ব্যবসায়িক সাফল্য পেতে ও দর্শককে প্রেক্ষাগৃহমুখী করতে টলিউডের প্রথম সারির নায়ক-নায়িকাদের নিয়ে একের পর এক বড় বড় বাজেটের চলচ্চিত্র তৈরি হচ্ছে। আবার অল্প বাজেটের ছবির উদাহরণও দেওয়া যাবে।
প্রসেনজিৎ, রিয়া সেন, পরমব্রত চট্টোপাধ্যায়, ইন্দ্রনীল, জিৎ, সোহম, অঙ্কুশ, ওম, শ্রাবন্তী, শুভশ্রীর পথ ধরে এদেশের ছবিতে অচিরেই দেখা যাবে দেব, কোয়েল, মিমি, প্রিয়াঙ্কা, বনি প্রমুখ নায়ক-নায়িকাকে। এই তালিকা আরও দীর্ঘ হবে দিনকে দিন। শুধু নায়ক-নায়িকা নয়, পার্শ্ব, মন্দ কিংবা কমেডি চরিত্রের জন্যও কলকাতায় ঢুঁ মারছেন সংশ্লিষ্টরা।
পরিচালক-প্রযোজকদের মধ্যে ইদানীং দেশের শিল্পীদের নিয়ে ছবি বানানোর চিন্তা কমে গেছে। কথায় কথায় শিল্পীর খোঁজে তারা ছুটছেন ওপারে। শুধু প্রথম সারির শিল্পী নয়, ওখানকার ধারাবাহিক নাটকের নায়িকাদের প্রতিও নির্মাতাদের আগ্রহ বেড়েছে।
এতো গেলো পর্দার খবর। পর্দার আঁড়ালে থাকা কলাকুশলীদেরকেও গুরুত্বের সঙ্গে যুক্ত করা হচ্ছে দেশের ছবিগুলোতে। পরিচালক, গীতিকার, সংগীত পরিচালক, কস্টিউম ডিজাইনার, নৃত্য পরিচালক প্রভৃতি বিভাগেও ভিনদেশিদের উপস্থিতি দেখা যাচ্ছে। এ নিয়ে এফডিসি পাড়ায় শিল্পীদের মধ্যে বিরাজ করছে চাপা ক্ষোভ।
এ প্রসঙ্গে সোমবার (৬ মার্চ) দুপুরে বাংলানিউজের সঙ্গে কথা হয় পরিচালক সমিতির সভাপতি মুশফিকুর রহমান গুলজারের। তিনি বলেন, ‘আমাদের চলচ্চিত্রের কিছু শিল্পী অনিয়মের কারণে এমনটা হচ্ছে। পরিচালকরা অনেক সময়ই দেশীয় শিল্পীদের কাছ থেকে কাজ আদায় করতে গিয়ে ভোগান্তির শিকার হন। তাই তারা অন্য দেশের শিল্পী নিয়ে কাজ করতে সাচ্ছন্দ্যবোধ করেন। অনেক ক্ষেত্রে তারা সফলও হচ্ছেন। আমার মনে হয়, এর বাইরে তেমন কোনো কারণ নেই। ’
এ প্রসঙ্গে অভিনেতা রিয়াজ বলেন, ‘এটি আমার কাছে বিস্ময়কর লাগে। শিল্পীর কোনো দেশ হয় না, ঠিক আছে। কিন্তু অামাদের এখানে সবকিছুতে বাড়াবাড়ি করা হয়। ’
গুলজারের বক্তব্যের সঙ্গে সুর মিলিয়ে অভিনেতা সাইমন সাদিক বাংলানিউজকে বলেন, ‘আমাদের এখানকার নির্মাতা ও প্রযোজকদের মধ্যে বিদেশপ্রীতি সব সময়ই ছিলো, এখনও আছে। এখানকার কিছু শিল্পী ভোগান্তি সৃষ্টি করেন, ঠিক আছে, তাই বলে ভিনদেশের শিল্পীদের ওপর নির্ভরশীল হতে হবে আমি এমনটা মনে করিনা। ’
যোগ করে সাইমন আরও বলেন, ‘এমন অনেক ছবি দেখা যাচ্ছে যেখানে ভিনদেশের অখ্যাত শিল্পীকে নেওয়া হচ্ছে। এর কারণ কী? এটা দিয়ে একটা ব্যাপার পরিস্কার হচ্ছে, পরিচালক বা প্রযোজকরা এটা বোঝাতে চান যে, তারাও পারেন। আমি মনে করি, দেশের শিল্পীদের ক্ষতিগ্রস্ত করে দেশের টাকা এভাবে বাইরের শিল্পীদের হাতে তুলে দেওয়া ঠিক হচ্ছে না। নিশ্চয়ই এই অবস্থার পরিবর্তন হবে। ’
কয়েক বছরের হিসেব অনুযায়ী, ‘আমি শুধু চেয়েছি তোমায়’, ‘আশিকী’, ‘অগ্নি টু’, ‘রোমিও বনাম জুলিয়েট’, ‘অঙ্গার’, ‘হিরো ৪২০’, ‘প্রেম কি বুঝিনি’, ‘শিকারি’, ‘বাদশা’, ‘ব্ল্যাক’, ‘শঙ্খচিল’, ‘ভুবন মাঝি’সহ মুক্তিপ্রাপ্ত বেশ কিছু ছবি ঘোষণার পর থেকে নানা কারণে আলোচনায় এসেছে। এর রেশ ছিলো মুক্তি অবধি। কলকাতা ও ঢাকার শিল্পীদের নিয়ে তৈরি এসব ছবির অধিকাংশই আশা জাগাতে পারেনি।
তবে দু’ একটি ব্যতিক্রম অবশ্য আছে। যেমন নানা কারণে বিতর্কিত অনন্য মামুনের ‘আমি শুধু চেয়েছি তোমায়’, জাজ মাল্টিমিডিয়ার ‘বাদশা’ ও ‘শিকারি’ ছবিগুলো লাভের অর্থ তুলে আনতে পারলেও এর ধারাবাহিকতা লক্ষ্য করা যাচ্ছে না। ব্যর্থ ছবির তালিকা চোখের সামনে রেখেই ওপারের শিল্পীদের নিয়ে নিত্য নতুন ছবি তৈরির ঘোষণা আসছে। এর শেষ কোথায় কে জানে…
বাংলাদেশ সময়: ১৪৪১ ঘণ্টা, মার্চ ০৬, ২০১৭
এসও