ঢাকা, শুক্রবার, ১৪ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৯ নভেম্বর ২০২৪, ২৭ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

বিনোদন

দুই বাংলার প্রেমের গল্প বলেছে জয়া-আবিরের ‘বিসর্জন’

ভাস্কর সরদার, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১০২৩ ঘণ্টা, এপ্রিল ১৭, ২০১৭
 দুই বাংলার প্রেমের গল্প বলেছে জয়া-আবিরের ‘বিসর্জন’ আবির চট্টোপাধ্যায় ও জয়া আহসান (ছবি: বাংলানিউজ)

কলকাতা: সম্প্রতি মুক্তি পেয়েছে কৌশিক গাঙ্গুলির নতুন চলচ্চিত্র ‘বিসর্জন’। ইতিমধ্যেই ভারত সরকারের জাতীয় পুরস্কার পেয়েছে চলচ্চিত্রটি। সেরা আঞ্চলিক ছবি ক্যাটাগরিতে জাতীয় পুরস্কার পেয়েছে আবির চট্টোপাধ্যায় ও জয়া আহসান অভিনীত ‘বিসর্জন’।  পরিচালক কৌশিক গাঙ্গুলি বলেছেন, “পুরস্কার সবসময় আলাদা তৃপ্তি দেয়। বাংলা নববর্ষে বেশ কয়েকটি ছবি মুক্তি পেয়েছে। ‘বিসর্জন’ আলাদা করে পুরস্কৃত হওয়ায় বেশি দর্শক ছবিটা দেখতে যাচ্ছেন, আশা করা যায়।”

তার মতে, রবি ঠাকুরের ‘বিসর্জন’-এর সঙ্গে এই ছবির গল্পের কোনও সম্পর্ক নেই। এটি সম্পূর্ণ প্রেমের একটি গল্প।

অনেকটা জুড়ে রয়েছে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের উৎসব দুর্গাপুজা। পরিচালকের ভাষায় ‘বিসর্জন’ শব্দটির মধ্যে একটি ব্যাঞ্জনা আছে, শুধুমাত্র ডুবে যাওয়া বা ভাসান দেওয়া নয়। বাংলাদেশ ও ভারতের দু’জন নারী-পুরুষের প্রেমের গল্প নিয়ে এই ছবি। যে ভালোবাসা সীমান্ত বা কাঁটাতার দিয়ে কোনোভাবে আটকে রাখা যায় না। অনেকটা ইলিশ মাছের মতো। ভারতের ইলিশ নাকি বাংলাদেশের ইলিশ,  তা কি ইলিশের গায়ে লেখা থাকে ! প্রেমটাও ঠিক তেমন।

আমাদের দেশতো রাজনৈতিক স্বার্থে ভাগ হয়ে গেছে। রাজনৈতিক স্বার্থে সামাজিক জীবনকে ভাগ করে দেওয়া হয়েছে। যে কারণে অনেকগুলো অনুভূতি অবিভক্ত থেকে গিয়েছে। সেই সব অনুভূতি নিয়েই এই ছবিটি তৈরির চেষ্টা করেছেন পরিচালক।

ছবি-বাংলানিউজভারতের পুরুষটি মুসলমান নাসির আলি। বাংলাদেশের ফরিদপুরের হিন্দু মেয়ে পদ্মা হালদার। দেশ ভাগের ফলে নানা সময়ে রাজনীতির হিসেব-নিকেশের শিকার হয়েছেন সাধারণ মানুষ। কৌশিক গাঙ্গুলি বলছেন, ‘চিরকাল এমনটা হতে থাকবে। কারণ রাজ্য বা দেশ কূটনৈতিক নানা জটিল হিসাব মেনে চলবে। সাহিত্য ওসব বাঁধা মানে না। নিয়মবিরুদ্ধ কিছু কাহিনি বা কবিতা রচিত হবেই।  রাখঢাক না মেনে বেমালুম একটা গল্প বলে দিতে পারে একটা সিনেমা। ’

ভারতের একটি ছোটো শহরের ভালো ছেলে নাসির। বাংলাদেশে সে কীভাবে পৌঁছুয় এবং সেখানে কী কী অসুবিধার মধ্যে পড়ে সেটা ছবির মূল কাহিনি। বাঁধা এবং ভালোবাসা দুটোই এই গল্পে রয়েছে। বাংলাদেশ থেকে আদৌ সে  সাহায্য পায় নাকি, কোনোও সাহায্য  পায় না, সেটাও ছবির আকর্ষণ। ছবিতে বাংলাদেশ খুব সুন্দরভাবে  উঠে এসেছে। বাঙালির মনটাকে ছবির মধ্যে তুলে ধরা হয়েছে। গ্রাম বাংলার অপরূপ সৌন্দর্য, সেখানকার জীবন, রাস্তাঘাট সব মিলিয়ে সোনার বাংলাকে খুব ভালোভাবে ছবিতে ফুটিয়ে তেলার চেষ্টা করেছেন পরিচালক কৌশিক গাঙ্গুলি।

ছবি-বাংলানিউজছবিতে নাসির আলির ভূমিকায় অভিনয় করেছেন অভিনেতা আবির চট্টোপাধ্যায়। পদ্মা হালদারের চরিত্রে দেখা গেছে জয়া আহসানকে। এ ছাড়া বাংলাদেশের মাছের ব্যবসায়ী গণেশ মণ্ডলের ভূমিকায় অভিনয় করেছেন পরিচালক স্বয়ং। এই চরিত্রের ব্যাপ্তি অনেক। এর আগে এতো গুরুত্বপূর্ণ চরিত্রে তিনি অভিনয় করেননি। নিখুঁত পূর্ববঙ্গের ভাষায় কথা বলার চাপ ছিলো তার ওপর, এমন কথা শোনা গেলো পরিচালকের কাছ থেকে।

সম্পুর্ন শুটিং হয়েছে ইছামতী নদীর দুই পাড়ের অঞ্চলে। মোট সময় কুড়ি-বাইশ দিনের মতো। আর বাকী শুটিং হয়েছে ইনডোরে। বাংলাদেশ থেকে পরিচালকের সহকারীরা প্রচুর তেল, সাবান, ক্যালেন্ডার ইত্যাদি  জিনিসপত্র দিয়ে মুদির দোকানটি সাজানো হয়েছিলো।

ছবি-বাংলানিউজযেহেতু হিন্দু মহিলার চরিত্রে জয়া অভিনয় করেছেন, তাই হিন্দু বাঙালিপরিবারে কীভাবে সন্ধ্যাপ্রদীপ জ্বালানো হয় এবং লক্ষ্মী পুজোর আচার অনুষ্ঠান হয় তা জয়াকে হাতে কলমে শেখানো হয়েছে। পাশাপাশি কীভাবে আজান পড়তে হয়, সেই সময় হাতের ভঙ্গিমা কেমন হয় ইত্যাদি জয়া শিখিয়েছেন আবিরকে।

ছবিটিতে সুরকার সদ্যপ্রয়াত কালিকাপ্রসাদ ভট্টাচার্য। সুরকার হিসেবে এটাই তার শেষ ছবি। প্রযোজক সুপর্ণকান্তি করাতি জানিয়েছেন, জাতীয় পুরস্কার ভবিষ্যতে আরও ভালো কাজ করার প্রেরণা দেবে।

বাংলাদেশ সময়: ১৬২৩ ঘণ্টা,১১ এপ্রিল , ২০১৭
ভিএস/এসও

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।