ঢাকা, সোমবার, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

বিনোদন

দাম্পত্য জীবনে অশান্তি ছিল সালমানের, দাবি শ্বশুরের

রমেন দাশগুপ্ত, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৩১৯ ঘণ্টা, আগস্ট ১০, ২০১৭
দাম্পত্য জীবনে অশান্তি ছিল সালমানের, দাবি শ্বশুরের ছবি: সালমান শাহ’র শ্বশুর শফিকুল হক হীরা। ছবি: সোহেল সরওয়ার

চট্টগ্রাম: নব্বই দশকের তুমুল জনপ্রিয় চিত্রনায়ক সালমান শাহ’র দাম্পত্য জীবনে অশান্তি ছিল বলে তথ্য দিয়েছেন তার শ্বশুর শফিকুল হক হীরা।  বিভিন্ন নায়িকার সঙ্গে তার অভিনয় স্ত্রী সামিরা মেনে নিতেন না বলেও ইঙ্গিত মিলেছে হীরার তথ্যে।

মেয়ের চার বছরের সংসারজীবন নিয়ে সামিরার বাবা হীরা বাংলানিউজকে বলেন, মাঝে মাঝে ওদের (সালমান ও সামিরা) মধ্যে ঝগড়াঝাটি হত।  তবে স্বাভাবিক ঝগড়া।

 কখনো কখনো সে (সালমান) সামিরার গায়ে হাত তুলত।  মারামারি হত।  আমরা এগুলো স্বাভাবিকভাবেই নিয়েছিলাম। দাম্পত্য জীবনে কেউ ঝগড়াঝাটি করে, আর কেউ বোঝাতে না পেরে মারামারি করে।  এগুলো সবার জীবনেই আছে।

আরও পড়ুন
সব নীলা চৌধুরীর চক্রান্ত, দাবি সালমানের শ্বশুরের

‘জনপ্রিয়তায় ভাটা আর মায়ের আচরণে আত্মঘাতী সালমান’
ঝগড়ার কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘কারণ হচ্ছে ও (সালমান শাহ) তো ছিল নায়ক।  হিরোইনের সঙ্গে অভিনয় করবে, কয়েকজনের সঙ্গে করবে, বিয়ের পর এটা তো স্বাভাবিক ওইভাবে স্ত্রী মেনে নিতে পারবে না, যতই বলুক আমি মেনে নেব।  কিন্তু হান্ড্রেড পার্সেন্ট তো মানা সম্ভব না। ’

সালমান শাহ খুন হয়েছেন বলে যুক্তরাষ্ট্রপ্রবাসী রাবেয়া সুলতানা রুবির ফেসবুকে একটি ভিডিওবার্তা প্রকাশের মধ্যে বাংলানিউজের সঙ্গে আলাপে এসব কথা বলেন হীরা।  বুধবার (৯ আগস্ট) দুপুরে নগরীর নিজ বাসভবনে বাংলানিউজের মুখোমুখি হন জাতীয় ক্রিকেট দলের সাবেক এই অধিনায়ক।

হীরা জানান, পরিবারের অমতে সামিরা বিয়ে করেছিলেন সালমানকে।  তবে বিয়ের পর তারা মেনে নিয়েছিলেন।  এমনকি সালমানের উপার্জন কম থাকায় সংসার চালানোর জন্য তাদের মাসে এক লাখ টাকা করে পাঠাতেন হীরা।
ছবি: সালমান শাহ’র শ্বশুর শফিকুল হক হীরা।  ছবি: সোহেল সরওয়ারতিনি বলেন, তাদের বিয়েটা সামাজিকভাবে হয়নি।  ওরা নিয়ে গেছে।  ওরা তখন গ্রিন রোডে থাকত।  আমরা থাকতাম বনানীতে।  ওরা নিয়ে যেতে এল।  আমি বললাম, সামিরা তুমি যাবা? সে বলল, বাবা যাব।  আমি বললাম, যাও।  কারণ তখন মেয়ের বয়স ১৮ বছর পার হয়ে গেছে।  তাকে আটকে রাখার কোন সুযোগ নেই।  

