যৌথ প্রযোজনার সূত্র ধরে বা নিয়মিত প্রযোজনার বিভিন্ন ছবিতে এপারের শিল্পীরা ওপারে, ওপারের শিল্পীরা এপারে কাজ করছেন। কিন্তু পরিস্থিতি ঠিক কোনদিকে যাচ্ছে? ছবিগুলো কতোটুকু ফলপ্রসূ হচ্ছে? এমন কিছু প্রশ্নের সদুত্তর মিলছে না।
কবিগুরুর আরেকটি পংক্তি এই পরিস্থিতি পুরোটা তুলে ধরতে পেরেছে, তা হলো— ‘নদীর এপার কহে ছাড়িয়া নিঃশ্বাস/ওপারেতে সর্বসুখ আমার বিশ্বাস’। এরা মনে করছেন ওপারে, ওরা মনে করছেন এপারে ছবি করলে ভালো চলবে। দুই বাংলার শিল্পীদের মনেই যেন ‘ওপারেতে সর্বসুখ’ রোগ ভর করেছে। এর ওষুধ কী?
কলকাতার বিভিন্ন গ্রেডের শিল্পীরা ঢালিউডে নিজেদের ক্যারিয়ার গড়তে হুমড়ি খেয়ে পড়ছেন। অাবার এখানকার অনেক শিল্পীও সেখানে চেষ্টা করে যাচ্ছেন। বিশেষ করে নায়িকাদের কথা উল্লেখ করতে হয়।
দেশের নির্মাতা-প্রযোজকের মধ্যে বিদেশি নায়িকাদের প্রতি আগ্রহ একটু বেশিই। যৌথ প্রযোজনার বাইরের দেশীয় ছবির নায়িকা হিসেবে সবশেষ সংযোজন কলকাতার প্রিয়াংকা সরকার (হৃদয় জুড়ে)। পাওলি দামকে নিয়ে মুক্তির অপেক্ষায় আছে ‘সত্তা’ ছবিটি। নায়কদের মধ্যে পরমব্রত (ভয়ংকর সুন্দর) আর সমদর্শী দত্তের (শেষ কথা) দুটি ছবি অচিরেই মুক্তি পাবে এখানে। এবার আসা যাক যৌথ প্রযোজনার হিসেবে।
শ্রাবন্তী, শুভশ্রীর পর যৌথ প্রযোজনার বরাতে এদেশের দর্শকের সামনে আসতে যাচ্ছেন কোয়েল মল্লিক, মিমি চক্রবর্তী, নুসরাত, সায়ন্তিকা প্রমুখ। চলচ্চিত্রের বাজার বাড়ানোর নাম করে ছবি নির্মাণের মাধ্যমে ফায়দা লুটছে একশ্রেণীর অসাধু নির্মাতা-প্রযোজক। বিনোদনের আঁড়ালে সাদা হচ্ছে কালো টাকা। ভিনদেশি শিল্পীরা দেশের টাকার ওপর ট্যাক্স দিচ্ছেন কী, এ ব্যাপারেও উঠেছে প্রশ্ন। পাশাপাশি কে না জানে, ভিনদেশি নায়িকাদের দৌড়াত্মে হুমকির মুখে পড়তে যাচ্ছে দেশের নায়িকাদের ক্যারিয়ার।
এ কারণে বা অন্য যে কোনো কারণেই হোক, এখানকার অভিনেত্রীরাও লাইন ধরেছেন কলকাতার ছবিতে কাজ করার জন্য। তাদের মধ্যে কেউ কেউ সেখানে ভালো জায়গা তৈরি করেছেন। কলকাতায় অচিরেই মুক্তি পাবে জয়া আহসানের ‘বিসর্জন’। এতে তার নায়ক আবীর। এটি যৌথ প্রযোজনার নয়। সোহানা সাবা ও জ্যোতিকা জ্যোতিও সেখানে দ্বিতীয় ও প্রথম ছবির ঘোষনা দিলেন।
কলকাতার দর্শকের কাছে নিপুন, সিমলা, রুহি, কুসুম সিকদার, মাহিয়া মাহি, নুসরাত ফারিয়া, মিষ্টি জান্নাত, জলি প্রমুখ নামগুলোও পরিচিত। কলকাতায় নাম করা নায়িকা থাকতে বাংলাদেশের নায়িকাদের প্রতি সেখানকার নির্মাতা ও দর্শকের আগ্রহ বেড়েছে, এমনটি বলা যায়? বিষয়টিকে নিরীক্ষা মনে করতে পারলে ভালো হতো। কিন্তু এটাই রীতিমত নিয়মিত চিত্র হয়ে উঠছে।
দুই বাংলার শিল্পীদের অবাধ আনাগোনায় কতোটুকু উন্নতি হলো চলচ্চিত্রের, এ প্রশ্ন তুলছেন বিশেষজ্ঞরা। যৌথ প্রযোজনার ‘বিতর্ক’ জিইয়ে রেখে, সাফটা চুক্তির আদান-প্রদান কিংবা শিল্পী অদল-বদল করে দর্শককে কী প্রেক্ষাগৃহে ফেরানো সম্ভব হচ্ছে?
