ঢাকা, সোমবার, ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

বিনোদন

দেশে আবারও হিন্দি গানের দৌরাত্ম্য, ক্ষুব্ধ সংগীত প্রযোজকরা

বিনোদন ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২১০৮ ঘণ্টা, অক্টোবর ১২, ২০১৯
দেশে আবারও হিন্দি গানের দৌরাত্ম্য, ক্ষুব্ধ সংগীত প্রযোজকরা এমআইবি’র লোগো

পাঁচ বছর আগেও মুঠোফোনের মাধ্যমে দেশে ভাইরাসের মতো সংক্রমিত হয়েছিল হিন্দি গান। মুঠোফোনের রিংটোন, ওয়েলকাম টিউনের সূত্র ধরে তখন দেশের বেশিরভাগ উৎসব-অনুষ্ঠান, দোকানে, বাসে, ঘরে বাজতো হিন্দি গান। বিপরীতে বাংলা গান ছিল ‘নিজ দেশে পরবাসী’র মতো! হিন্দি গানের প্রভাব এতোটাই ছিল যে, ২০০৫ থেকে ২০১০ সাল নাগাদ দেশের অধিকাংশ সংগীত প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান প্রায় বন্ধ হয়ে যায়।

এমন সংকট থেকে উত্তরণের লক্ষ্যে দেশীয় সংস্কৃতি, সংগীত এবং নিজেদের প্রতিষ্ঠান বাঁচানোর তাগিদে অডিও প্রযোজকদের সংগঠন ‘মিউজিক ইন্ডাস্ট্রি ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (এমআইবি)- এর নেতারা দ্বারস্থ হন উচ্চ আদালতের। এর ফলে ২০১৫ সালের ৯ জুলাই উচ্চ আদালত থেকে একটি স্থগিতাদেশ দেন।

ওইদিন বিচারপতি ফারাহ মাহবুব ও বিচারপতি কাজী মো. ইজারুল হক আকন্দ’র সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ বাংলাদেশে মোবাইল ফোনের রিংটোন ও ওয়েলকাম টিউনে হিন্দি গানের ব্যবহার নিষিদ্ধ ঘোষণা করেন।

এমন ঘোষণার পর দেশের সব মোবাইল ফোন থেকে হিন্দি গানের বিপণন রাতারাতি বন্ধ হয়ে যায়। বিপরীতে দেশের অডিও শিল্প, শিল্পী ও প্রযোজনা প্রতিষ্ঠানগুলো ফের জেগে ওঠে নতুন আশায়। পুরনো প্রতিষ্ঠানগুলোর পাশাপাশি নতুন অনেক প্রতিষ্ঠানও গড়ে ওঠে- গান, নাটক ও সিনেমা প্রযোজনার জন্য। বিশেষ করে গত চার বছরে বাংলাদেশে বাংলা গান ও নাটকের বিস্তার হয়েছে সবচেয়ে বেশি। ধারণা করা হচ্ছে, বাংলা গান তৈরি ও প্রকাশের জন্য স্বাধীনতার পর এত বেশি ইনভেস্টমেন্ট আগে কখনো এ দেশে হয়নি, যেটা হয়েছে গেল চার বছরে। কারণ একটাই, দেশীয় শ্রোতাদেরকে হিন্দি গান থেকে দূরে সরিয়ে বাংলা গানের কাছে নিয়ে যাওয়া।

রবি’র স্ট্রিমিং অ্যাপ ‘জি-ফাইভ’এদিকে চলতি বছরের ৩ জুলাই সেই সাফল্যের আকাশে দেখা গেছে নতুন মেঘ। দেশাত্মবোধ, বাংলা সংস্কৃতির বিকাশ আর সংগীত ইন্ডাস্ট্রির চলমান উন্নতিকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে দেশের মোবাইল অপারেটর সিস্টেম রবি’তে আবারও ঢুকে পড়েছে হিন্দিসহ বিভিন্ন বিদেশি গান। এর মধ্যে বরাবরই দেশীয় সংগীতের মূল অন্তরায় হিসেবে ধরা দিয়েছে হিন্দি গান।

