় দর্শক আমাকে দেখেনি। বরাবরই ভিন্ন ভিন্ন চরিত্রে অভিনয়ের স্বপ্ন দেখি। পাগল, রাজনীতিবিদ, সন্ত্রাসীসহ বিভিন্ন চরিত্রে অভিনয় করতে চাই। এখন আমি বাণিজ্যিক ধারার ছবির জন্যও প্রস্তুত। ’

অনি অভিনীত উল্লেখযোগ্য কাজের কয়েকটি হলো- ‘শুভ্র’, ‘ক্যানভাসার’, ‘ভালোবাসি তাই’, ‘মিতা ও একটি সাদা জামা’, ‘ফটোগ্রাফার’ প্রভৃতি। এ ছাড়া গরু মার্কা ঢেউটিনের একটি বিজ্ঞাপনচিত্রে মডেল হয়ে জনপ্রিয়তা পান তিনি। ‘লীনা’ নামের একটি আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্রেও কাজ করার কথা চলছে।

বাংলাদেশ সময়: ১৮৫৮ ঘণ্টা, অক্টোবর ০৪, ২০১৬
জেএমএস/জেএইচ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।