কলকাতায়ও বাংলাদেশের মতো চলচ্চিত্র ব্যবসা ভালো যাচ্ছে না। বিশেষ করে দক্ষিণী ছবির বাংলারূপও এখন পাতে তুলছেন না বাণিজ্যিক ছবির দর্শক। এতে কমে এসেছে ছবি তৈরির সংখ্যা। এর প্রভাব পড়েছে বহুমুখী। সেখানকার বাঘা বাঘা প্রযোজকরা এখন বাংলাদেশে ব্যবসা শুরু করেছেন। এসকে মুভিজের পর শ্রী ভেঙ্কটেশ ফিল্মস এলো ঢালিউডে। এখানকার একজন নায়ক বা নায়িকাকে রাখলেও তারা অধিকাংশ কলাকুশলী যে নিজেদের দেশেরই রাখবেন এটা বুঝতে বাকি নেই। এর সবশেষ উদাহরণ শ্রী ভেঙ্কটেশ ফিল্মসের নাম চূড়ান্ত না হওয়া ছবির দুই নায়িকাই (সায়ন্তিকা ও নুসরাত) কলকাতার। তাদের নায়ক শাকিব খান।
কলকাতার অভিনেতারাও এ দেশে বেশ জনপ্রিয়। পরমব্রত চট্টোপাধ্যায় এ দেশের মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক ছবিতে (ভুবন মাঝি) কেন্দ্রীয় চরিত্রে অভিনয় করেছেন। মুক্তির অপেক্ষায় আছে তার ‘ভয়ংকর সুন্দর’। এরই মধ্যে যৌথ প্রযোজনার বিভিন্ন ছবিতে জিৎ, সোহম, অঙ্কুশ, ওম, রজতাভ দত্ত প্রমুখ অভিনয় করেছেন। একইভাবে শুধু এ দেশীয় ছবিতেও কলকাতার পরমব্রত, ইন্দ্রনীল, পাওলি দাম, প্রিয়াংকা সরকার কাজ করেছেন। দেব, বনি অচিরেই ঢাকার ছবিতে কাজ করবেন বলে শোনা যাচ্ছে। কিন্তু এ দেশের নায়কদের মধ্যে ফেরদৌস ছাড়া তেমন কেউই কলকাতার নিজস্ব প্রযোজনার ছবিতে সুযোগ পাচ্ছেন না কেন, এও এক প্রশ্ন বটে!
যৌথ প্রযোজনা বা শিল্পী অদল-বদলের এই ট্রেন্ড কতোদিন চলবে কে জানে। শিল্পীদের কাজের ক্ষেত্র বাড়বে, ছবির ব্যবসা বাড়বে, দর্শক হলে আসবে, ছবির উন্নয়ন হবে— সংশ্লিষ্টদের এমন যুক্তিতে দর্শকের আস্থা কতোটুক?
যৌথ প্রযোজনায় রেকর্ড সংখ্যক ছবি তৈরি করেছে জাজ মাল্টিমিডিয়া। তাদের অভিজ্ঞতা খুব বেশি সুখকর নয়। এ কারণেই ঢালিউডে তারা আর ব্যবসা করতে চায় না। জাজ বলিউডে অর্থলগ্নি করবে বলে শোনা যাচ্ছে। এসব পরিস্থিতি বিবেচনা করে বোঝা মুশকিল আসল গলদটা কোথায় এবং বাংলাদেশের চলচ্চিত্রের ভবিষ্যৎ কী…
বাংলাদেশ সময়: ১৮০৩ ঘণ্টা, মার্চ ১৭, ২০১৭
এসও