বাংলানিউজ: ‘ভুবন মাঝি’ টিমের একজন গুরুত্বপূর্ণ মানুষ চলে গেলেন। সজ্জন মানুষ হিসেবে কালিকাপ্রসাদের খ্যাতি ছিলো।
অপর্ণা ঘোষ: আসলে কী বলবো বুঝতে পারছি না। এটা অবিশ্বাস্য একটি ব্যাপার। কাছের মানুষের এভাবে চলে যাওয়া, মেনে নিতে কষ্ট হচ্ছে। কালিকা দা ‘ভুবন মাঝি’র জন্য অনেক করেছেন। ছবিটির গানের জন্য ধীরে ধীরে সবার আরও প্রিয় উঠছিলেন তিনি।
বাংলানিউজ: বিশেষ কোনো স্মৃতির কথা বলতে চান?
অপর্ণা: কতো স্মৃতিই তো আছে। ‘ভুবন মাঝি’র জন্য কলকাতায় যতো কাজ ছিলো, সবই তিনি করেছেন। ছবিটির নির্মাতা ফাখরুল আরেফিন খানের সঙ্গে তার বেশ ভালো বোঝাপড়া ছিলো। এমন প্রাণোচ্ছ্বল আর মিশুক ছিলেন যে, বলে বোঝানো যাবে না। তার স্ত্রী, সন্তানের সঙ্গেও আমাদের ভালো সময় কেটেছে। কলকাতায় কালিকা দা’র বাসায় গিয়ে মনে হয়নি কলকাতায় কারো কাছে এসেছি। তিনি মনেপ্রাণে বাঙালি ছিলেন।
বাংলানিউজ: কালিকার গাওয়া ‘আমি তোমার নাম গাই’ গানটি তো আপনার বিশেষ পছন্দের…
অপর্ণা: মনে আছে, কুষ্টিয়ায় শুটিংয়ে যাওয়ার সময় গানটি হোয়াটস অ্যাপে পাঠিয়েছিলেন কালিকা দা। পরিচালক আমাকে শুনতে দিয়েছিলেন। গাড়িতে কয়েকবার শুনেই দারুণ মুগ্ধ হয়েছিলাম। তখনই ফোনে তাকে ভালো লাগার কথা জানিয়েছিলাম। এখন সেই গান সবার মুখে মুখে। অথচ তিনিই নেই…। আমার খুব কষ্ট লাগছে এই ভেবে যে, ভালো মানুষগুলোকে বুঝি এভাবেই আগেভাগে চলে যেতে হয়!
বাংলানিউজ: এবার অন্য প্রসঙ্গে আসি। ‘ভুবন মাঝি’ তো বিভিন্ন হলে চলছে। মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক ছবি হিসেবে এটি আপনার দ্বিতীয় কাজ। পার্থক্য নিশ্চয়ই আছে?
অপর্ণা: ‘মেঘমল্লার’ ছিলো আখতারুজ্জামান ইলিয়াসের গল্প থেকে বানানো ছবি। আর ‘ভুবন মাঝি’ সত্য কাহিনি নিয়ে। প্রথমটিতে আমি ছিলাম ভীতু এক গৃহবধু। আর এটাতে সাহসী। ফরিদা চরিত্রটি থিয়েটার করে, দেশ নিয়ে ভাবে, রাজনীতি সচেতন।
বাংলানিউজ: চরিত্রটি ঠিকভাবে ফুটিয়ে তোলার জন্য বিশেষ কোনো প্রস্তুতি ছিলো?
অপর্ণা: কুষ্টিয়ায় বাস্তবের ফরিদার বাড়িতে শুটিং করেছি। ওখানেই রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ভিটে। পরিচালকও সাহায্য করেছেন, এগুলোই আমার প্রস্তুতি। তাছাড়া…
বাংলানিউজ: আপনি নিজেও তো থিয়েটারকর্মী…
অপর্ণা: ঠিক। ফরিদার মতো আমিও নিজেকে সাহসী মনে করি, এই অর্থে যে, আমি কোনো পদক্ষেপ নিতে ভয় পাই না। যা ইচ্ছে করে, করি। আর রাজনীতির খবরাখবরও আমি রাখি। সব মিলিয়ে ফরিদাকে বুঝতে বা ধারণ করতে আমার অসুবিধা হয়নি।
বাংলানিউজ: আপনার দৃষ্টিতে ছবিটিকে মূল্যায়ণ করুন।
অপর্ণা: আমার অভিনয় সবাই প্রশংসা করেছেন। এ নিয়ে কারো কোনো খারাপ লাগার কথা শুনিনি। আমি শুরু থেকে সচেতন ছিলাম যে, অভিনয়টা সুন্দর করে করতে হবে। মূল্যায়নের ব্যাপারটি যার যার কাছে। ছবিটির উপস্থাপনায় নতুনত্ব থাকলেও কেউ কেউ জানিয়েছেন যে, তারা কিছু বিষয় ধরতে পারেননি। অর্থাৎ ছবির শুরু থেকে কয়েকবার ফ্ল্যাশব্যাকে যাওয়া আসার জায়গাগুলো নিয়ে তারা কিছুটা আপত্তি করেছেন। এর বেশি কিছু নয়। আমি মনে করি, এটা তেমন কোনো অসুবিধা তৈরি করেনি। একটু বেশি মনযোগের দাবি রাখে ছবিটি।
বাংলানিউজ: আপনার অভিনয় দেখে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেছেন, এমন বিশেষ কারো কথা বলতে চান?
অপর্ণা: ১ মার্চ ‘ভুবন মাঝি’র প্রিমিয়ার শো দেখেছিলেন গুরুত্বপূর্ণ অনেকেই। এর মধ্যে উপস্থিত ছিলেন সংস্কৃতিমন্ত্রী ও অভিনেতা আসাদুজ্জামান নূর। তিনি আমার পেছনের সারিতে বসে ছবিটি দেখেছিলেন। ছবিটি শেষ হওয়ার পর তিনি ইশারায় অামাকে ভালো বলেছিলেন। একটু পর দেখি, তিনি সামনে এসেছেন। এ কী, নূর ভাই আমার সামনে দাঁড়িয়ে কেঁদে ফেললেন! সত্যি বলতে তার মতো বিরাট অভিনেতার মুখে অভিনয়ের প্রশংসা শুনে ও তার অভিব্যক্তি দেখে আবেগে আমিও কান্না ধরে রাখতে পারিনি…। এটা নিশ্চয়ই আমার জীবনের বড় অর্জন।
বাংলাদেশ সময়: ১৫৫৩ ঘণ্টা, মার্চ ০৭, ২০১৭
এসও