চলতি বছরের ৩ জুলাই রাজধানীর পাঁচ তারকা হোটেলে বর্ণাঢ্য আয়োজনের মাধ্যমে মুঠোফোন সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান রবি তাদের গ্রাহকদের জন্য যুক্ত করেছে ভারতীয় জনপ্রিয় স্ট্রিমিং অ্যাপ ‘জি-ফাইভ’। যার মাধ্যমে রবি গ্রাহকরা ছাড়াও ওয়াইফাই দিয়ে নেট চালানো শ্রোতারা এই অ্যাপটির মাধ্যমে অবাধে উপভোগ করতে পারবেন হিন্দি গানসহ বিদেশের বিভিন্ন নাটক, সিনেমা ও ওয়েব সিরিজ।

এমন ঘটনায় ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়ার পাশাপাশি বিস্ময় প্রকাশ করছেন সংগীতসংশ্লিষ্টরা। তাদের প্রশ্ন- দেশের উচ্চ আদালতের স্থগিতাদেশ অমান্য করে কীভাবে একটি মুঠোফোন প্রতিষ্ঠান এই কাজটি করতে পারে? তবে কী তারা বাংলা গান, সংস্কৃতি আর সংগীতকে ধ্বংস করে বাংলাদেশের ঘরে ঘরে আবারও হিন্দি গানের ‘চল ছাঁইয়া ছাঁইয়া’ উৎসব ছড়িয়ে দিতে চান?

এমন উৎকণ্ঠা প্রকাশ করে এমআইবি’র (মিউজিক ইন্ডাস্ট্রি ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ) পক্ষ থেকে গত ১৭ সেপ্টেম্বর মুঠোফোন প্রতিষ্ঠান রবি আজিয়াটা লিমিটেড বরাবর একটি উকিল নোটিশ পাঠানো হয়। জানতে চাওয়া হয়, কেন উচ্চ আদালতের স্থগিতাদেশ অমান্য করে প্রতিষ্ঠানটি ফের উপমহাদেশের গান-নাটক বিপণন করছেন তারা।

এমন প্রশ্ন উত্থাপন করে এমআইবি’র সভাপতি ও দেশের অন্যতম প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান লেজার ভিশন’র চেয়ারম্যান এ কে এম আরিফুর রহমান বলেন, ‘যে সময়টাতে এসে বাংলা গান ও গানসংশ্লিষ্ট ইন্ডাস্ট্রিটা পায়ের নিচে মাটি খুঁজে পেল, ঠিক সেই সময়ে এসে রবির উপর ভর করে বাংলাদেশে আবারও হিন্দি কনটেন্ট প্রবেশ করলো! এখন সবার হাতে মোবাইল। সেই মোবাইলে যদি আবার আমরা হিন্দি গান ছড়িয়ে দেই, তাহলে মানুষ বাংলা গান কেনো শুনবে? 

‘বাংলা গান যদি হিন্দির প্রভাবে আবার ঢাকা পড়ে যায়, তাহলে আর আমাদের ঘুরে দাঁড়ানোর শক্তি থাকবে না। আবারও আমাদের ঘরে ঘরে বিয়ে, উৎসবে বাজবে হিন্দি আইটেম গান। অথচ খেয়াল করুন, গত পাঁচ বছরের অক্লান্ত প্রচেষ্টায় নাচের অনুষ্ঠান থেকে শুরু করে বিয়ের উৎসবেও এখন বাংলাদেশের গান বাজে। যেটা বছর পাঁচেক আগেও ছিল স্বপ্নের মতো। তারচেয়ে বড় বিস্ময় রবি এই কাজটির মাধ্যমে আমাদের উচ্চ আদালতের  স্থগিতাদেশকেও বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখালো! আমরা এর বিচার চাই। ’

দেশের অন্যান্য প্রযোজক ও এমআইবি’র সকল সদস্যরা একমত পোষণ করে বলেন, ‘সবার আগে দেশকে রক্ষা করতে হবে। দেশের গান ও সংস্কৃতি রক্ষার মাধ্যমেই সেটি সম্ভব। দেশের সংস্কৃতি বিকিয়ে, হিন্দি গান ঘরে ঘরে পৌঁছে দিয়ে আমাদের রেভিনিউ বাইরে চালান হয়ে যাবে- এটা তো হয় না। তাই ব্যক্তি স্বার্থে নয়, দেশের স্বার্থেই সবাইকে এই অনিয়মের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে। ’

বাংলাদেশ সময়: ১৭০৮ ঘণ্টা, অক্টোবর ১২, ২০১৯
ওএফবি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।