দেব প্রযোজনার জগতে পা রেখেই চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দিলেন তারই ‘গডফাদার’ শ্রী ভেঙ্কটেশ ফিল্মসকে। এই প্রযোজনা সংস্থার আরেকটি ছবিও একই সময়ে মুক্তি পেয়েছে (ইয়েতি অভিযান)।
মুম্বাই থেকে কলকাতার আকাশপথের দূরত্ব আড়াই ঘণ্টার কাছাকাছি। ২২ সেপ্টেম্বর মুক্তিপ্রাপ্ত ‘ককপিট’ ছবির সময়সীমা ২ ঘণ্টা ২১ মিনিট। ছবি শুরু ফ্ল্যাশব্যাক দিয়ে। পরিচালক কমলেশ্বর মুখোপাধ্যায়ের দৌলতে ‘ককপিট’ দেখতে বসা দর্শককে এই ২ ঘণ্টা ২১ মিনিটের জার্নি করতেই হচ্ছে। পরিচালকের মুনশিয়ানায় অতীত ও বর্তমানের ঘটনার অনন্য বুনন ‘ককপিট’-এর উড়ানকে উড়িয়ে নিয়ে গিয়েছে সাবলীলভাবে।
পাইলটের ছেলে পাইলট! পাইলট দিব্যেন্দু (দেব) কিশোর বয়সেই সে তার বাবা ক্যাপ্টেন দিবাকর রক্ষিতকে (প্রসেনজিৎ) হারিয়েছে এক বিমান দুর্ঘটনায়। জ্যোর্তিবিজ্ঞান নিয়ে পড়াশোনার ইচ্ছে থাকলেও বাবার মতোই একদিন পোক্ত পাইলট হয়ে গিয়েছে দিব্যেন্দু। নিজের জন্মদিনেই বাবাকে হারিয়েছিলো সে। গল্পের বিশেষ দিনটিও দিব্যেন্দুর জীবনে অতি গুরুত্বপূর্ণ, প্রথম বিবাহবার্ষিকী! মুম্বাই থেকে ফ্লাইট নিয়ে কলকাতায় আসার কথা দিব্যেন্দুর। কিন্তু সকাল থেকেই আবহাওয়া খারাপ। তাই কলকাতা থেকে স্ত্রী রিয়া (কোয়েল) ফোনে বলেছিলো, ডিউটি বদল করে নিতে। কিন্তু একজন পেশাদার বিমানচালকের পক্ষে কি তা সম্ভব? অতএব খারাপ আবহাওয়ার মধ্যেই ছত্রপতি শিবাজি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে উড়লো দিব্যেন্দুর বিমান।
দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ার মধ্যে গোদের ওপর বিষফোঁড়ার মতো দেখা দিলো বিমানের যান্ত্রিক গোলযোগ। পাটনা, ভুবনেশ্বর, গুয়াহাটি কোথাও জরুরি অবতরণের মতো পরিস্থিতি নেই। কলকাতায় তখন তুমুল কালবৈশাখীর দাপট। এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোল কলকাতায় অবতরণের অনুমতি দিচ্ছে না। কিন্তু অভিজ্ঞ পাইলট বুঝতে পারছেন, জ্বালানিও শেষ পর্যায়, তাই জরুরি অবতরণ ছাড়া আর উপায় নেই। আবার এও জানেন, এই ঝড়-জলের মধ্যে কলকাতার রানওয়ে ছোঁয়ার চেষ্টা আত্মহত্যার সামিল।
আশা-আকাঙ্খা ততক্ষণে সংক্রমিত হয়েছে সিনেমাহলের দর্শকের মধ্যেও। দিব্যেন্দু কি পারবেন শতাধিক যাত্রীসহ বিমানটিকে সুরক্ষিতভাবে নামিয়ে আনতে? না সেও বাবার মতো আকাশে হারিয়ে যাবে? এর উত্তর খুঁজতে খুঁজতে দর্শকের মনেও নিঃশব্দে হানা দেয় বিমানযাত্রার আতঙ্ক।
বিমান দুর্ঘটনা নিয়ে আগে সিনেমায় অল্প কিছু দৃশ্য দেখানো হলেও দুর্ঘটনা নিয়ে আস্ত একটা ছবি বাংলা কেন অন্য কোনও ভারতীয় ভাষাতে হয়েছে কি-না মনে পড়ছে না। এ দিক দিয়ে ‘ককপিট’ পথিকৃৎ। একদিকে যখনই বিমানের পরিণতি কী হবে, কী হবে অবস্থা হচ্ছে, ঠিক তখনই গল্প ফিরে গিয়েছে হয় ফ্ল্যাশব্যাকে নয়তো বা সেই অভিশপ্ত বিমানের যাত্রীদের উৎকণ্ঠিত পরিবারে। এ অবস্থার মধ্যেও গল্পে মিশেছে রোমান্স। বিমানসেবিকা কীর্তিকে (রুক্মিণী) ভালো বন্ধু মনে করে দিব্যেন্দু। কিন্তু কীর্তি দিব্যেন্দুর প্রেমে মগ্ন। অথচ দিব্যেন্দুর ভালোবাসা ইতিহাসের গবেষক রিয়া।
কাকতালীয়ভাবে, সেই অভিশপ্ত ঘটনার দিনও বিমানসেবিকার দায়িত্ব পালন করছিলো কীর্তি। এর পাশাপাশি উঠে এসেছে ওই অভিশপ্ত বিমানের যাত্রীদের জীবনের ছোট ছোট ঘটনা। কারও আয়ু মাত্র তিন মাস। কেউবা চাকরির ইন্টারভিউয়ের জন্য পাড়ি জমাচ্ছে কলকাতায়। আবার কেউ নামকরা অভিনেত্রী, যিনি বলিউড তথা ভালোবাসার মানুষের দ্বারা প্রত্যাখ্যাত। অবশেষে নেতাজী সুভাষ আন্তর্জাতিক এয়ারপোর্টে জরুরি অবতরন।
পাইলটের চরিত্রে দেব বেশ বিশ্বাসযোগ্য। তবে তার অভিব্যাক্তি আরেকটু ভালো হতে পারতো। অবাঙালি তরুণীর চরিত্রে রুক্মিণী মৈত্র বেশ ভালোই। কোয়েল ঠিকঠাক, তবে তাকে বেশ বয়স্ক লেগেছে। প্রসেনজিৎ ও পরিচালক রাজ চক্রবর্তীর গেস্ট রোল চমকপূর্ণ। পরাণ বন্দ্যোপাধ্যায়, প্রিয়াঙ্কা সরকার, অম্বরীশ, সায়নী ঘোষ, শতাফ ফিগার, ছোট্ট আর্শিয়া (ভুতু) সকলেই সাবলীল। গুরুত্বপূর্ণ অংশ জুড়ে রয়েছে কম্পিটার গ্রাফিক্স, বাংলা ছবিতে যতোটুকু করা সম্ভব। সব মিলিয়ে দেব এন্টারটেইনমেন্ট ভেঞ্চার্সের ‘ককপিট’-এ বসতে মন্দ লাগছে না দর্শকদের।
বাংলাদেশ সময়: ১৪১৪ ঘণ্টা, অক্টোবর ১৭, ২০১৭
এসএস/এসও