‍হীরা বলেন, সালমানের তার মায়ের (নীলা চৌধুরী) সঙ্গে ঝগড়া ছিল।  মায়ের সঙ্গে থাকত না।  আলাদা বাড়ি নিয়ে থাকত, যেটার ভাড়া আমরা দিতাম।  কারণ তখন একজন নায়ক একটা ছবি করে দেড় লাখ টাকা থেকে এক লাখ ৮০ হাজার টাকা পেত।  তা-ও পেত ছয় ইনস্টলমেন্টে।  একসাথে কখনোই টাকা পেত না।

‘তো, ৩০ হাজার টাকা দিয়ে ঢাকা শহরে থাকবে কিভাবে, যেখানে ঢাকা শহরে বাড়ি ভাড়াই ২০ হাজার টাকা থেকে ২৫ হাজার টাকা ছিল।  আমরা চট্টগ্রাম থেকে মাসে এক লাখ টাকা করে পাঠাতাম।  বাসার পুরো ফার্ণিচার আমরা দিয়েছিলাম। ’

হীরার দেয়া টাকা থেকে সালমান তার পরিবারকেও সাহায্য করতো, এমন তথ্য চট্টগ্রামের এই ব্যবসায়ীর।  তিনি বলেন, সালমানের বাবা রিটায়ার্ড করেছিল।  অর্থনৈতিকভাবে তারা খুব স্বচ্ছল ছিল না।  সালমানের পয়সার উপর ফ্যামিলি চলত।  তার উপার্জন তো এতো ছিল না।  বিষয় সম্পত্তিও তো এতো ছিল না।  আমরা যে টাকা চট্টগ্রাম থেকে পাঠাতাম, সেটা থেকে ফ্যামিলিকে সে দিত।

অমতে মেয়েকে বিয়ে করলেও সালমানকে ভালবাসতেন বলে জানিয়েছেন হীরা।  তার মৃত্যুতে কষ্ট পাবার কথাও বলেছেন তিনি।
ছবি: সালমান শাহ’র শ্বশুর শফিকুল হক হীরা।  ছবি: সোহেল সরওয়ার‘সালমানকে আমি বলবো, ও অনেক ভদ্র ছিল।  সে আমাকে খুব ভালবাসতো, আমিও তাকে খুব ভালোবাসতাম।  তার মৃত্যুতে আমিও গভীরভাবে শোকাহত।  উঠতি এক নায়ক, ভবিষ্যতে ওর মতো একটা নায়ক দেশে আসবে কি না সেটাও সন্দেহ আছে।  চার বছরে আমরা তাদের কাছ থেকে কোন বাচ্চাও পেলাম না, যাকে আমরা স্মৃতি হিসেবে রাখতে পারতাম, বড় করতে পারতাম। ’ বলেন হীরা।

বাংলাদেশের চলচ্চিত্রে জনপ্রিয়তায় আলোড়ন তোলা চিত্রনায়ক শাহরিয়ার চৌধুরী ইমন ওরফে সালমান শাহ’র মরদেহ ১৯৯৬ সালের ৬ সেপ্টেম্বর রাজধানীর ইস্কাটন রোডে নিজের ফ্ল্যাট থেকে উদ্ধার করে পুলিশ।
বিপুল সংখ্যক ভক্তের কাছে গত ২২ বছর ধরে মৃত্যুর রহস্য অমীমাংসিত থাকা মামলাটির এখন তদন্তে আছে পুলিশ ‍ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)।

সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের পেনসিলভেনিয়ায় বসবাসরত রুবি ফেসবুকে এক ভিডিওবার্তায় বলেন, ‘সালমান শাহ আত্মহত্যা করে নাই। সালমান শাহকে খুন করা হইছে, আমার হাজব্যান্ড এটা করাইছে আমার ভাইরে দিয়ে। সামিরার ফ্যামিলি করাইছে আমার হাজব্যান্ডকে দিয়ে। আর সব ছিল চায়নিজ মানুষ। ’

ওই ভিডিওবার্তা প্রকাশের পর সালমান শাহ’র মৃত্যুর বিষয়টি আবার আলোচনায় উঠে এসেছে।  
 
বাংলাদেশ সময়: ০৯১৫ ঘণ্টা, আগস্ট ১০, ২০১৭
আরডিজি/টিসি/জেডএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।